আবু তাহের সরফরাজের গদ্য ‘ইন্দ্রিয়কথা’

প্রকাশিত : জুন ২২, ২০২২

প্রতিদিন আমরা নানা রকম জিনিস ব্যবহার করি। গাড়িতে চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাই। মোবাইলে দূরে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বলি। টেলিভিশনে কার্টুন ও সিনেমা দেখি। গাড়ি, মোবাইল ও টেলিভিশন নানা রকম ছোট ছোট যন্ত্র বা মেশিন দিয়ে তৈরি। এসব যন্ত্র গাড়ি, মোবাইল ও টেলিভিশনকে কাজের উপযোগী করে তোলে। এরকম যন্ত্র প্রতিটি জিনিসেরই রয়েছে। একইভাবে জীবদেহ সচল রাখতে জগতের প্রতিটি জীবদেহে রয়েছে নানা রকম যন্ত্র। জীব হিসেবে মানুষও এর বাইরে নয়। দেহের যেসব যন্ত্র বা মেশিন মানুষকে সচল রাখে তাদেরকে ইন্দ্রিয় বলে। মানুষের ইন্দ্রিয় তিনভাগে ভাগ করা হয়। কাজের ইন্দ্রিয়, জ্ঞানের ইন্দ্রিয় ও অন্তর ইন্দ্রিয়।

কাজের ইন্দ্রিয়
পড়ার টেবিলে বসে তুমি বই পড়ছ। শব্দ করে মুখস্ত করছ আগামীকালের স্কুলের পড়া। মুখ দিয়ে তুমি যা বলছ তার নাম কথা বা বাক। পড়তে পড়তে তোমার খিদে পেয়েছে। তুমি চেঁচিয়ে আম্মুকে বললে, আম্মু, আমার খিদে পেয়েছে? কিছু খেতে দেবে?
আম্মু ছিলেন রান্নাঘরে। তিনি জবাব দিলেন, আমার হাতে এখন কাজ। একটু পরে দিচ্ছি।
তোমার যে খিদে পেয়েছে, এটা হচ্ছে তোমার মনের ভাব। এই ভাব তুমি কথা বলে আম্মুকে জানালে। এই কথাগুলো বলতে তোমার মুখের ভেতরের কয়েকটি অংশ তোমাকে সাহায্য করেছে। অংশগুলো হচ্ছে: গলার নালি, মুখগহŸর, কণ্ঠ, জিহŸা, তালু, দাঁত ও নাক। এই অংশগুলোও যন্ত্র, তবে ছোট ছোট যন্ত্র। এইসব ছোট ছোট যন্ত্র একসঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি করেছে বাকযন্ত্র। এটা মানুষকে কথা বলতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার কাজটাও কিন্তু আমরা মুখগহ্বর দিয়েই করে থাকি।
নাহ, পড়ায় আর মন বসলো না তোমার! হাত দিয়ে বই বন্ধ করে তুমি উঠে দাঁড়ালে। এই হাত আমাদের কাজের আরেকটি ইন্দ্রিয়। হাত দিয়ে আমরা কত্ত রকম যে কাজ করি, তার কোনো হিসেব নেই। ভাবো তো, হাত না থাকলে আমাদের কত রকম অসুবিধে হতো! যার হাত নেই, সেই বোঝে হাত না থাকলে কত রকম মুশকিলে পড়তে হয়।
হাঁটতে হাঁটতে তুমি বাগানে এলে। কী দিয়ে হেঁটে এলে? পা দিয়ে। পা আরেকটি কাজের ইন্দ্রিয়। পা দিয়ে আমরা হাঁটাচলা করি। বিপদ দেখলে দৌড়ে পালিয়ে যাই। পা না থাকলে আমরা এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতাম। পা আছে বলেই আমরা এক জায়গা ছেড়ে আরেক জায়গায় যেতে পারি। এই যেমন, পড়ার ঘর ছেড়ে তুমি এখন বাগানে এসে দাঁড়িয়ে আছো এই পা দিয়েই।
বাগানে নানা জাতের ফুলগাছ। আব্বু ফুল খুব পছন্দ করেন। যেখানে যে ফুলগাছ পান নিয়ে এসে বাগানে লাগিয়ে দেন। ছুটির দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি বাগানেই কাটান। গাছগুলোর যতœ নেন। গাছের গোড়ায় পানি ঢালেন। আগাছা পরিষ্কার করেন। বাগানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হাসি পেল তোমার। মনে পড়ল পরশু দিনের একটা ঘটনা। ইংরেজির ম্যাডাম ক্লাস নিচ্ছিলেন। ভীষণ কড়া এই ম্যাডাম। যতক্ষণ পড়ান সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে বসে থাকে ক্লাসের সবাই। টুঁ শব্দটি পর্যন্ত কেউ করে না। একটু বেগড়বাই করলেই কান ধরে ওঠবস। তো পরশু দিন হলো কি, মামুন হঠাৎ শরীর মোচড়ামুচড়ি করতে শুরু করল। ম্যাডামের চোখ এড়ালো না। তিনি কড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, স্ট্যান্ড আপ!
