কী রাষ্ট্র আমরা গড়েছি!

জগলুল আসাদ

প্রকাশিত : মার্চ ২৮, ২০২০

যে নির্যাতক ও অন্যায়কারী, সে নারী হলেও অন্যায়কারীই তার পরিচয়। ন্যায়-অন্যায় শুধু আইনি বিষয় নয়, সামাজিক বিবেক ও মূল্যবোধেরও বিষয়। ক্ষমতা মানে শুধু শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা নয়, ক্ষমতা মানে সহায়তার সামর্থ প্রদর্শনও।

৩৪তম বিসিএসের যে কর্মকর্তা মাস্ক না পরার অপরাধে রাষ্ট্রের দুই বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিককে জনসম্মুক্ষে কান ধরিয়ে লাঞ্ছিত করলেন, তার এই অসামাজিক ও বিবেকবিরুদ্ধ কাজের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। যারাই মাস্ক পরছে না, তাদেরকে ধরে ধরে মাস্ক পরতে বাধ্য করা যেত। প্রশাসনের উদ্যোগে প্রত্যেককে মাস্ক সরবরাহ করবার উদ্যোগ নেয়া যেত। ছবি তোলার শখ হলে মাস্ক পরিয়ে তাদের সাথে হাসি মুখে ছবিও তোলা যেত। দরিদ্রদের আমি মাস্ক কিনে দিতে পারি না, কিন্তু শাস্তি দিতে পারি— এই অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ চিন্তাকেও প্রশ্ন করি।

আর লাঠি দিয়ে যারা রোগবিস্তার বন্ধ করতে উদ্যোগী তাদের নীতিকেও, তাদের মানবিকতার বোধকেও সমান নিন্দা জানাই। আশা করি, নিন্দা করবার, দীর্ঘশ্বাস ফেলবার, কষ্ট পাবার অধিকার আমরা খুইয়ে ফেলিনি। প্রশাসনে আমার বন্ধুরা আছে। আমার স্বজন আছে, বড়ভাইরা আছে, আমার ছাত্ররা আছে— নিশ্চিত আমি, আশাও করি, এমন কাজ করবার কল্পনাও তারা করতে পারবে না কখনো। নিজের কাছে দুঃখ বোধ হয় এদের আমরা কিছুই শিখাতে পারিনি। সে আমার শিক্ষার্থীদের সমান বয়সী। তাকে কিছুই শেখাতে পারিনি। সে যেন কোনও শিক্ষাগুরু পায়নি, পায়নি পারিবারিক শিক্ষাও। শুধু সে পেয়েছে ট্রেনিং নামক এক রূদ্ধকক্ষীয় শিক্ষা, যেখানে তাকে সম্ভবত শেখানো ও জানানো হয়— সে-ই ক্ষমতাবান, সেই দণ্ডমুণ্ডের হর্তাকর্তা, বাকি সবাই নস্যি। তা না-হলে এই দুর্যোগেও তার অন্তর কোমল হয়নি এতটুকুও। তাছাড়া বর্ষশেষের কোনও একদিনও হয়তো এমন আস্ফালনের অধিকার তাকে দিয়েছে।

আমি বলতে চাই, তার সহকর্মীরা তাকে ধিক্কার জানাক। পদস্থ কর্মকর্তারা তাকে শাসাক। কিছুটা শাস্তিও যদি সে না পায়, বড্ড অন্যায় হবে। মনে রাখি যেন, সে একটি সিস্টেমের বাইপ্রোডাক্ট, সে নিজে কোনও সিস্টেম না। আমরা জাতিগতভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে অনেক পাপে `পাপী`। এ সুযোগে কিছুটা `পাপ` যেন লাঘব হয় আমাদের। নানা উপলক্ষে বেরিয়ে আসে এই প্রশ্ন, কী রাষ্ট্র আমরা গড়েছি!