মাসুদ পথিক

মাসুদ পথিক

মাসুদ পথিকের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১০, ২০২২

সুফলা
 
চাষার কৌমে ঘুরতে গেলে, চাষার ছোট মেয়েকে ভালো লেগে যায়
ছোট মেয়েটির নাম সুফলা ধান

উঠানে হাঁস ও মোরগদের কোলাহল
চাষার ভয়ে আমি হাঁসের ডানার নিচে লুকিয়ে দেখি সুফলাকে

সুফলা খুব খুশি আজ! বাবার সঙ্গে গঞ্জে যাচ্ছে
আরো দুটি বোন জাগলি ও জলি ধান
তাদের মন খারাপ গঞ্জে না-যেতে পেরে

আমিও হাঁসের পালক ছুঁড়ে সুফলাকে বলি,
যেও না গঞ্জে, সেখানে আছে সওদাগরের পুত্র ডাকু
রাস্তা দুপাশে ডাকিনীদের পাড়া

তবুও, যাচ্ছে সুফলা
আমি পিছুটান আমি ঝরাধান গন্তব্যের পথে পথে
চাষার কৌমে বিজ্ঞাপন-ফেরত এই ডালিমকুমার, ছন্নছাড়া

চাষার সমাজে বেড়াতে এসে ভালোবেসে ফেলি চাষার কন্যাকে
কন্যার নাম সুফলা বিষাদ, আমি প্রেমিক, পঙ্গু অথবা উন্মাদ!?

আবার ভারতবর্ষ

অর্থাৎ যেসব পাখি সীমান্তের কাঁটাতারে
বিভক্ত বাক্যের কারাগারে
আটকে যায় না আমিও তাদের অনুগামী
কেননা ওপারে প্রিয়তমা বউ, এপারে আছি স্বামী

আমাদের বাড়ি আসে তোমাদের পাখি
তোমাদের বাড়ি যায় আমাদের পাখি
আমাদের মনগুলো তোমাদেরও মন
তোমরাআমরা অনাদিকালেরই সজন
এই-মতো আসা-যাওয়া করে ব্যথা ও বেদন
ঘরে ঘরে আজও আছে ভাঙনের রোদন

সীমান্তে যারা, তোমরা তাক করেছো বন্ধুকের নল
কাঁটাতারে পিঁপড়ে সদৃশ আমরাও করি বাস্তুবদল

আর আকাশ তো হয়নি ভাগ; মনকেও করোনি দু’ভাগ
মনের ডানায় ঘুরছি, যতই করছো রাজনীতির দাগ

এপারে প্রেমিক, ওপারে প্রেমিকার বাড়ি
একই চালের ভাত খাই ভিন্ন কেবল হাঁড়ি...!

আমি চাষি লোক, তুমি মাটির নিরীহ মুখ

আর, আমি পেঁয়াজ চাষি লোক।
পেঁয়াজ হেঁটে যায় কুয়াশায়, আমি চলি আল ধরে কালার মাঠ। হোক,

যা কিছু। লজিকহীন জীবন, সীমান্তের হারিকিরি।
আর জানি সব প্রেমই দু`পায়ের বেড়ি।

জন্মের পূর্বে আমার জন্য বরাদ্দ ছিল কিছু জমি।
আমি জমির মালিক। ভূমি দাস।
কুয়াশার প্রাক্তন আর শীতের বর্তমান।
আমার শরীরে অথবা আমার হৃদপিণ্ডে চাষার অভ্যাস।

আমাকে জন্ম দিয়েই মা-বাবা হয়ে গেছেন বালিহাঁস।
গিয়েছেন তীর্থে, গিয়েছে ধাম!
আমিও সাধুপাড়ার পেঁয়াজের নিরীহ বাপ।

আমার শেষকৃত্য হবে বিরহে আর শিশিরে, ম্লান!
আমার কবর নিশ্চয় করে গেছে বিলুপ্ত দোয়েলের গান।

বেড়ে উঠেছি আমি কাঁদায় কাদায়
আর মৌসুমি ধাঁধায়।
পেঁয়াজের সঙ্গে মাটিচাপা এক টুকরো আদায়।

উড়ে ওড়ে ঘুরে ঘুরে হালিকের মতো আমিও গিয়েছি নীলে
পৃথিবী আর আকাশের শপিংমলে, চোখের জল, রক্ত বিলে

চাষ করতে করতে ভেসে গিয়েছি ঘামে ও কামে
আমি হারিয়ে গিয়েছি লাঙল ও জোয়ালে।
আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছে মাটির কন্যা ব্যথা
আমাকে কিনে নিয়েছে শুঁটকির ছোট বোন, দরিদ্র নীরবতা।

আমি পেঁয়াজ চাষি লোক,
কুয়াশার প্রাক্তন শীতের বর্তমান মুখ।
আমাকে পেটে ধরেছে ধানের পামরি পুক,
অথবা গোলায় বেড়ে ওঠা অসুখ।

হে মাটির কন্যা নীরব ঝিনুক!
আকালের কালে তুমি আমার কাঁদায় ডুবিয়েছ কেন মুখ?