আবু জাফর শামসুদ্দীনের আত্মস্মৃতি

প্রকাশিত : আগস্ট ২৪, ২০১৯

আবু জাফর শামসুদ্দীন (১৯১১–১৯৮৯) জীবনকাহিনি লেখেন ‘আত্মস্মৃতি’ নামের বইয়ে। বইটি প্রথম খণ্ড ছাপা হয় ১৯৮৯ তে আর দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৯০ এ। পরে দুটা বই একসাথে ‘সাহিত্য প্রকাশ’ ২০০৫ এ ‘অখণ্ড সংস্করণ’ নামের একটা বই প্রকাশ করে। আজ তার ৩১তম প্রয়াণদিবস। ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকায় তিনি মারা যান। তার জন্ম ১৯১১ সালে, গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে। তার প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে ‘আত্মস্মৃতি’ থেকে ছাড়পত্রের পাঠকদের উদ্দেশে:

জিনপরী

অল্প বয়সে প্রায়ক্ষেত্রে নাবালিকা অবস্থায় মেয়েদের বিয়ে দেয়া হতো যুবকদের সঙ্গে। প্রথম রাত্রির অভিজ্ঞতা সম্ভবত অপ্রাপ্তবয়স্কা বধূর মনে ভীতির সঞ্চার করতো। ভূত পেতনি জিনপরীর দৌরাত্ম্যটা ছিল এই বধূদের ওপর সবচেয়ে বেশি। শরষে পড়া, তাবিজ, পানি পড়া প্রভৃতিতে কাজ না হলে জ্বলন্ত মরিচের ধোঁয়ায় ঘর আচ্ছন্ন করে দুষ্ট জিন তাড়ানো হতো।

ঠাণ্ডার মা নাম্নী একটি বালিকার কথা মনে পড়ে। তিরিশ-বত্রিশ বছর বয়স্ক এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মেয়েটি একদিন দুপুরে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় স্বামীগৃহ হতে ছুটে এসে আমাদের বাড়ির উঠোনের কোণের জাম্বুরা গাছের আগায় চড়ে বসে। অভিভাবক পিতা, ভ্রাতা এবং স্ত্রী নামক সম্পত্তির মালিক স্বামী বহু কষ্টে তাকে নামিয়েছিল। নামাবার পর সকলে মিলে তাকে পিটাতে পিটাতে বাড়ি নিয়ে যায়।

আজো সেই নৃশংসতার দৃশ্য মনে হলে সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠে। তাকে দুষ্ট জিনের আসর হতে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সে মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়তো। দাঁত কপাটি লাগতো। ঐ অবস্থায় ঠাণ্ডার মা’র মৃত্যু হয়। (পৃষ্ঠা ৪০)

খাইনি

একটি ঘটনার কথা অল্প অল্প মনে পড়ে। জয়দেবপুর রাজপরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তাসূত্রে আবদ্ধ এক ব্রাহ্মণ যুবক এক মুসলমান চাষীর যুবতী পত্নীর সঙ্গে অবৈধ প্রণয়ে লিপ্ত হয়। টাকাকড়ি পেয়ে লোকটি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। ব্রাহ্মণ যুবক ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করে। সেকালে জয়দেবপুরের মতো হিন্দু-প্রধান জায়গায় বসবাস করা বোধ করি তার পক্ষে নিরাপদ ছিল না। তাছাড়া পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার হতেও সে বঞ্চিত হয়।

সে দীন মোহাম্মদ নাম গ্রহণ করে তার মুসলমান পত্নীকে নিয়ে আমাদের গ্রামে চলে আসে। গ্রামবাসী মুসলমানগণ মহাখুশি। একটি পরিবার তাকে ভিটের জায়গা দান করে। গ্রামবাসীগণ চাঁদা তুলে এই দম্পতির জন্য ঘর তুলে দেয়। দীন মোহাম্মদ নও-মুসলিমরূপে সয়ারে (সফরে) বেরোত। এটাই ছিল তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পেশা। সপ্তাহ-দু’সপ্তাহ অন্তর সে ভিক্ষালব্ধ টাকাকড়ি ধানচাল প্রভৃতি নিয়ে ঘরে ফিরতো।

অবৈধ প্রণয়ে লিপ্ত হওয়া বোধ করি মহিলার এক দূরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। স্বামীর অনুপস্থিতকালে মহিলার ঘরে বিবাহিত-অবিবাহিত নির্বিশেষে প্রচুর লোক সমাগম হতো। এমনকি পিতা-পুত্র উভয়কে প্রণয় বিতরণেও তার কুণ্ঠা ছিল না। বিষয়টা সবাই জানতো। মহিলা অচিরে ‘খাইনি’ পদবি লাভ করলো। খাইনির ঘরে যত খুশি ফ্রি তামাক টানা চলতো। বোধ করি এজন্যই তাকে কেউ কিছু বলতো না।