স্প্রিংয়ের মতো সাথে সাথে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো মামুন।
কি সমস্যা তোমার? শরীর মোচড়াচ্ছ কেন?
একটা হাত তুলে কোনোমতে মামুন বলল, ম্যাডাম, টয়লেট...
চশমার ওপর দিক দিয়ে তাকিয়ে ম্যাডাম জিগেশ করলেন, টয়লেটে যাবে?
ঢোঁক গিলে মামুন বলল, জি ম্যাডাম।
আচ্ছা যাও, বলেই বইয়ের ওপর চোখ রাখলেন ম্যাডাম। আর অমনি পড়িমরি করে দৌড়ে বেরিয়ে গেল মামুন। তার দৌড়ের ভঙ্গি দেখে মুহূর্তেই হেসে উঠল ক্লাসের সবাই। ভুলেই গেল ইংরেজির ম্যাডাম এখনো তার চেয়ারে বসে আছেন।
তোমারও কি কখনো এরকম বেগ চেপেছে? পেলে বুঝতে যে, পায়খানার বেগ আটকে রাখা কতটা মুশকিল! এই যে পায়খানা বা মল, এটা কিভাবে তৈরি হয় জনো? আমরা যে খাবার খাই তা আমাদের পাকস্থলিতে গিয়ে পরিপাক হয়। পরিপাক মানে হজম হওয়া। আমাদের দেহের পুষ্টির জন্য খাবারের যে অংশটুকু দরকার সেটুকু রেখে খাবারের অদরকারি অংশ মলদ্বার দিয়ে মল হিসেবে বের হয়ে যায়। আমাদের দেহে যদি মলদ্বার না থাকতো তাহলে কী ভয়ংকর অবস্থা হতো, ভাবো তো! পায়খানার প্রচণ্ড বেগ নিয়ে আমরা ছটফট করছি অথচ তা পেট থেকে বের করতে পারছি না! এরচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা আর কী আছে!
