নামাজে মন ফেরানো

পর্ব ১১

শারিন সফি অদ্রিতা

প্রকাশিত : জুলাই ২০, ২০২০

করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে আমরা সবাই নানাভাবে ঈমান ও তাওয়াক্কুলের পরীক্ষা দিচ্ছি। এই পরীক্ষারত অবস্থায় যদি কাউকে জিজ্ঞেস করি, আমাদের সবচেয়ে বেশি ভয়ের জায়গাগুলো কোথায়? তাহলে ঘুরেফিরে উত্তর পাব, চারপাশে এত বিশৃঙ্খলা, ফিতনা এবং অনিশ্চয়তার ভয়; মৃত্যুর ভয়, কবরের ভয় এবং শেষ পরিণাম হিসেবে জাহান্নাম লাভের ভয়।

আপনি জানেন কি, এই ভয়গুলি নিয়েই খুব প্রাসঙ্গিক এবং পাওয়ারফুল একটা দুয়া আমাদের জন্যে রেডি করা আছে? আমাদের প্রিয় রসূল (সা.) নামাজে তাশাহুদের পরে পাঠ করার জন্যে দুয়াটি আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তাশাহহুদ পাঠ করবে তখন সে চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে— জাহান্নামের শাস্তি, কবরের শাস্তি, জীবন-মৃত্যুর পরীক্ষাগুলি এবং দাজ্জালের কুফলসমূহ, তারপরে সে যা চায় তার জন্য তার জন্য প্রার্থনা করুক। (আল নাসাই ১২৯৩)

দুয়াটি হলো, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল। অর্থ, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে।

করোনা ভাইরাসে ভীত হয়ে মানুষের যে পরিমাণ মানবিকতা লোপ এবং বিশৃঙ্খলার নজির দেখছি, দাজ্জালের ফিতনার সময়ে যে কী বিশৃঙ্খলা হবে, আল্লাহ রব্বুল আলামীনই সবচেয়ে ভালো জানেন। আমাদের বেশি বেশি এই দুয়াটি পাঠ করে আল্লাহর কাছে ভয়ংকর পরিণাম থেকে পানাহ চাওয়া উচিত।

ভাবুন তো, আল্লাহর খুব স্পেশাল কোনো বান্দা যদি আপনার হাত তার হাতের মাঝে রেখে আপনাকে একটা দুয়া শিখিয়ে যায় সেই দুয়াটার একটা অন্যরকম গুরুত্ব থাকবে কিনা? ঠিক তেমনটাই হয়েছিল রসুল (সা.) এবং মুয়ায ইবনে জাবালের (রা.) মাঝে। মুআয (রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ (ﷺ) আমার হাত ধরে আমাকে বললেন, হে মুআয, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ), আমিও আপনাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, মুআয তুমি প্রত্যেক নামাজের শেষে এই দুয়াটি পড়া থেকে কখনো বিরত থেকো না— আল্লাহুম্মা আ-ইন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক। (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত)। অর্থ, হে আল্লাহ, আমাকে সাহায্য করুন যেন আমি সবচেয়ে সুন্দরভাবে আপনাকে মনে রাখতে পারি, আপনার শুকরিয়া আদায় করতে পারি এবং আপনার ইবাদাত করতে পারি।

শেষের দুয়াটা আমার খুব প্রিয়। আমার মনে হয়, এই পৃথিবীতে একটা মানুষ যা যা চাইতে পারে, তার সবকিছু এক কথায় সারামর্ম করা হয়েছে এই দুয়াটাতে। উম্মে সালামা রা. বলেন, আল্লাহর রসুল (ﷺ) সকালের ফজরের নামাজের সালাম ফেরানোর পরে নিয়মিত এ দুয়াটি পড়তেন— আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান, ওয়া রিজকান তাইয়্যিবান, ওয়া আমলান মুতাক্কব্বালান। অর্থ, হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে এমন জ্ঞান চাই যেটা কল্যাণকর, এমন রিজিক চাই যা পবিত্র ও হালাল। এবং এমন আমল করার তাওফিক চাই যা তোমার দরবারে কবুল হবে। (ইবনে মাজাহ-৯২৫ নাসায়ি সুনানে কুবরা-৯৯৩০)

জীবনের ১৫ থেকে ২০ বছর চলে যায় ডিগ্রি অর্জন করে ভালো একটা চাকরির পিছনে ছুটতে ছুটতে। এত সাধনার সেই জ্ঞান যদি শেষ দিবসে আমাদের উপকারী না হয় এবং সেই জ্ঞানলব্ধ রিজিক যদি পবিত্র ও হালাল না হয়, তাহলে ভয়ঙ্কর লোকসান। এবং এই দুই অর্জনের মধ্যবর্তী সময়ে যা যা আমল করছি সেটাও যদি রিয়াহ, হিংসা গীবত দিয়ে ধ্বংস করে ফেলি— আর আল্লাহর দরবারে দেউলিয়া ফকির হয়ে উপস্থিত হই, তাহলে দুনিয়া-আখিরাত দুইটাই বরবাদ। সেজন্যে এই দুয়াটা আমার কাছে উত্তম। চলবে