সালাফদের স্পেস-টাইম চিন্তা

কে. এম. শরীয়াত উল্লাহ

প্রকাশিত : অক্টোবর ১০, ২০২১

ধর্মীয় আলাপ-সালাপ আমি সাধারণত করি না। আলাপ করার যোগ্য মনে করি না নিজেকে। কিছুদিন আগে দেখছিলাম আক্বিদা নিয়ে বেশ রেশারেশিও হয়েছিল। সেই ঝগড়ায় যুক্ত হওয়ারও ইচ্ছা নাই। তবে আজকে একটা জিনিস মাথায় আসলো এর পিছনের বিজ্ঞান নিয়ে। একটু বলি।

ইসলামি আক্বিদা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে নিরাপদ আক্বিদা হচ্ছে সালাফদের আক্বিদা (ইমাম আবু হানিফা রহ. আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. প্রমুখ)। তারা একেবারে সহজ ভাষায় বলে দেয় আল্লাহ কুর`আনে তার হাতের কথা বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করলাম আল্লাহর হাত আছে। কিন্তু সেই হাত কেমন আমরা জানি না। সৃষ্টির সাথেও সামঞ্জস্য নাই বিন্দুমাত্র। এরপর যখন গ্রিক মতবাদ ইসলামি সভ্যতায় আসে, তখন সালাফি আক্বিদার ক্ষেত্রে যেহেতু যুক্তি বেশি দেখানো হয় না, শুধু শুনেছি ও মেনে নিয়েছি ভিত্তিতেই চলে, তাই গ্রিকদের যুক্তিতে অনেক দুর্বল ইমানের ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করা শুরু করে।

তখন আশআরি ও মাতুরিদি মতবাদ আসে আক্বিদার ব্যাখ্যা নিয়ে। যা আক্বিদাহর অধিকাংশ বিষয়কেই যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। লক্ষ্য করুন, এই যুক্তি মুসলিমদের জন্য না। দুর্বল ইমানদারদের জন্য আর গ্রিক ফিলোসফারদের জন্য। যাই হোক আসল কথায় আসি।

বর্তমানে বিজ্ঞানে আমরা দুইটা কন্সেপ্টের ব্যাপারে জানি। এক হচ্ছে স্পেস সৃষ্টি হয়েছে ও দুই টাইম সৃষ্টি হয়েছে। ধরুন আপনি দেখছেন, সময় গতিশীল। আজীবন চলবে। যেভাবে দেখছেন সেভাবেই চলবে। আগে অনেকে ভাবত সময় বুঝি চিরকাল থেকেই ছিল। এর কোনো শুরু ছিল না। তবে আধুনিক কসমোলজির মডেলগুলোর সাহায্যে আমরা জানি, সময়ও সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থাৎ সময় চিরকাল ছিল না। আবার আমরা যে বারবার ত্রিমাত্রিক জগতের কথা বলছি এটাও চিরকাল থেকেই ছিল না। এটিও সৃষ্টি হয়েছে। এখন ধরুন কোনো একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। তাহলে তিনিই এই স্থান-কাল সৃষ্টি করেছেন। এই স্থান-কাল সৃষ্টি করার আগে থেকেই কিন্তু তিনি আছেন।

এখন যদি জিজ্ঞাসা করেন, কোথায় আছেন? তাহলে তা লজিক্যাল হবে না। কেননা তখনো স্থান সৃষ্টিই হয়নি। আবার যদি জিজ্ঞাসা করেন কবে থেকে আছেন বা তার বয়স কত তাহলেও তা খাটবে না। কেননা তিনি সময়ের সৃষ্টিকর্তা। তার জন্য অতীত বর্তমান বা ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই। তাই এই ধরণের প্রশ্ন আসলে, সেগুলো উত্তর দেওয়া সম্ভব না। বরং সেই প্রশ্নটাই ভুল। আমি জানি না সালাফরা এটা জেনে করেছেন না না জেনে করেছেন, কিন্তু তারা বলতেন এই সকল বিষয়ে অধিক প্রশ্ন করা বিদ`আত ও বাতিল। ফলে প্রশ্ন না করলে এইসব আউল-ফাউল জিনিসও মাথায় আসবে না। গ্রিকদের সেই যুক্তিগুলো যে আসলে কু-যুক্তি ছিল তা শনাক্ত করতে আমাদের দেড় হাজার বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।