মলদ্বার নিয়ে ভাবতে ভাবতে তোমার হিসু পেয়ে গেল। বাগানের একদিকে সরে গিয়ে প্যান্ট নিচে করে বসে পড়লে তুমি। যেটা দিয়ে তুমি হিসু করছ সেই যন্ত্রটার নাম লিঙ্গ। নারী ও পুরুষের লিঙ্গের আকৃতি আলাদা আলাদা। কী, লজ্জা পেয়ে গেলে? তবে থাক, লিঙ্গ নিয়ে আর কিছু বলব না। অবশ্যি আমি না বললেও একটু বড় হয়ে তুমি নিজেই এ বিষয়ে জেনে নিতে পারবে।
তাহলে আমরা জানতে পারলাম, দেহের বাইরের যেসব ইন্দ্রিয় দিয়ে মানুষ কাজ করে সেসব ইন্দ্রিয়কে কাজের ইন্দ্রিয় বলে। কাজের ইন্দ্রিয় পাঁচটি। এগুলো হচ্ছে: বাক, হাত, পা, মলদ্বার ও লিঙ্গ।

জ্ঞানের ইন্দ্রিয়
বাগানে হাঁটতে হাঁটতে তুমি এসে দাঁড়ালে রজনীগন্ধা ফুলের ঝাড়ের সামনে। কী সুন্দর শাদা ফুলগুলো! তোমার ভালো লাগছে। আর কী যে মিষ্টি এই ফুলের ঘ্রাণ! তুমি বুকভরে সেই ঘ্রাণ নিচ্ছ।
বাগানে যে রজনীগন্ধা ফুটে আছে, এটা তুমি কিভাবে জানলে? এটা তুমি জেনেছো চোখ দিয়ে। কেননা, চোখ রজনীগন্ধা ফুলটি দেখেছে। চোখ দিয়ে আমরা সবকিছু দেখতে পাই। রজনীগন্ধার যে ঘ্রাণে তুমি মাতোয়ারা, সেই ঘ্রাণ কিভাবে পেলে? সেটা পেয়েছো নাক দিয়ে। নাক দিয়ে আমরা যে কোনো জিনিসের ঘ্রাণ পাই।
এখন ধরো, তোমার চোখ ও নাক নেই। তাহলে তুমি রজনীগন্ধা ফুল দেখতে ও তার ঘ্রাণ নিতে পারতে না। যদি এ অবস্থা হতো তাহলে রজনীগন্ধা ফুল যে আছে, এই জ্ঞানই তোমার হতো না। তোমার কাছে রজনীগন্ধার কোনো অস্তিত্বই থাকত না। অথচ দ্যাখো, দেহের দুটি মাত্র ইন্দ্রিয় চোখ ও নাক দিয়ে তুমি রজনীগন্ধার বিষয়ে জ্ঞান পেয়ে যাচ্ছ।
এসব যখন ভাবছ ঠিক তক্ষুণি ঘরের ভেতর থেকে আম্মু তোমাকে ডাকছেন। ডাকছেন যে, কিভাবে জানলে? জেনেছো কান দিয়ে। কারণ আম্মুর ডাকের শব্দ তুমি কান দিয়ে শুনতে পেয়েছো। আম্মু কেন ডাকছেন তা জানতে তুমি ঘরে চলে এলে। একটা পিরিচে ডিম মামলেট নিয়ে আম্মু দাঁড়িয়ে ছিলেন। বললেন, নাও তো সোনা, এই ডিম মামলেটটা খেয়ে নাও। আমার আবার মেলা কাজ পড়ে আছে। এই বলে আম্মু চামচে করে একটুখানি তোমার মুখে দিলেন। তোমার কপাল কুঁচকে গেল। ওয়াক করে তুমি তা ফেলে দিলে।
আম্মু জিগেশ করলেন, কী হলো, ফেলে দিলে কেন?
তুমি আবারও ডিমে লবণ দিতে ভুলে গেছ আম্মু। লবণ ছাড়া ডিম মামলেট কেউ খায়? তুমি পারবে খেতে?
