প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বাইরমুখী মানুষ ঘরমুখী লকডাউন

ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৫, ২০২০

বেয়াদবি মাফ করবেন। ছোট্ট একটা কিস্‌সা বলি। এক লোক ফ্রিতে বিচিসহ কাঁঠাল খেয়ে রাতের বেলায় বাড়ির পাশের পাঠক্ষেতের আইলে বসে হাগু করেছে। শেষরাতে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সকালে ওই লোকের বউ গেছে পাটশাক তুলতে। গিয়ে দেখে কাঁঠালের বিচি পড়ে আছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে একেবারে পরিষ্কার। বউ ভাবল লঙ্গরে বা শেয়ালে কাঁঠাল খেয়ে বিচি ফেলে গেছে। বউ কিন্তু পাটশাকের সাথে কাঁঠালের বিচিও নিয়ে এলো। মাছ দিয়ে রান্না করল। কাঁঠালের বিচির তরকারি হাপুশ-হুপুশ করে খেতে খেতে লোকটা বউকে জিগায়, খুব স্বাদ হইছে, বিচি পাইলি কই? বউ বলে, পাটক্ষেতের আইলে শেয়ালে বোধহয় কাঁঠাল খেয়ে রেখে গেছে।

এবার তবে আসল কথায় আসি। বসবাসের প্রবণতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে আমরা কিন্তু এখনও বহির্মুখী। আমরা এখনও খোলা ময়দানে, ঝাড়ে-জঙ্গলে হাগি। রাস্তার পাশে বা বনের ধারে হাগতে বসলে পাছাটা দেই জনগণের দিকে। আড়াল করি মুখটা। হাজার বছর আগে বহুশাস্ত্রবিদ আল বিরুনি আমাদের এই অবস্থায় দেখে গিয়েছিলেন। বিবরণও লিখে গেছেন তাঁর ‘কিতাবুল হিন্দ’ গ্রন্থে। আমরা কিন্তু এখনও সেই অবস্থায়ই আছি। বহির্মুখী সংস্কৃতির এটা নিশ্চয়ই খারাপ দিক। কিন্তু অনেক ভালো দিকও আছে। আমাদের মাঠ ভালো লাগে, নিসর্গ ভালো লাগে, নদী ভালো লাগে। ঢাকার মতো শহরেও যারা থাকে তাদেরও খোলা মাঠ, গাছপালা, প্রান্তর, ধানক্ষেত, খালবিলের জন্য মন হু হু করে। অর্থাৎ তারাও এখনও পূর্বপুরুষের বহির্মুখী প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ কিন্তু ঘরমুখী। ব্যাপক নগরায়ন মানুষকে ঘরমুখী করে তোলে। তারা কবরও নেয় ছোট ছোট কফিনের মধ্যে। ওয়েস্টউড গ্রেভইয়ার্ড কিংবা হলিউড মেমোরিয়াল পার্কে বহুতল বাড়ির মতোই থরে থরে সাজানো থাকে তাদের কবর। কখনও পুরনো একটির মধ্যেই আশ্রয় হতে থাকে অনেকের। গৃহমুখী সংস্কৃতির মানুষেরা খেলার জন্য আমাদের মতো মাঠ না খুঁজে বরং ঘর খোঁজে।

কেন বললাম এত কথা? ইতিবাচক হোক আর নেতিবাচক, বহির্মুখী সংস্কৃতির প্রবণতা যাদের তাদের আপনি হুট করে এই সময়ে ঘরে ঢোকাবেন কী করে? লকডাউন তাদের ঘরে আটকাতেই পারবে না! এই পরশুও একজন প্রবীণ ফোনে বললেন, ‘বেটা, নয়া বউ ঘরে রাইখা আমরা নৌকায় বা জঙ্গলে বইসা তাশ খেলা লোক। আমরা মইরা গেলেও কবর থেকে ভূত হইয়া বাইর হইয়া ঘরে ঘরে উঁকি মাইরা দেখি, আত্মীয়-স্বজন কী করে। কবর থাইকা বাইর না হইতে পারলে সেকান্দার বাদশার মতো একটা হাত হইলেও বাইর কইরা রাখি।’