গ্রামে তখনও অবস্থা-ব্যবস্থায় হিন্দু সমাজ প্রবল। সংখ্যায়ও তারা প্রায় সমান সমান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক কলহ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হওয়ার চিন্তাও করেনি দু’সম্প্রদায়ের কোনো গোষ্ঠী। জনৈক প্রৌঢ় ব্রাহ্মণও খাইনির ঘরে অভিসারে আসতেন এমন একটা কানাঘুষাও ছিল।

ঘূর্ণিঝড়ের দিক নির্ণয় করা কঠিন। ছোটকালে ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ুকেআমরা বলতাম বানকুড়ালি দেখেছি। পাক খেতে খেতে শুকনো পাতা উল্টিয়ে নিয়ে যেতো। নদীর স্থানে স্থানে ঘূর্ণাবর্ত দেখা যায়। আশপাশে যা পায় তাই টেনে এনে শুষে নেয় ঘূর্ণমান জল। ঘূর্ণি বায়ু উড়ায়। ঘূর্ণাবার্ত ডুবায়। বিচিত্র মানবজীবন। একই মানুষের জীবনে অসংখ্য রকমের যে আকর্ষণ-বিপ্রকর্ষণ তার লেখাজোখা নেই।

দু’তিন বছর খাইনির ঘরে প্রণয় লেনদেনের খেলা অবিরাম চলছিল। সহসা একদিন দেখা গেল মূল খেলোয়াড় দীন মোহাম্মদ খাঁ ক্রীড়াস্থল হতে উধাও। শুনলাম, সে তার জন্মস্থান জয়দেবপুরে ফিরে গেছে এবং প্রায়শ্চিত্ত করে পুনরায় হিন্দু হয়েছে। কিন্তু তার জীবন সঙ্গীতে তালমাত্রা ফিরে আসেনি। কয়েক বছরের মধ্যে এক রাত্রিনিশীথে সে গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হয়। খাইনি এক দিনমজুর মুসলমান যুবককে নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আজ ওরা কেউ পৃথিবীতে নেই। কিন্তু ওরা যে অলিখিত ইতিহাস রচনা করে গেছে, অল্প বিস্তর অদলবদল হয়ে আজও পৃথিবীর সর্বত্র তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কখনও হচ্ছে প্রহসন, কখনও বিয়োগান্ত। (পৃষ্ঠা ৪১–৪২)

জৈবধর্মের প্রেম

ডেমরা থাকাকালে আমার এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। গরিব মধ্যবিত্ত ঘরের এক মহিলা প্রেমে পড়েছিলেন। বামন হয়ে চাঁদ ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। আমাদের সঙ্গেও তার কী যেন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। লাগালাগি গ্রামে ছিলেন একজন অবস্থাপন্ন তালুকদার। দশগ্রামে তার নামডাক। সুশ্রী পুরুষও ছিলেন তিনি। আমিরানায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার লাল রঙের তেজি ঘোড়াও ছিল। ভদ্রলোকের ঘরে স্ত্রীও ছিল। মহিলা আড়ালে-আবডালে থেকে ভদ্রলোককে দেখে থাকবেন।

ঐ দেখাই হলো তার কাল। তিনি একতরফা প্রেমে পড়লেন। অভিভাবকগণ নাকি তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্বামীর ঘর করলেন না। ফিরে এলেন। আমরা যখন দেখেছি তখন তিনি অর্ধোন্মাদ। কোনো অভিভাবক বেঁচে নেই। মহিলা সুপারিবাগের মধ্যে একটি ছোট কুটিরে একা বাস করতেন। উঠোনটি ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঘরের এক পাশে ছোট্ট মাঠ। ধোপ-দুরস্ত শয্যা বালিশ ইত্যাদি। অপরদিকে চুলো, হাঁড়ি-পাতিল, সিকেয় বাসন ও গেলাস। নিজেও অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতেন।

