চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ৪৩

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩১, ২০২০

ঘরে ঢুকেই দেখি, দু’দিন আগের ছাতু খাওয়ার গ্লাস গড়াগড়ি যাচ্ছে। বিছানায় সর্বস্ব ছড়াছড়ি। চাদরটা টান দিতেই এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ল চেটেপুটে সাফ করে খাওয়া খেজুরের বিচি।

চিরকাল লো প্রেসারে ভোগা এই আমারও আজকাল প্রেসার চড়ে যাচ্ছে যখন তখন। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বললাম, ‘তুমি একটা অমানুষ।’

‘অমানুষ? যা খুশি বকে যাচ্ছ! তুমি জানো, অমানুষ কাকে বলে?’

এরই মধ্যে আমি খেজুরের বিচি সপাটে ছুঁড়ে মেরেছি দোতলার জানলা দিয়ে নিচে। গলির ওপ্রান্ত থেকে তখন ভেসে আসছে আহ্বান, ‘টিনা ভাঙা লোহা ভাঙা বিকিরি..।‘ ঈষৎ নাকলাগা কণ্ঠস্বর নিজেকে বিজ্ঞাপিত করছে এই বলে যে, আটপৌরে সংসারের সব ভাঙা জিনিস সে কিনে নিতে প্রস্তুত। জিনিস অর্থে দ্রব্য। আর আধখাওয়া ছাতুর গেলাস হাতে চেটেপুটে সাফ খেজুরের বিচি ছুঁড়ে মারতে উদ্যত যে মানুষ, তার যে ভাঙা মন, সে যায় কই? আছে কোনও খদ্দের?

‘এই এই, তুমি হচ্ছো অমানুষ। জানলা দিয়ে ওটা কেউ ছোড়ে? কার না কার মাথায় পড়বে, সেটা একবারও ভাবার প্রয়োজন নেই? আবার আমাকে অমানুষ বলা হচ্ছে!’

‘তা জিনিসটা জায়গা মতো ফেললেই হতো। তবে আর এসবের মধ্যে যেতাম না।’

যুক্তির অকাট্যতা বজায় রাখার জন্য বক্তব্য সংশোধন করে বললাম, ‘শোনও, ওটা অমানুষ হবে না। বনমানুষ বলতে গিয়ে অমানুষ বলে ফেলেছি। মানে ইউ আর নট হ্যাবিটেবল।’

শুনে লোকটা পেল্লায় খুশি। অ্যানিমাল লাভার বলে কথা। বললো, ‘বেশ। তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই।’

‘ঘরটা এরকম কাকের বাসা করে রাখো কেন? প্রতিদিন ফিরে আধঘণ্টা খাটতে হয়। ওই কাকের বাসাটা আসলে তোমার মাথার ভেতর। চূড়ান্ত অগোছালো একটা লোক!’

বললো, ‘শোনও তবে বলি। বাইরের বৈরাগ্য অন্তরের পূর্ণতাকেই প্রকাশ করে কিনা। বলেছেন রবীন্দ্রনাথ।’

‘নিকুচি করেছে তোমার রবীন্দ্রনাথ। বাইরের বৈরাগ্যঅলা লোকের ওরকম পরিপাটি চুলদাড়ি হয়? নিজেরটা দেখো। প্রেম করার সময় তো এমন ভান করতে যেন তোমার সর্দিই লাগে না। আর এখন? কোনটা তোমার রুমাল নয় বলো দেখি?’

‘আমার সর্দি হয় জানলে আরো বেশি করে প্রেমে পড়ে যাবে।’