সাঈফ ইবনে রফিক

সাঈফ ইবনে রফিক

সাঈফ ইবনে রফিকের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৬, ২০২০

মন খারাপ করো না

মন খারাপ করো না।
এখনও লকডাউন হয়নি সূর্য।
এখনও লকডাউন হয়নি বাতাস।
এখনও লকডাউন হয়নি বৃক্ষরাজি।
এখনও লকডাউন হয়নি পাখিদের গান।
এখনও লকডাউন হয়নি ঋতু পরিবর্তন।
এখনও লকডাউন হয়নি পূর্ণিমা রাত।
এখনও লকডাউন হয়নি মানবিক বোধ।
এখনও লকডাউন হয়নি প্রেম-ভালোবাসা।
এখনও লকডাউন হয়নি ক্ষুধা।

লোভ লকডাউন হয়নি বলে চটেছেন ঈশ্বর।
ভদ্রপল্লী থেকে বেরিয়ে গেছেন;
উপাসনালয়ের খিল এঁটে বসে আছেন
অভিমানে। তোমরা ভাবছো
পৃথিবী থমকে গেছে?
মোটেই না। আহ্নিক বা বার্ষিক গতি
আছে আগের মতোই।
লকডাউনে গৃহবন্দি শুধু শুচিবাই
মানবজাতি। যারা নিজেদের
ঈশ্বরের সমকক্ষ ভেবেছিল
অবচেতনে।

প্রাণের কিস্তিতে শোধ হলো ঋণ

কেউ কি সত্যিই মনে রাখে
মৃতদের? নাকি বিজয়ীরা
ইতিহাস সাজিয়ে নেয় নিজের মতো করে।
যারা মৃত, তারাও জানে না—
প্রাণের কিস্তিতে শোধ হলো কার ঋণ।

আহ্নিক গতিতে
আকাশ বদলে যায়;
শুক্লপক্ষে কৃষ্ণপক্ষে
বদলে যায় চাঁদের আকার।

মানবিক বোধের বাইরে
হে উন্নত জাতের পশু;
তোমাদের ভাতৃঘাতী সংঘাত মনে রাখার দায়
চাঁদ তারা-ত্রিশুল-ক্রস বা
এ সবের ঊর্ধে থাকা আকাশের নেই।

বিভ্রান্ত হবেন না

মনের ভেতরে ছুঁচোর উৎপাত দেখে
একটা বিড়াল ছেড়ে দিয়েছিলাম।

ওয়াজ মাহফিল থেকে বেরিয়ে
বিড়ালটা বাঘ হয়ে গেল।
সে এখন অচ্ছুৎ ছুঁচো মেরে
হাত নষ্ট করতে চায় না—
রাজসিক মেজাজে শুধু
মানবী মাংস খুঁজে বেড়ায়।

আমি পাপবোধে ভুগি,
তওবায় নিষ্পাপ হওয়ার ভরসায়
আবারও পাপে জড়াই
ছুঁচোর ইশারায়।

 

আমাদের ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ

 

যেদিন জানলাম,
হজ ব্যবসার টাকায় চলে
সৌদি বাদশাহর আমোদ-ফুর্তি;
আমি মনে করেছিলাম
আল্লাহও ঘুমান।

যেদিন পাড়ার শ্রেষ্ঠ ঘুষখোর
মসজিদ কমিটির সভাপতি হলেন;
আমি মনে করেছিলাম
আল্লাহ মারা গেছেন।

যেদিন মসজিদে
কুরআন শিখতে আসা
শিশুটিকে ধর্ষণ করলো ইমাম;
আমি মনে করেছিলাম
আল্লাহ বলে কিছু নেই।

আজ কাবাঘর বন্ধ।
মসজিদে জামাত নিষিদ্ধ।
লকডাউন আর সামাজিক দূরত্বের মারপ্যাচে
ভুল মানুষগুলোর ইবাদত নাকচ করে দিয়েছেন
আল্লাহ।
আমার বিশ্বাস ফিরে এসেছে—

ন্যায়বিচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ আছেন।
সুবহানাল্লাহ!