প্রেমাস্পদ ভদ্রলোকের কাছে নাকি তিনি বহুবার বিয়ের পয়গাম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পয়গাম সত্য সত্যই যথাস্থানে পৌঁছত কি না সন্দেহ। মহিলার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার অন্ন ধ্বংস করাটাই সম্ভবত ছিল পয়গাম বহনকারীদের উদ্দেশ্য। মানবসমাজটাই এমন যে, এখানে পাগলেরও ক্ষমা নেই। শুধু উপহাস্যাস্পদ হয়ে রেহাই পাওয়া যায় না, দণ্ডও দিতে হয়। আমার গ্রামে আমার চেয়ে বয়সে বড় এক বালক নির্বোধ হয়েই জন্মগ্রহণ করেছিল। পাড়ার লোকেরা তাকে মগা বারেক ডাকতো। তার ওপর শুধু সমবয়সীরাই নয়, বড়রাও কম অত্যাচার করেনি। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার মগামিও বাড়তে থাকে। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যে-ই তার সামনে পড়তো, তাকেই বলতো আমি তোমারে বিয়া করুম। একবার এক স্থুলকায়া মহিলা বললেন, বিয়া তো করবি, আমারে লইয়া যাইতে পারবি? সে বললো, পারমু। মহিলা তার ঘাড়ে চেপে বসলেন। তার দৌরাত্ম্য যাতে বেড়ে না যায়, সেজন্য বাপ-মা তাঁকে তিন বেলা নিয়মিত আহার্য দিতেন না। ফলে তাঁর গায়ে বলশক্তি কম ছিল। সে পারবে কেন ঐ স্থুলকায়া মহিলাকে বহন করতে। অতিরিক্ত ভারে তার জিব বের হওয়ার অবস্থা। বধূকে নিয়ে বাড়ি যাওয়া হলো না। আমার সামনেই ঘটনাটা ঘটেছিল। খুব হেসেছিলাম। আজ মনে হয় একটা নির্বোধ মানুষের সঙ্গে কি নিষ্ঠুর রসিকতাই না করা হয়েছিল। মগা বারেক অনেক আগেই মরে গেছে। কিন্তু তার বেদনাবিধুর স্মৃতি এখনও বহন করে চলছি।

ডেমরার সেই প্রেমোন্মাদ মহিলা তার প্রেমাস্পদের পক্ষ হতে কোনো সাড়া পাননি। হয়তো সে ভদ্রলোক ঐ মহিলাকে দেখেনও নি কখনও-কোনো খোঁজখবর রাখতেন না। তবু মহিলা আজীবন তার প্রতীক্ষায় ছিলেন। গাছের ডালে দাঁড়কাক এসে বসলো। মহিলা মাথায় ঘোমটা তুলে দিয়ে বলতেন, ‘এইত তাইন কাউয়া অইয়া আইছেন।’ দাঁড়কাকরূপী প্রেমাস্পদের জন্য উঠানে ছিটিয়ে দিতেন খাদ্য সম্ভার। দুষ্ট বালক-বালিকারা খবর দিতো, অমুক দিন তিনি আপনার এখানে আসবেন। মহিলা তার ক্ষুদ্র তহবিল উজাড় করে পোলাও, কোর্মা, ফিরনি, জর্দা রান্না করতেন, ঘরের খাটটি ঝেড়ে-মুছে পাততেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শয্যা, গিরদা বালিশ প্রভৃতি। তারপর মিয়ার আগমন প্রত্যাশা করতেন। মিয়া আসতেন না, আসতো দুষ্টু ছেলেমেয়েরা। আর আসতো দাঁড়কাক-বেশী মিয়া এবং তার সহচরগণ। আহার্য দু’ভাগে বিভক্ত হতো। প্রথম ভাগ পেতো কাক-শালিক প্রভৃতি পাখিরা। দ্বিতীয় ভাগ উপস্থিত ছেলেমেয়েরা ভাগাভাগি করে খেতো। অল্প অল্প মনে পড়ে, একদিন আমিও সুপারিবাগিচায় ঘেরা ঐ কুটিরে প্রস্তুত খাবারের ভাগ পেয়েছিলাম। মহিলা রীতিমতো নামাজ-রোজা করতেন, পর্দাপুশিদায় থাকতেন। ছোটখাটো মহিলা বেশ সুন্দরীও ছিলেন মনে পড়ে। এই একটি ব্যাপার ছাড়া অন্য কোনো পাগলামি তাঁর ছিল না। অন্তর্জ্বালার দহনে তাঁর ছিপলেছাপলা ছোটখাটো দেহটি ক্রমে ক্রমে কৃশ এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মৃত্যুতে সব জ্বালারই অবসান হয়। মহিলার মৃত্যুর কথা মনে নেই। হয়তো আমি তখন ডেমরা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ঐ মহিলাকে ভুলতে পারি নি। যখনই স্মরণ হয় মর্মবেদনা অনুভব করি। আমরা কী এক নিষ্ঠুর নাটকে ফেউয়ের ভূমিকায় নিযুক্ত ছিলাম। পরিণত বয়সে ঐ মহিলার শোচনীয় পরিণামের কথা যখনই ভেবেছি তখনই মনে পড়েছে ইয়ুসুফ-জুলেখার প্রেমোপাখ্যানের কথা। জুলেখার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ইয়ুসুফ। কিন্তু জুলেখা তাঁকে ভুলতে পারেন নি। ইয়ুসুফ ইয়ুসুফ জপতে জপতে বনবাসিনী হন তিনি। বিরহের তীব্র দহনে যৌবনেই তিনি লোলচর্ম বৃদ্ধায় পরিণত হন। ইয়ুসুফ তখন মিসরের প্রধান উজির। তিনি একদিন রাজকার্জে ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কুটিরে কঙ্কালসার বৃদ্ধাকে দেখে ইয়ুসুফের দয়া হলো। তিনি ঘোড়া হতে নেমে জিজ্ঞাসা করলেন, কি দুঃখ আপনার? আমি কি আপনার কোনো উপকার করতে পারি? জুলেখা নিজ পরিচয় গোপন করে বললেন, আপনি পয়গম্বর, দোয়া করুন আমি যেন আমার হৃত যৌবন ফিরে পাই। ইয়ুসুফ বললেন, তাই হোক। সঙ্গে সঙ্গে জুলেখা মিশরের সেরা সুন্দরীতে পুনরাভির্ভুত হন। তখন ইয়ুসুফের প্রেমের পালা শুরু হলো। জুলেখা প্রত্যাখ্যান করলেন।

