মেসবা আলম অর্ঘ্যর পাঁচটি কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৯, ২০২১

কবিতা কী

এক ঘরের কৃষ্টি
আরেক ঘরে ঢুকতে থাকে
বাসাবদলের দিন
কবিতা কী
কাঠগুলি দিয়ে কী হবে
রশি, আঁঠা
তারকাঁটা এবং বালিশ বিছানার
দাগ
যেন তাড়া আছে
যেন কিছুর জন্য দেরি হচ্ছে খুব
একটা ব্যবহৃত অপেক্ষার
এখনো ব্যবহারযোগ্য
অন্ধকারে
আলোয়
তাকিয়ে তাকিয়ে

নতুন বাসার মেঝেতে
পুরানো
অর্ধেক ছেঁড়া
একটা মেঝে
তাই অনেকগুলি মেঝে

এবং বিশ্বাস
সব জাতের মানুষ দেয়াল ফুটা করে জিনিস ঝোলায়
অর্ধেক খুলে
ঝুলতে থাকা
ছেলে সমেত
মেয়ে সমেত
বৃদ্ধা ও বুড়া সবাই
তাদের মৃত সন্তান
উল্টাপাশের চৈনিক যুগল
ওলন্দাজ যুগল
বাইসেক্সুয়াল
গির্জায় ঘণ্টা
নতুন বাসার মেঝেতে
পুরানো
কবিতা কী? মাঝ রাস্তায় উঠতে উঠতে
পাশের
চিপা গলির ভিতর বাতাস ঘুরছে
রাস্তার টারে
দাগ
মেঝেতে দাগ থাকতো
ধূলায়
কার্পেটের নিচে
ছেঁড়া কার্পেট উঠালে
গোপন
কিন্তু এই পৃথিবীতে
কেউ বুঝতে পারে এমন ভেজা কাঠ
ঘরগুলি গরম রাখে
বর্তুল করে রাখে রাস্তায়
উঠতে উঠতে চিন্তা করি
কবিতা কী

রবিবার রোদ থাকায়

রবিবার রোদ থাকায়
বারান্দায় রবিবার
আমরা পুরুষ ভাড়াইট্টারা মদ খাই
চিটচ্যাট করি, পৃথিবীটা কেন সরল হইলো না
এই দালানের ডাটাসোর্স কোথায়

একটা কবুতর
আমার রেলিঙে
ওদের রেলিঙে ঘুরপাক খায়
চারকোণা কবুতর,
চারকোণাই—
যেহেতু আমরা জানি পুরুষের ভিতরে পুরুষ
নারীর ভিতরে পুরুষ
বারান্দায়
রোদে
কবুতরে
হরেক রকম পুরুষ রয়েছে

আমরা ভাড়াইট্টারা
পুরুষের আলো নিয়ে
নারী নিয়ে
রোদ
কবুতর ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করি
মৃদু হেসে
মৃদু
মৃদু
মাটির নিচের গ্যাসলাইন
সামনে ঠাণ্ডা গাছটাতে বসন্তের পাতা এসেছে
চারকোণা পাতা
বাচ্চারা সাইকেল চালাচ্ছে
চারকোণা চাকার সাইকেল
চালাচ্ছে
কী সুন্দরভাবে
ওদের চাকা গড়িয়ে যাচ্ছে টারের উপর ...
যেন গোল

শহরে একটা গাছ

শহরে একটা গাছ
যায় আর আসে
যায় আর আসে
বাস্তব দৃশ্যের মতো কিছুদিন হলো  
আবার এসেছে

এই যে কোথাও যাচ্ছি
সবাইকে নিয়ে
দেখলে মনে হয় আমাদের একটা উদ্দেশ্য আছে
সামনে তাকালাম কিন্তু
আসলে দেখছি
সবুজ পাতার মতো কিছু
আলাদা করে ভাবছি       
যে অনেক অনেক আগের মানুষেরও
এমন কিছু দরকার ছিল

দুপুর বারোটায়  

দুপুর বারোটায় চড়ুইপাখি ডাকে
শহরভরা মানুষ  
এঞ্জিনে
বাতাসে    
আমি থরথর করে কাঁপছি

এক স্তূপ বইয়ের ভিতর
ভাঁজ হয়ে  
ন্যাতানো একটা কাগজ আমি
এক স্তূপ ভালো,  অলিখিত
অনেকেই নিজের মতো লিখেছে
লিখবে হয়তো আরও বইয়ের ভিতর
কবিতা কবিতা
গল্প গল্প
একটা ন্যাতানো কাগজ
খুব শান্তভাবে ডাকে
যেন সান্ত্বনা  

শিল্প

রাতের বেলা
খড়ের গাদায় সূঁচের মতো আমরা
লুকিয়ে থাকলাম    
লেখাগুলি জোড়া দিয়ে দিয়ে
শান্ত
ইহকাল পরকাল
একটু একটু রেখে একটু একটু বাসনা  
মানে রিডাকশন
ভেঙে ফেলতে চাইলাম আবার
এমন পরীক্ষামূলক, যেন হাল্কাভাবে নিচ্ছি না কিছুই
তুমি আমাকে আমার
এক রাতের   
শিল্প দেখালে

ক.
একটু একটু করে
শিল্প হচ্ছো তুমি
অর্থ
বের করার আগে আমাদের ভাবতে হবে
কেন আমরা আত্মহত্যা করছি না

খ.
এরপর
ওর কাছে ফিরে যাও   
যা যা ও পছন্দ করে রান্না করো   
রান্না করতে ভালবাসো   
কারণ তুমি শিল্পকে দেখতে শিখে গেছো তার
কল্পনা বাদ দিয়ে
যেমন    
আত্মাকে বাঁচাতে হলে আমাদের কল্পনাগুলি
নতুন করে সাজাতে হবে
নিজের কল্পনা
অপরের কল্পনা
সবার বাস্তব

তোমাকে আমি হাল্কাভাবে না নিলে  
যেমন বুঝে ফ্যালো
আমাদের সূঁচগুলি আসলে  
রাতের বেলা
খড়ের গাদায়
এমনভাবে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়
যেন সবাই বলতে পারে
চেয়েছিল