এইরকমই তো চলতেছে, চিয়ার্স

মঈনুল ইসলাম তুহিন

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৬, ২০১৯

পার্সোনাল লাইফ নিয়া ঘাঁটাঘাঁটির আলাপে ইয়াদ আসলো, আমাদের দেশে রাজনৈতিকভাবে এই জিনিশের চর্চা আছে, একরকম লেজিটিমেসিও আছে। দলীয় প্রতিবাদের বাইরে, এগুলা নিয়া পাবলিক রেজিসট্যান্স কম। যেমন ধরেন, খালেদা জিয়ার আলাপটা। একাত্তরে উনি কী কী করছেন, কোন কোন অফিসারের লগে ছিলেন— এই নিয়া একটা আলাপ আছে। এগুলার বিরুদ্ধে পাবলিক রেজিসট্যান্স বা পারস্পেক্টিভ কেমন? পরিষ্কার না। এমনকি, রেহনুমা আহমেদ যে একাত্তরের পুরুষতান্ত্রিক ইতিহাস নিয়া সিপি গ্যাংয়ের বেশ্যা ব্যানারে এত কাঁটাছেড়া করলেন, খালেদা যে এই পারস্পেক্টিভের বড় ভিক্টিম, এই আলাপটা উনি করলেনই না— ইমরুল ভাই এইটা আমারে বলছিলেন। অথচ জিনিশটা পপুলার।

আবার ধরেন, এর পাল্টা ঘটনা চালু আছে শেখ হাসিনার নামেও। সেইখানেও তেমন কোনও রেজিস্ট্যান্স নাই। কাউন্টার-ন্যারেটিভ হিশাবে চলতেছে। এইটা মাথায় আসলো।

দুই.
`এগুলা সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান`, `নিজে কি প্রেম করেন না`, `কয়েকটা প্রেম করা ছেলেমেয়েরে মিথিলাকে নিয়ে পোস্ট দিতে দেখেছি` ইত্যাদি কিছু এক্সপ্রেশন দেখলাম। সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশানটাই বেশি দেখলাম। মানে, এদেশের লোকেরা খুব ফ্রাস্ট্রেটেড সেক্সুয়ালি, ফলেই এইসব নিয়া মাতামাতি করে।

এই এক্সপ্রেশনগুলার কয়েকটা ঝামেলা আছে। প্রথমত, একজন মানুষ সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড এই কথা বইলা কী মিন করা হয়? তারে এক ধরণের যৌনলজ্জা দেওয়া হয়। এই এক্সপ্রেশন তার পার্সোনাল লাইফ নিয়া এক ধরণের প্রেডিকশন যে, হালায় মাইয়া পায় না, এইজন্যে অবদমন তৈরি হইছে, ফলে এইসব করে। তার যৌনজীবন নিয়া আপনি প্রেডিকশন করতেছেন, তারে `অবদমিত` বলতেছেন। এই বলা এক ধরণের যৌনসুখও বটে, এক ধরণের ফ্যান্টাশি। তার পার্সোনাল লাইফ নিয়া কমেন্ট।

তিন চারটা জিএফ বা প্রেমিকার কথা যখন বলা হয়, তখনও এইটাই মিন করা হয় যে, তোমার যেহেতু তিন/চারটা আছে জিএফ, তুমিও তাগো লগে শোও। তাইলে এত আলাপের কী আছে?

এই যে, প্রেম করে মানেই শোয়, বা অনেক মেয়েবন্ধু মানেই, `ও আচ্ছা, শোয়টোয় তো বটেই`— এই আলাপগুলি, ধারণাগুলি কেমন? এইটা সেই টিপিক্যাল ধারণা, যার কারণে এদের গালি দেওয়া হইতেছে। মানে, তাদের চিন্তার প্যাটার্ন চেঞ্জ করতে গিয়া, ওই প্যাটার্নেই তাদের সবক দিতেছি আমরা।

দ্বিতীয়ত, এই যে `সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড` বলতেছি আমরা ওনাদের, এর কোনও লজিক আদৌ কি আছে? মানে, সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান কী চিজ, এইটাই তো খোলাসা না। সবার জীবনেই তো সার্টেইন লেভেলের সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান থাকতে পারে। ফাকবয়রা যে আরো ফাকবয় হয়, তার কী কারণ? মিথিলা ইস্যুতে অনেক লেডি কিলারও ট্রোল করছেন। উনাদের যৌন অবদমনগুলা কেমন?

বা ধরেন, ইন্ডিয়ায় বা ইওরোপে? আমরা ভাবি, ওইসব দেশে মেয়েরা ছোট কাপড় পরে, কেউ কিছু কয় না, এইটাই বুঝি সেক্সুয়াল জেলাসি থিকা মুক্তিলাভ, মোক্ষ। কিন্তু আদৌ কি তাই? এমনকি, বোরকা পরলেও যেহেতু আপনি কারুর প্রতি ডিজায়ার ফিল করতে পারতেছেন, তাইলে বলা যায়, এই ফিলিংসটা একটা সার্টেন দেশে, সার্টেন কালচারের মধ্যে যেকোনোভাবে এমবেডেড থাকে। ফলে, বোরকাপরাদের প্রতি যেমন একরকমের ডিজায়ার তৈরি হয়, বিকিনি পরাদের প্রতিও হয়। বিকিনি অ্যালাউ করতেছে, দ্যাট ডাজন্ট নেসেসারিলি মিন দ্যাট, উনাদের ডিজায়ার নাই।