আম্মু জিভ কামড়ে ধরলেন। ইশ, তাই তো! লবণ দেয়া হয়নি, তাই না? দাঁড়া, এক্ষুণি লবণের ছিটা দিয়ে নিয়ে আসছি। তুই কিন্তু পালাবি না। ল²ি ছেলের মতো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি। এই বলে আম্মু রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
এখন বলো তো, ডিম মামলেটে আম্মু যে লবণ দেননি এটা তুমি কিভাবে জানলে? জিভ দিয়ে জেনেছো। এর মানে, জিভ দিয়ে তুমি ডিম মামলেটের স্বাদ পেয়েছো। আর তখনই তুমি জানলে পেরেছো যে, সেটায় লবণ দেয়া হয়নি।
এসব যখন ভাবছ ঠিক তখনই তোমার গলায় একটা মশা এসে কামড়ে দিল। উহ, বলে তুমি সেখানটায় মারলে এটা চাটি। নাহ, মশাটা মারতে পারোনি। সেটা উড়ে গেছে। এবার বলো তো, তোমার গলায় যে মশা কামড়েছে এটা তুমি কিভাবে জানলে? এই খবর তোমাকে দিয়েছে ত্বক। চোখ, নাক, কান ও জিহŸার মতো দেহের বিশেষ কোনো জায়গায় ত্বকের অবস্থান নয়। ত্বক রয়েছে পুরো দেহজুড়ে, চামড়ার তলায় লুকিয়ে।
খেলতে গিয়ে পায়ের তলায় ইটের ছোট্ট টুকরোয় ব্যথা পেলে। ব্যথা যে পেলে, এই খবর তোমাকে জানালো ত্বক। পিঠে ঘামাচি উঠেছে। চিড়বিড় করছে। চিড়বিড় যে করছে এটা ত্বকই তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছে। গ্রীষ্মের দুপুরে খুব প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছ। আবার শীতকালে ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছ। কেন? কারণ ওই ত্বক। ত্বকই তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছে কোনটা ঠাণ্ডা আর কোনটা গরম।
তাহলে দ্যাখা যাচ্ছে, চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের বিষয়ে খুঁটিনাটি সব খবর আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে। এই পাঁচটি হচ্ছে আমাদের জ্ঞানের ইন্দ্রিয়। কিসের জ্ঞান? এই পৃথিবীর জ্ঞান। পৃথিবীর প্রতিটি জিনিস বিষয়ে জ্ঞান। চোখ দিয়ে আমরা দেখি। নাক দিয়ে ঘ্রাণ বা গন্ধ নিই। কান দিয়ে শুনি। জিভ দিয়ে যে কোনো জিনিসের স্বাদ চেখে দেখি। আর ত্বক দিয়ে ছুঁয়ে দেখি। জ্ঞানের পাঁচটি ইন্দ্রিয় পাঁচ রকমভাবে এই পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসের বিষয়ে আমাদেরকে জ্ঞান দিচ্ছে। আমরা জানতে পারছি এটা এ রকম, ওটা ও রকম, সেটা সে রকম।

অন্তর ইন্দ্রিয়
আম্মু ফিরে এলেন। ডিম মামলেটের পিরিচটা তোমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি হাত দিয়ে খেয়ে নাও। রান্নাঘরে আমার মেলা কাজ পড়ে আছে। একটুকুও নষ্ট করবে না কিন্তু। এই বলে তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন।
আম্মুর কথায় একটু মন খারাপ হলো তোমার। আম্মুর মতো তুমি কি আর অমন সুন্দর করে চামচ দিয়ে মামলেট কেটে খেতে পারবে? কতটুকুই বা সময় লাগত মামলেটা তোমাকে খাইতে দিতে? এই যে তোমার মন খারাপ হলো, এর মানে মন নামে একটা যন্ত্র তোমার ভেতর রয়েছে। সেটা খারাপ হয়ে গেছে। আবার, আম্মু যখন তোমাকে আদর করেন তখন মন নামের যন্ত্রটা ভালো হয়ে যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, তোমার ভেতর মন নামের একটি ইন্দ্রিয় রয়েছে। আসলে পৃথিবী হচ্ছে আমাদের বাইরের জগৎ। এরকম আরেকটি জগৎ রয়েছে আমাদের ভেতরে। এই জগতের নাম অন্তর জগৎ। পৃথিবীর সব খবর যেমন আমরা জ্ঞানের পাঁচটি ইন্দ্রিয় দিয়ে জানতে পারি, একইভাবে অন্তর জগতের সব খবর আমরা জানতে পারি চারটি ইন্দ্রিয় দিয়ে। এগুলো হচ্ছে: মন, চিত্ত, বুদ্ধি ও অহংকার।
