চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ২৮

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : আগস্ট ২১, ২০১৯

একটা ওপরের জীবন আমার কোনো দিনই কাটানো হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘ দীর্ঘ সময় একা থাকা হয়তো এর কারণ। নিজের কাছে নিজেকে ছাড়া পেয়েছি কি? লোকে বলে, ‘ভারি চুপচাপ তো!’ তিন বছর বয়স থেকে দেয়ালের সাথে কথা বলা মেয়েটার সাথে ছিল কে সেদিন? বলতে এসেছিলে দুটো কথা? ভাগ্যিস এই অসম্ভব নিঃসঙ্গতার ভার সে তুলতে শিখেছে ওই বয়স থেকে। তাই তো বেঁচে গেছে। সেদিন তো পারতে তাকে সঙ্গ দিতে। দিয়েছো কি?

লোক দেখানো সঙ্গ নিয়ে চলার অভ্যাস তাই তার কম। কম বলে কারণ সত্য বলতে চায়। এত অনুষঙ্গের অভাব তোমার ভালো লাগবে কেন? তুমি যে দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকা মানুষ, নিজের সাথে আমার দূরত্ব মাপো, নিজের সাথে তোমার নিজের ক্রমপ্রসরমাণ দূরত্বের কথা জানো? এরপর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বলো তো? কতদূর?

পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, এমন বিশ্বাস নিয়ে বাঁচা ভালো নয়। তবে এ সত্য জানতেই সব থেকে বেশি আঘাত নিয়েছি। শুনেছি দুর্ভিক্ষের সময় নাকি মাও মেয়ের মুখের খাবার কেড়ে খায়। তবে কিসের সম্পর্ক? কেনই বা এত মিথ্যে পূজা? নিজের জন্য বাঁচতে এসেছিলে সে কথা স্বীকার করো।

সমস্ত ক্লিশে ভেঙে গেলে, মোহ চুড়চুড় হলে, সে বাঁচা শৌখিন বাঁচা নয়। সে মানুষ কি সহজ মানুষ যে সিঁড়ি ভেঙে ধাপে ধাপে তোমার ভেতর নেমেছে। কেবল কি সিঁড়ি ভেঙেছে? বাইরে থেকে সাতমহলা বাড়ি, আর মাটির নিচে অন্ধকার ঘর। সেখানেই একা একা দেখেছে এক পাগল একশো গলা পচা মৃতদেহ আগলে বসে আছে। খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে রক্ত মাংস ঘিলু। ওভাবেই ওরা বেঁচে থাকে নিজের মৃতদেহ আগলে।

তবে আর হাসবো কিভাবে? নাকি ইচ্ছে করে হাসবো, জোর করে— হা হা হা... গগন ফাটানো সে হাসি আর্তনাদের মতো শোনাবে। হাসতে হাসতে কাঁদবো সেই অন্ধকার কুঠুরির পাগলকে ভেবে। কাঁদতে কাঁদতে হেসে উঠবে হয়তো সেও, কি জানি কাকে ভেবে! সে কি আমার কথা জানে?

অথচ কেমন খোলসটুকু নিয়েই কাটিয়ে দিলে তোমরা আজীবন। কেমন স্রোতটুকু নিয়েই ভাসা ভাসা খেলা হলো। জানাই হলো না, থামের মতো জল যখন বুকের ওপর এসে দাঁড়ায় তখন কেমন গুম গুম শব্দ হয়।

সব কিছু বোঝার দায়িত্ব তবে কি আমার একার ছিল? কেন! আমি মরবো না বুঝি? এত বহমানতার মধ্যেও বন্ধুতাকেই শ্রেষ্ঠ জেনেছি। মৃতের বন্ধু হয়েছি তাই, অমৃতেরও।

তবে আমার বন্ধু কে? আছে কেউ, যে আমাকে বুঝেছে? ঝুলমাখা অন্ধকারে আশ্চর্য পয়গম্বরের ইশারায় কেবল ঘুঘুর বাসা হাতড়াচ্ছি না তো? আমি ও আমরা? চলবে