বখতিয়ার খিলজি

বখতিয়ার খিলজি

আপনাদের চিনি, গরিবের রক্তচোষা সুভদ্র জাত!

শিমুল বাশার

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৯, ২০২০

চলুন না হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাটাকে ভালো করে কষে গালাগাল দিতে একটু প্রস্তুতি নিয়ে আসি। এখানে প্রায় শ’খানেক মাদরাসা আছে এবং স্বতন্ত্র ইবতেদীয়াই কমপক্ষে ২২টি। প্রতিটি মাদরাসায় কম করে হলেও পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী আছে, যারা যূথচারী। একই খাওয়া এবং বোঝাপড়া নিয়ে বেড়ে উঠছে। জায়গাটা তাদেরই একটা কলোনি বলা যায়।

এমন একটি জায়গায় ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী একজন জনপ্রিয় মওলানা বা গুরু তাদেরকে একা রেখে প্রকৃত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তাকে বিদায় জানাতে লাখো ভক্ত জড়ো হবে, এটাই স্বাভাবিক। যারা এ পৃথিবীকেই ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ক্ষণিকের জগৎ মনে করে, যাদের কাছে ইহজগতে বেঁচে থাকা বা না থাকা মুখ্য নয়, এই অস্তিত্বটাকে যারা নিতান্তই আল্লাহর ইচ্ছা বলে মানে, তাদেরকে দুনিয়াবি আইন, কোয়ারেন্টিন বোঝানো আপনারই মূখর্তার বহিঃপ্রকাশ।

আপনি কি দেখছেন না, এই মানুষগুলো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইসোলেশানেই আছে বহুদিন ধরে। এটা নিশ্চয়ই বোঝেন এবং জানেন যে, মাদরাসার ছেলেমেয়েরা এক প্রকার তালাবন্দি জীবনই যাপন করে। এটাই বাস্তবতা। এবার চলুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামটাকেই না হয় একটু ঘেঁটে দেখি। এই অঞ্চলে পূজা-অর্চনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হতো। এ কারণে রাজা লক্ষ্মণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এখানে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভি পাড়ায় (?) বাড়ি তৈরি করে। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করে।

অন্য একটি মতানুসারে, দিল্লি থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফি হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এ শহর থেকে ওইসব ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দেন, যা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, মৌলভি পাড়া শব্দটি এলো কোথা থেকে? ভারতীয় উপমহাদেশে ‘মৌলভি’ এবং ‘মাওলানা’ শব্দটি একে অপরের ক্ষেত্রে অদল বদল করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষত ‘মাদরাসা’ কিংবা ‘দারুল উলুম’ থেকে স্নাতক পাশ করা কিংবা কোনও ধর্মীয় পণ্ডিতের ছত্রছায়ায় পাণ্ডিত্য অর্জনকারী সম্মানিত ধর্মীয় মুসলিম নেতাকে ‘মাওলানা’ বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে সাধারণ ধর্মীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে টাইটেল হিসেবে ‘মৌলভি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের সরকারি ‘আলিয়া মাদরাসা’র নিয়মে তাদেরকেও ‘মৌলভি’ বলা হয়। যারা ‘মৌলভি’ (basic), ‘মৌলভি আলিম’ (intermediate) অথবা ‘মৌলভি ফাজিল’ (advanced) পাশ করে।

এখন ইতিহাস বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলা জয় করেন যা ছিল মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে উত্তর প্রান্ত। তবে প্রাক মুসলিম যুগের ইতিহাস ঘাটলে আরব উপদ্বীপে ইসলামের উৎপত্তি ও বিস্তৃতির অল্পকালের মধ্যেই তা আরব বণিক, সুফি ও ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চল সিন্ধ, বাংলা, গুজরাট, কেরালা এবং সিলনে। মুসলিমরা এসব স্থানে বসতি করেন এবং স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করেন। ৬৪৩ সালে খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়ে আরব বিশ্ব প্রথম নৌপথে ভারত উপমহাদেশে আক্রমণ করে, স্থলপথে আক্রমণ করে তার অনেক পরে।

এভাবে মৌলভি পাড়া নামকরণের একটা সূত্র খুঁজে নেয়া যায়। শিল্প-সংস্কৃতি, শিক্ষা-সাহিত্যে দেশের অন্যতম অগ্রণী জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, ব্যারিস্টার এ রসুল, নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা, কথাসাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ, কবি আবদুল কাদির, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও আল মাহমুদসহ বহু জ্ঞানী গুনীর জন্মধন্য জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এ জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীও বলা হয়। মনে রাখবেন, ওসব মাদরাসায় দরিদ্রের সন্তানেরা প্রায় বিনা পয়সায় পড়ে, থাকে খায়। রাষ্ট্র তাদের সেই শিক্ষাকে কিন্তু ব্যান করে নাই।

নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে অপরের সমালোচনায় মুখর থাকা একটা কৌশল! টাউট লোকদের এটা কমন বৈশিষ্ট্য। আপনারা সবাই বুঝি খুব সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতেছেন? সবতো দেখা যায়, ডাণ্ডার বাড়ির ভয় না থাকলে আপনারা যে কতটুকু মানতেন তা পুলিশ সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘটা দেখেই বোঝা যায়। আপনাদের চিনি, দরিদ্র মানুষের রক্ত ঘাম চোষা সুভদ্র জাত, গার্মেন্টস আর চোরা কারবারী।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী