আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের আজ ১৪১তম জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৯, ২০১৯

আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের আজ ১৪১তম জন্মদিন। তার জন্ম শিয়ালকোটে ৯ নভেম্বর ১৮৭৭ এবং মৃত্যু পাঞ্জাবে ২১ এপ্রিল ১৯৩৮। তিনি ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষবিদ ও ব্যারিস্টার। তার ফার্সি ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সি ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইকবালের পিতামহ শেখ রফিক কাশ্মির হতে শিয়ালকোটে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। শেখ রফিক কাশ্মিরী শাল তৈরি এবং ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তার দুই পুত্র ছিলেন শেখ গোলাম কাদির এবং শেখ নুর মোহাম্মদ। শেখ নুর মোহাম্মদ ছিলেন ইকবালের পিতা। তিনি ছিলেন শিয়ালকোটের নামকরা দর্জি। শেখ নুর মোহাম্মদ কেবল পেশাগত দিক দিয়ে নয়, চিন্তাধারা এবং জীবন যাপনে ছিলেন ইসলামের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত-প্রাণ। সুফি সঙ্গীদের কাছে তার প্রচণ্ড সম্মান ছিল। তার স্ত্রী, মোহাম্মদ ইকবালের মা ইমাম বিবিও ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা। এই দম্পতি তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি গভীর অনুভূতির জন্ম দিয়েছিলেন।

পাঞ্জাবের বৃটিশ আর্মির কাছে শিখদের পরাজয়ের পর খ্রিস্টান মিশনারিরা শিয়ালকোটে শিক্ষা প্রচারের উপর গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। এই সময়েই শিয়ালকোটে স্কটিশ মিশন কলেজ স্থাপিত হয়। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ লিবারেল আর্টস্ এর কোর্সসমূহের অনেকগুলোতেই আরবি ও ফার্সি ভাষা মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হতো। যদিও এই সময় বেশির ভাগ স্কুলেই ফার্সি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এই স্কটিশ মিশন কলেজেই ইকবাল সর্বপ্রথম আধুনিক শিক্ষা প্রাপ্ত হন।

ইকবাল তার কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতি পান তার শিক্ষক সাইয়িদ মীর হাসানের কাছ থেকে। ১৮৯২ সালে ইকবাল স্কটিশ মিশন কলেজ হতে তার পড়াশোনা শেষ করেন। একই বছরে গুজরাটি চিকিৎসকের মেয়ে করিম বিবির সাথে তার বিয়ে হয়। তাদের বিচ্ছেদ হয় ১৯১৬ সালে। এই বিয়েতে ইকবালের তিনটি সন্তান ছিল।

১৮৮৫ সালে স্কটিশ মিশন কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ইকবাল লাহোরের সরকারি কলেজে ভর্তি হন। দর্শন, ইংরেজি ও আরবি সাহিত্য নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন এখান থেকে তিনি স্বর্ণ পদক নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯৯ সালে যখন তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন ততদিনে তিনি সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিত ব্যক্তিত্ব।

মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়বার সময় ইকবাল স্যার টমাস আর্নল্ডের সংস্পর্শে আসেন। এই শিক্ষাবিদ ইসলাম ও আধুনিক দর্শনে বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। ইকবালের কাছে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেছিলেন। স্যার টমাস আর্নল্ডই ইকবালকে ইউরোপে উচ্চ শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

ইকবাল ১৯০৫ সাল হতে লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন । তিন বৎসরের আইনের ডিগ্রি লাভ করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্কনস্ ইন হতে। আর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে। বৃটেনে থাকতেই ইকবাল সর্বপ্রথম রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। ১৯০৬ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হবার পরপরই তিনি তাতে যোগ দেন। দলের বৃটিশ চ্যাপ্টারের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে নির্বাচিত হন ইকবাল। সৈয়দ হাসান বিলগামী এবং সৈয়দ আমির আলির সাথে তিনি সাব-কমিটির সদস্য হিসেবে মুসলিম লীগের খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করেন। এর পর ১৯২৬ সালে তিনি লাহোরের মুসলিম লীগের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।

১৯০৮ সালে ইকবাল ইউরোপ হতে দেশে ফিরে আসেন এবং লাহোরের সরকারি কলেজে যোগদান করেন। এই সময় একই সাথে তিনি আইন ব্যবসা, শিক্ষাদান ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। কিন্তু মূলত অর্থনৈতিক কারণেই তিনি ১৯০৯ সালে তিনি সার্বক্ষণিক আইন পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু আয় রোজগারের ক্ষেত্রে এখানেও তিনি তেমন ভালো করতে পারেন নি। এর কারণ তাঁর সাহিত্য প্রীতি এবং সেজন্যে সময় ব্যয় করা। তিনি তাঁর পিতাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কবিতার বিনিময়ে কোনো অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন না। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে তিনি সে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেন নি। বৃটিশ সরকার তাকে ‘আসরার-ই-খোদায়ী’ পুস্তকের জন্য নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।