আম্মুর ওপর মন খারাপ হলেও আম্মুকে আসলে তুমি ভালোবাসো। অনেক অনেক ভালোবাসো। ভালো যে বাসো, এটা কিভাবে জানলে? অন্তর জগতের চিত্ত ইন্দ্রিয়টি এটা তোমাকে জানিয়ে দিয়েছে। তুমি যখন বাগানে রজনীগন্ধা ফুল দেখছিলে আর বুকভরে ঘ্রাণ নিচ্ছিলে, সেই সময়টার কথা একটু ভেবে দ্যাখো। তোমার ভেতর কী দারুণ ফুরফুরে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হচ্ছিল। এই যে ভালো লাগার ব্যাপারটা, এটাও কিন্তু চিত্তই তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছিল।
ডিম মামলেট খাওয়া শেষ করে পিরিচটা টেবিলে রেখে তুমি পড়ার ঘরে এলে। দেখলে, বইয়ের ওপর পুষি বেড়ালটা বসে পায়ের নখ দিয়ে বইয়ের পাতা আঁচড়াচ্ছে। কী কাণ্ড! বইয়ের পাতা যদি ছিঁড়ে যায়! দু’হাত দিয়ে বেড়ালটাকে ধরে তুমি নিচে নামিয়ে দিলে। এখন আমায় বলো তো, বেড়ালটাকে তুমি নিচে নামিয়ে দিলে কেন? বলবে যে, বা রে, না নামালে যে আমার বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলত! হ্যাঁ, তা তো ঠিকই। কিন্তু ছিঁড়ে যে ফেলত, এটা কিভাবে জানলে? এ খবর তোমাকে জানিয়েছে বুদ্ধি। আর এই বুদ্ধি নামের ইন্দ্রিয়টাই তোমাকে উৎসাহ দিয়েছে বেড়ালটাকে টেবিল থেকে নিচে নামিয়ে দিতে।
আম্মুর গলা শোনা গেল, হৃদ্য? তুমি কি ঘরে?
তুমি জবাব দিলে, জি আম্মু। কিছু বলবে?
রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে আম্মু বললেন, উঠোন থেকে আঁচারের বয়াম দুটো ঘরে এনে রাখো তো বাবা। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে।
একটু দাঁড়াও। আরেকটা কথা আমার বলার আছে। বৃষ্টি তো এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। একটু পরে গেলেও তেমন ক্ষতি হবে না। আচ্ছা আমায় বলো তো, আম্মু কাকে আঁচারের বয়াম তুলতে বললেন? ও মা, অমন তেরছা চোখে তাকাচ্ছ কেন? খুব বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম নাকি? মানছি, কিন্তু জবাবটা দিয়েই নাহয় যাও।
ভুরু কুঁচকে তুমি বললে, কেন, আমাকে?
তুমি কে?
বুঝলাম, আমার প্রশ্নের ধরনে তুমি খুবই বিরক্ত। আর তাই মুখ ঘুরয়ে বললেন, আমি আবার কে? আমি তো আমিই। হৃদ্য আবদুহু।
হ্যাঁ, তুমি যে তুমিই এটা কিভাবে জানলে? তুমি তো অন্য কেউ হতে পারতে!
মুখ বেঁকিয়ে তুমি বললে, বা রে, তা কেন হবে! আমি তো আমিই। কী সব ছাইছাতা প্রশ্ন!
রাগ করো না। প্রশ্ন যতই ছাইছাতা হোক না কেন, এর ভেতর দিয়েই শেখার অনেক কিছু আছে। আসলে আমি বলতে চাইছিলাম, তুমি যে তুমিই, আর কেউ নও, এটা তুমি জেনেছো অহংকার নামের ইন্দ্রিয় দিয়ে। এই ইন্দ্রিয়টি তোমার ভেতর আত্মচেতনা তৈরি করে দিয়েছে। এই চেতনা আছে বলেই তুমি জানো যে, তুমি আসলে তুমিই। আর কেউ নও। এই যাহ! বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেছে। দৌড়ে যাও, আঁচারের বয়াম দুটো তুলে আনো।