দহনদিনের লিপি

পর্ব ৩

মারুফ ইসলাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৩, ২০২১

১২ এপ্রিল ২০২১
চোখ খুললাম। বালিশের আশপাশে হাতড়ে মোবাইল খুঁজলাম। ভোর ৫টা সাতান্ন। ভাবলাম, আর একটু ঘুমাই। এত সকালে ওঠার দরকার কী? আবার ঘুমালাম। এবার চোখ খুলে দেখি, ৬টা ৪২। পড়িমড়ি করে উঠলাম। ফ্রেস হলাম। রেডি হলাম। অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলাম। প্রজাপতিতে উঠলাম। আসাদ গেট নামলাম। সেখান থেকে অফিসের গাড়িতে উঠলাম।

গাড়ির ভেতর কলিগরা নানা গল্পে মাতলেন। আজ মারা গেছে ৮৩ জন। নতুন শনাক্ত সাত হাজার ২০১জন। এসবে কান দিলাম না। সিটের উপরে পা গুটিয়ে ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’তে নাক ডুবালাম। বইটা এখনো শেষ হয়নি। এ বইটা মূলত অফিসের গাড়িতে যাওয়া আসার সময়েই পড়ি। অফিসের টেবিলে আছে আরেকটি বই (সমাজবিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্ব), সেটি অফিসে কাজের ফাঁকে পড়ি। আর বাসায় বালিশের তলায় আছে সঞ্জীবের লোটাকম্বল প্রথম খণ্ড, সেটি রাতের বেলা ঘুমানোর আগে পড়ি।

যাহোক, ঘণ্টাখানেক পর অফিসের গাড়ি থেকে নামলাম। গেটের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে, তাতে হাত ভেজালাম। নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলাম। সারাদিন কাজ করলাম। মাঝে দুপুরে একবার খেলাম। বিকেলে আবার বের হয়ে গাড়িতে উঠলাম। রাস্তাজুড়ে জ্যাম। কলিগরা নানা কায়দা কসরত করে অচেনা অলিগলি দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে লাগলেন। আমি বরাবরের মতো এসব থেকে দূরে থাকলাম। সিটের ওপর উপর পা গুটিয়ে আবারও ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ মনোযোগ দিলাম।

মোহাম্মদপুর আসতে আসতে তবু আটটা পার হয়ে গেল। বাসায় ফোন দিলাম, বাজার সদাই কিছু লাগবে কিনা। বলল, লাগবে না। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিলাম। মার ওষুধ লাগবে কিনা। বলল, লাগবে না। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শুনতে পেলাম, কেউ একজন বলছে, মামা, ও মামা…

ঘাড় ঘুরে তাকালাম। পরিচিত এক কলা বিক্রেতা। অনেক দিন হলো তার কাছ থেকে কলা কেনা হয় না। বলল, মামা কলা কেনা ছাইড়া দিলেন যে!
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, খবর কী আপনার? বেচাবিক্রি কেমন চলে?
ভালো না মামা।
সবারই তো অবস্থা খারাপ। কী করবেন বলেন।
কলাগুলা ভালো হইব মামা। লইবেন নাকি?
আচ্ছা দেন। এই ছড়িতে কয়টা আছে দেখেন তো।
চৌদ্দটা আছে মামা। দিয়া দেই। আশি ট্যাকা দিয়েন।
হাতে কলার ছড়ি ঝুলিয়ে বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি, বাসায় দুই ছড়ি কলা আগে থেকে আছেই!

মুখ কালো করে বাথরুমে ঢুকলাম। গোসল করলাম। বের হয়ে মার কাছে বসলাম। মা অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল। চুপচাপ কান্না দেখলাম। শুনলাম। অবজার্ভ করলাম। কিছুই বললাম না। না বলার বহুবিধ কারণ আছে। লিখতে ইচ্ছে করছে না। কান্নারও যেমন বহুবিধ কারণ আছে, লিখতে ইচ্ছে করছে না। আমি সকল ইচ্ছে পাথরচাপা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম এলো না। চলবে