পুথির কাহিনীর বাকি অংশ মনে নেই। কিন্তু ডেমরার সে প্রেমপাগলী মহিলা তার প্রেমাস্পদের সাক্ষাৎ ইহজীবনে পাননি। দু’জনই এখন কবরে। ওদের অস্থিও এখন খুজে পাওয়া যাবে না। লাইলী-মজনুর কাহিনীতে বেহেশতে বিয়ের ব্যাবস্থা আছে। জীবনে যাঁরাদাড়িতে ক্ষুরকাঁচি লাগান নি তাঁরা নাকি ঐ বিয়েতে দাওয়াত পাবেন। ডেমরার ঐ নিরক্ষর মহিলা হয়তো লাইলী-মজনুর কাহিনী শুনে থাকবেন। জামীর ঐ ফার্সি কাব্য তখন মুসলিম সমাজে খুবই জনপ্রিয় ছিল। বেহেশতে মিলনের আশায়ই কি ডেমরার ঐ মহিলা পৃথিবীর অস্থিমাংসময় জীবনকে বরবাদ করলেন-কল্পনার স্বর্গে দিলেন আত্মাহুতি?

পশুর জৈবধর্ম কবে কোন কালে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রেমে রূপান্তরিত হলো জানি না। হিন্দু পুরাণের একজন বিখ্যাত ঋষির নাম উদ্দালক। তাঁর পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। একদিন পিতাপুত্র এক সাথে বসেছিলেন। এমন সময় এক কামাতুর ব্রাহ্মণ এসে পুত্রের সমুখ হতে তাঁর মাতাকে টেনে নিয়ে গিয়ে মৈথুনে প্রবৃত্ত হয়। এতে শ্বেতকেতু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হওয়াতে পিতা উদ্দালক পুত্রকে বলেন, “হে পুত্র ক্রুদ্ধ হয়ো না, ইহাই সনাতন ধর্ম, গাভীদের ন্যায় স্ত্রীলোকও অরক্ষিতা।” হোমারের কাহিনীতেও আমরা দেখতে পাই, প্যারিসের অন্তঃপুরে এসে মেনেলাউসের পত্নী হেলেনের কোনো হা-হুতাশ নেই। দশ বছরের যুদ্ধ শেষে পুনরায় মেনেলাউসের অন্তঃপুরে প্রবেশ করতেও তাঁর কোনো মানসিক দ্বন্ধ নেই। হোমার চতুর কাহিনীকার। দশ বছর ঘর করা সত্ত্বেও প্যারিসের ঔরসে হেলেনের কোনো সন্তান হয় নি। সন্তান হলে হোমার ঐ সমস্যার কি সমাধান করতেন জানি না। শকুন্তলার কাহিনীতেও প্রেম নেই। শকুন্তলাকে গর্ভবতী করে কালীদাস তাঁর কাহিনীতে নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। জৈবধর্মের মধ্যে প্রেমের প্রবেশ মানবেতিহাসে অনেক পরের ঘটনা বলেই মনে হয়। প্রেম মানবসভ্যতার একটি বিশেষ স্তরের ব্যৈক্তিক অনুভুতি এবং এ অনুভুতি হতেই উন্নত মানের আর্টের উদ্ভব।
ডেমরার সেই মহিলার স্মৃতি আমার মনকে এখনও অসম্ভব রকম পীড়িত করে বলেই এতোগুলো অবান্তর প্রসঙ্গ টেনে এনে হৃদয়টাকে হালকা করলাম। (পৃষ্ঠা ৭১–৭৩)