তাইলে, সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান জিনিশটা আসলে আন্ডিফাইন্ড। দুনিয়ায় সেক্সুয়াল নিড পুরা হয় আসলে লোকের, পুরাপুরি? হয় না। যার যৌনজীবন নাই, সে নেসেসারিলি এইরকম ইভিল হইয়া ওঠে; যার অনেক আছে সে কম হয়— এইটা ফলস কথা। ফলে, যারা নোংরামি করতেছেন, তাদের `সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড` বললে আসলে মূল কারণ চিহ্নিত হয় না। তাইলে কেন বলি আমরা? কারণ, যৌনলজ্জা দিয়া, ওদেরও ব্যক্তিজীবন নিয়া শরম দিয়া, আমরা ওদের থামাইতে চাই।

তৃতীয়ত, ওরা কি থামে তাতে? কী জানি! আমার মনে হয় থামে না। বরং, সোসাইটিতে, আপনি যদি কাউরে যৌনলজ্জা দেন, তার সেক্সের হ্যাডম নিয়া আলাপ করেন, তারে `জেলাশ` বলেন— তাইলে সোসাইটির ক্ষতি। এই বলাটাই বরং তার ভিতরে এক ধরণের সেক্সুয়াল ডেপ্রাইভেশন তৈরি করে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলছিলেন, একটা সেক্সুয়ালি ডেপ্রাইভড সমাজে হস্তমৈথুন বাইড়া যায়। কিন্তু, হস্তমৈথুনরে যে উনি অবদমনের বাইপ্রোডাক্ট কইলেন, সেই অবদমন কাটবে কীভাবে? এইখানে গুরু সোসাইটি নীরব।

তাইলে, আমরা যখন কাউরে `ফ্রাস্ট্রেটেড` বা `ফেইলিউর` বলি, তখন তার ইগোরে আঘাত করতে চাই। কিন্তু ইগোরে আঘাত কইরা তো লোকেরে থামানো যায় না। বরং হয় কি, আপনি যখন বলেন, `তুই তো হাত মারতেই খালি পারোস`, তখন তার মইধ্যে ইনফেরিওরিটি থিকা আরো বেশি ডিজায়ার স্পার্ক করে। সে হয়ত এনাফ মরদ হইয়া উঠতে চায় আরো। তখন সোসাইটিতে বিশৃঙখলার সম্ভাবনা বাড়ে।

এইভাবে দুষ্ট লোকের দুষ্টামির কারণ না খুঁইজা, আমরা তার সেক্সুয়াল ডিজায়ার আর ইজ্জতরেই আরো উস্কায়ে দিই। ডিপ্রাইভেশনই খালি বাড়ে তার, অবদমন কাটে না। লোকেদের যৌন অবদমন কাটাইতে এনাফ প্রেস্ক্রিপশন আর সোশাল ম্যানেজমেন্ট কি আছে আমাদের? তথাকথিত মোরালরাই দেখবেন, ওইসব রাস্তায় পাহাড়াদার হইয়া খাড়াইয়া আছে!

চতুর্থত, সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান একটা সিরিয়াস সাইকো-সোশাল প্রবলেম। একজন নারীর কথা চিন্তা করেন। সেও কিন্তু সেক্স করে। এবং নারীবাদীরাই বলেন যে, এদেশের নারীরা সেক্সে প্যাসিভ, তারা মজা পায় না, অর্গাজম হয় না। তাইলে, প্রচুর নারীর সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান থাকার কথা, এগুলা নিয়া গ্রামে গানও আছে অনেক। এইটা কি স্যাড, তাই না! তো, যখন আপনি `সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড` শব্দটারে গালি হিশাবে ইউজ করেন, তখন তাদের এই সামাজিক সমস্যা, বিপদ, স্যাড সিচুয়েশন আরো কত স্যাড হইয়া ওঠে ভাবেন!

ফলে, `সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান`রে আপনি যদি `ইভিল` বলেন, তাইলে একদিকে একটা রিয়েল সমস্যা, যেইটা সোসাইটির দান, তারে ইগনোর করা হয়; ওই সমস্যার ভিক্টিমদের ইগোতে আরো ইনফেরিওরিটি ভইরা দেওয়া হয়; সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশান নিয়া তাদের খোলাখুলি আলাপ সোসাইটির ভয়ে চাপা পইড়া যায়; তাদের পার্সোনাল লাইফ নিয়া প্রোপাগান্ডা চালানো হয়; তাদের পৌরুষরে আরো বেশি ফ্রাস্ট্রেশান ও প্রতিশোধের দিকে ঢেইলা দেওয়া হয়; সর্বোপরি সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশানরে সিরিয়াস সোশাল ও সাইকোলজিকাল সমস্যা হিশাবে ট্রিট না কইরা, এরে ডেমোনাইজ করা হয়, এরেই `ইভিল` হিশাবে দেখানো হয়।

তিন.
এইগুলা ফাঁস করে কারা? পার্সোনাল ডাটা পার্সোনাল এই জন্যেই যে, এগুলা পাবলিক হইলে বিপদ আছে। তো, সেই বিপদই তো এইগুলা। আমার একটা ধারণা, কাছের লোক বা সার্কেলের গ্যাঞ্জাম ছাড়া, র‍্যান্ডম পাবলিক এইগুলা হ্যাক কইরা ছড়াবে— এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফাহমি আর মিথিলা শুইছে, এই কথা লোকেদের জানার কথা না। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এই হ্যাকারদের আজতক কোনও হিল্লা হইতে দেখলাম না। হিল্লা হয় যারা পোস্টে গালি দেয়, তাদের। এইরকমই তো চলতেছে। চিয়ার্স।