ওমর ফারুকের গদ্য ‘সম্পর্কজ্ঞান’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৫, ২০২২

আমরা যখন কারো সাথে সম্পর্ক করি মানে সম্পর্কটা যখন বিয়ে হয়, তখন কিন্তু আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে বিয়ে করি না। বিয়েটা করি বর্তমান দেখে। যেমন ধরেন, আপনি। আপনাকে যখন কেউ বিয়ে করবে, তখন আজকের আপনাকেই কিন্তু সে বিয়ে করবে। পাঁচ বছর পরের আপনাকে কিন্তু না। তাই এই যে বিয়েটা করা হয়, এটা কিন্তু এই মানসিকতা নিয়ে করা হয় যে, তাকে নিয়ে আমি আমার সারা জীবন কাটাবো। এমনকি মৃত্যুর পর এই আপনিকে সে জান্নাতেও চাইবে, তাই না?

এখন এই সংসারে ভালো কিছু হবে, আবার খারাপ কিছুও হবে। বিয়ে করার আগে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, যে আসবে সে ভালো-খারাপ মিলিয়ে মানুষ। তার ভালো দিকটা যেমন আমাকে আনন্দ দেবে, ঠিক খারাপ দিকটাও আমাকে কষ্ট দেবে। কিন্তু এই খারাপ লাগাটা বেশিদিন লাস্টিং করে না এই জন্য যে, অপরদিকের মানুষটা যখন এটা অপছন্দ করবে, তখন সে চাইবে সেটা বাদ দিতেই। তবুও কিছু খারাপ থাকার পর যখন এই খারাপকে ভালো করার জন্য চ্যালেঞ্জ হাতে নেবে, এতেই তো সওয়াব, এতেই তো সংসারের মজা।

আপনি ভাবছেন, আজকের আপনাকে যেভাবে ভালো লাগছে, পাঁচ বছর পরের আপনি হয়তো একটু অসুস্থ হবেন, রূপ একটু কমে যাবে বা আচরণে একটু পরিবর্তন আসবে, এটা দুজনেরই হতে পারে! কিন্তু আমি মনে করি, এতে ভালোবাসা কমে না, বরং বেড়ে যায়। কারণ ততদিনে দুজন দুজনকে গভীরভাবে জেনে যান, তখন একটা শরীর হয়ে যাবেন, এটা ভাবনাতেও আসবে না যে, কীভাবে আমরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারি। তখন সংসারে নতুন অতিথি আসবে, সেই অতিথিকে বড় করতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হবে। তখন আসলে আজকের আপনার মতো এই ভাবনা থাকবে না।

তবে হ্যাঁ, কিছু ঝামেলা হয়। মনের অমিল হয়। তবে তা সাময়িক। ক্ষমা করার মানসিকতা লালন করলে, অপরজনের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখলে সাময়িক কোনো কষ্ট হয়তো পাবেন, কিন্তু বিচ্ছেদের মতো চিন্তা আপনি করতে পারবেন না। তারপরও যদি কেউ জেদ নিয়ে বসে থাকে, কিছুতেই সে ক্ষমা করবে না, তাহলে দুটা সম্পর্ক নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। এগুলো সম্পূর্ণ নিজের অসুস্থ মানসিকতা বলে আমি মনে করি।

একটা বিয়ে বা সম্পর্ক নিজের থাকে না, হয়ে যায় দুটা মানুষের। আজকের দুটা মানুষ পাঁচ বছর পর সেইম মানুষটাই থাকবে, শুধু যুক্ত হবে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন অতিথি। সম্পর্ক যখন গড়ে ওঠে, তখন সম্পর্ককে যাতে আখেরাত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় সে চেষ্টা দুজনকেই করতে হবে। তাই আগে থেকে ভবিষ্যৎ ভেবে নেয়াটা বোকামি আর ছেলেমানুষী বই কিছু না!

সংসারে অভাব থাকবে, স্বামী হয়তো চাহিদা সাথে সাথে পূরণ করতে পারবে না। তখন স্ত্রীর স্বামীকে বুঝতে হবে, সাহস দিতে হবে। তখনই ভালোবাসা আজকের অবস্থানে না থেকে আরো বৃদ্ধি পাবে! স্বামী হয়তো সময় বের করতে পারছে না, কিন্তু এখানে বুঝতে হবে, স্ত্রী কেন স্বামীর সময় কম পাচ্ছে! এখানে নিজেকে তখন আরো বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়, তখনই ভালোবাসা বেড়ে যায়।

এভাবেই এই ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে পেতে জান্নাতে পর্যন্ত অবশিষ্ট থেকে যায়! তাই এটা ভাববে না না যে, কিছুদিন পর কি আজকের এই ভালোবাসা থাকবে? বরং ভাববেন যে, আজকের ভালোবাসার চেয়ে যখন ভবিষ্যতের ভালোবাসা ও সুখ আরো বেড়ে যাবে তখন সেই ভালোবাসা সমানভাবে গ্রহণ করে নিতে আমি প্রস্তুত তো?

সর্বোপরি কি জানেন? আমাদের ভেতরের এই ভালোবাসা এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তাই আমাদের এই ভালোবাসা বৃদ্ধিতে আল্লাহর সাহয্য চাইতে হয়। তিনি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেন। কখনো কমে গেলে, আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। দুজন দুজনকে মন থেকে বুঝলে, এই ভালোবাসা কখনো কমতি হবে না। কিছু ভালোবাসা কথা দিয়ে প্রকাশ করতে হয় না, কিছু ভালোবাসা না বলাতেও প্রকাশ পায়।

যে ছেলের অনায়াসে আরেকটা মেয়ের সাথে পরকীয়া করার সুযোগ আছে, কিন্তু সে নিজেকে সংযত রাখছে শুধু মাত্র নিজের স্ত্রীর জন্য, এটাকে আপনি কি মনে করবেন? একটা ছেলে সারাজীবন কোনো খারাপ সম্পর্কে জড়ালো না, জেনার সুযোগ থাকার পরও করলো না, শুধুমাত্র তার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর কথা ভেবে, এটাকে আপনি কি ভালোবাসা বলবেন না?

একটা ছেলে সারাদিন অফিসে পরিশ্রম করছে এই ভেবে যে, দিনশেষে স্ত্রীর জন্য ভালো একটা শাড়ি কিনে দেবে, এটাতে কি ভালোবাসা নেই? এভাবে ছোট ছোট ভালোবাসা যখন মার্ক করতে শিখে যাবেন, তখন বুঝতে পারবেন, এই একটা জীবন এই মানুষটার সাথে কম হয়ে যাবে। পাঁচটা বছর এটা তো কেবলই ভ্রম...