কবি ময়ূখ চৌধুরী

কবি ময়ূখ চৌধুরী

অসাধারণ তাঁর গদ্যের ভাষা: তীব্র, তীর্যক, ঝাঁঝালো

স্মরণ

জগলুল আসাদ

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০১৯

মুক্তকণ্ঠ পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী ‘খোলা জানালা’য় ধারাবাহিকভাবে বেরুচ্ছিল ময়ুখ চৌধুরীর ‘কবিতা ও তার পাড়াপ্রতিবেশী’ নামক এক প্রবন্ধ । খুব অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ রচনা। অসাধারণ ছিল তাঁর গদ্যের ভাষা ও ভঙ্গিমা। তীব্র, তীর্যক, ঝাঁঝালো। প্রতি সপ্তাহে অপেক্ষা করতাম ময়ুখ চৌধুরীর কোনও লেখা পড়বার। তাঁর গদ্যের প্রতি মুগ্ধতা থেকেই আগ্রহ জন্মে তাঁর কবিতার প্রতিও। হন্যে হয়ে ঢাকায় খুঁজেছি তাঁর কবিতার বই। খুঁজে খুঁজে না পেয়ে হতাশ। তো, তখন জাহাঙ্গীরনগর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নীলক্ষেত যেতাম। একদিন প্রায় অলৌকিকভাবে নীলক্ষেতে ঢুকেই পেয়ে গেলাম তাঁর কবিতার বই ‘প্লাবনের পটভুমি’র পুরোনো কপি। তারপর সম্ভবত বইমেলা থেকে কিনেছিলাম তাঁর আরেক কাব্যগ্রন্থ ‘অর্ধেক রয়েছি জলে, অর্ধেক জালে’।

তাঁর একটিমাত্র প্রবন্ধের বই পড়া হয়েছে আমার: ‘উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলা কাব্যের গতিপ্রকৃতি’। রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক তাঁর গবেষণাগ্রন্থটি কোথাও খুঁজে পাইনি তখন। পরে আর খোঁজাও হয়নি। নানা জায়গায় ছাপানো তাঁর গদ্যগুলো গ্রন্থাকারে ছাপা হয়েছে কিনা তা-ও জানি না। এখনো ময়ুখ চৌধুরীর কবিতা পত্রিকায় দেখলে না পড়ে চোখ সরিয়ে নিয়েছি, কখনো এমন হয়নি। তবে তাঁর গদ্য পড়বার সাধ আমার এখনো মরেনি, যদিও তাঁর কাব্য আমাকে তৃপ্ত করেনি কখনো তেমন। তবুও তাঁর দুটো লাইন মনে পড়ে মাঝে মাঝেই:

এক.
এ শহর আমার শহর, চিরদিন বৃষ্টি মেঘে কেটে যাক হাজার বছর। (অর্ধেক রয়েছি জলে,অর্ধেক জালে)

দুই.
তুমি আমার উনিশ শতক
তুমি আমার কাব্য
চিন্তা থেকে ছুটি পেলে
তোমায় নিয়ে ভাবব। (‘উনিশ শতকের নবচেতনা ও বাংলাকাব্যের গতিপ্রকৃতি’ বইয়ের উৎসর্গপত্রে উৎকীর্ণ)

শিক্ষক হিশেবে তিনি অসাধারণ ব`লে শুনেছি। আর ক্রিকেটের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁর মতো কামেল লোকও নাকি বিরল! বাংলা একাডেমিতে তাঁর একটি বক্তৃতা শুনবার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। অসাধারণ বাগ্মী তিনি। অন্য এক বক্তার বাংলা কবিতা নিয়ে নেতিবাচক কিছু মন্তব্যের জবাবে তিনি যে অসামান্য কিছু পর্যবেক্ষণ পেশ করেছিলে, এরপর অন্য বক্তাদের সকলেকেই লেগেছিল জলো, অন্তর্দৃষ্টিহীন।

কবি ময়ুখ চৌধুরী আমার উত্তীর্ণ কৈশোরের অন্যতম প্রিয় লেখক। খুব ভালোবেসে পড়তাম তাঁকে। আহা, একই মুগ্ধতা নিয়ে আর তাঁকে পড়া হবে কি-না, বা কাউকেই আর এ-জীবনে কখনো বিহ্বলতা নিয়ে পড়া হবে কি-না, জানি না! তবুও, একদা বিপুল পাঠের প্রেরণা আর একরাশ মুগ্ধতা দিয়েছিলেন তিনি আমাকে, সেই ঋণ স্বীকার করলাম! ড.ময়ুখ চৌধুরীর জন্মদিন ছিল মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর। জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই।

 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক