প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আশিকুজ্জামান টুলুর আত্মস্মৃতি ‘ভুল আমারই ছিল’

প্রকাশিত : মে ০১, ২০২০

একটা বিষয় নিয়ে মনে এক ধরনের খারাপ লাগা রয়েই গেছে। জানি না কোনোদিন আর বিষয়টা সামলে গিয়ে রিজল্ভ করতে পারবো কিনা। ২০০৪ সাল। রিপন আমাদের মোহাম্মদপুর বাসায় এলো আমার কাছে একটা চাকরির জন্য। রিপনের পরিচয় দেয়া দরকার। রিপন এক সময় আমার সাউন্ড কোম্পানিতে রোডি হিসাবে কাজ করতো ৯৬-৯৭ সালের দিকে। ওরা খুব গরিব। এ কারণে তার কাজে জয়েন করা। ওরা থাকতো রাজশাহীতে। সেখান থেকে এসে আমার সাথে যোগাযোগ করে চাকরিটা পায় ১৯৯৬ এর দিকে। এরপর থেকে ওর থাকার জায়গা হয় আরেকজন রোডি মন্তাজের সাথে আমার বাসার নিচের তলায়, যেখানে আমার সাউন্ড কোম্পানির ওয়্যারহাউজ বা স্টোরেজ ছিল। মন্তাজ আর রিপন দুজন দুই মেরুর মানুষ। মন্তাজ বায়ুচড়া আর রিপন শান্ত এবং ভদ্র। মন্তাজের কথা শেষ হয় না আর রিপন কথাই বলে না। নীরবে কাজ করে যায় একমনে।

তবে রিপনের ব্যাপারে চাকরিতে জয়েনের ঠিক মাস ছয়েক পরে আমার মনোভাবটা একেবারেই চেঞ্জ হয়ে গেল একটা ঘটনায়। সেদিন সোনারগাঁয়ে এলআরবি’র শো আর ওদিকে আরেকটা জুনিওর ব্যান্ডের শো আগারগাঁওয়ে। ফারুক ও মমতাজ গেছে এলারবি’র শোতে ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে। আর আগারগাঁওয়ে আরেকটা সেটাপ নিয়ে গেছে রিপন। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে এলআরবির শোতে আনিস গেছে এবং আগারগাঁওয়ে গেছে তৌফিক। আনিস ছিল প্রমেথিউজে এবং তৌফিক ছিল ডিফ্রেন্ট টাচে। তৌফিক অনেক আগেই মারা গেছে। আগারগাঁওয়ের শোটা রাত ১২টা নাগাদ শেষ হয়ে যাওয়াতে রিপন সেটাপ নিয়ে ফিরে চলে আসে রাত ১টা নাগাদ। এরই মধ্যে রাত প্রায় দুইটা বেজে যাওয়ার পর আমি স্টুডিও থেকে বাসা ফিরে আসি। খাওয়া দাওয়া সেরে একটা সিগারেট ধরিয়ে সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে টানছি আর ভাবছি সারাদিন কি কি হলো এবং কালকে কি কি করতে হবে। রাত প্রায় ৩টা ছুঁই ছুঁই, হঠাৎ খুব সুন্দর গলায় একটা গান শুনতে পেলাম। খুব বেশি জোরে নয়, খুব সন্তর্পণে গাইছে কেউ। সাথে হালকা গিটারও বাজছে। বুঝে গেলাম, সামনের বাসার বন্ধু জুয়েল হয়তো গাইছে। জুয়েল প্রতি রাতেই ওর দরজাটা খুলে দিয়ে লাইট নিভিয়ে অন্ধকার করে ঘরের দরজার সামনের পাটাতনে বসে নিজের সুর করা গানগুলি গাইত। অন্ধকারে ওর গাওয়া গানগুলি রাতের নীরবতাকে ভাঙতো না, বরং কেমন জানি মায়ায় মায়ায় জোড়া লাগিয়ে রাখতো। আমি প্রতিদিন স্টুডিও থেকে গভীর রাতে ফিরে ওর গানগুলি শুনতাম আর সিগারেট টানতাম। ও গেয়ে যেত ‘সঙ্গীতা তুমি চলে গেলে, ব্যথাটুকু রেখে গেলে।’ এই তো কিছুদিন আগে জুয়েল সঙ্গীতার মতো করে ব্যথাটুকু রেখে চলে গেল, যেখানে সবাই যায়।

তবে আজকের গানের গলায় একটু পরিবর্তন পেলাম, খুব মিষ্টি একটা গলা। চারদিকের ঘুটঘুটে অন্ধকারকে ভেদ করে প্রথমে আমাদের পাশে তারিনদের বাসার দিকে তাকালাম, ওখানে কেউ গাইছে কিনা। না, ওখানে কেউ না, জুয়েলের দরজাটা বন্ধ দেখলাম। সামনের বাবুল ভাইদের বাসায়তো কেউ গাওয়ারই কথা না। কারণ ও বাসায় কোনও শিল্পী নাই। বরং বাবুল ভাইয়ের রাগী বড় ভাইটা থাকেন তিনতলায়। রাগী এই কারণে বলছি যে, ওনারদের বাসার মর্মর পাথরে লেখা নামে একটা বানান ভুল ছিল, সেটা একদিন রাতে ওই বড় ভাইকে আমি বলেছিলাম এবং উনি আমার উপর খুব রেগে গিয়েছিলেন।

ওই বাসার আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে গেল, ১৯৯০ সাল। ওই ভাইয়ের ছোট মেয়েটা তখন ফাইভ সিক্সে পড়তো। আমরা তখন মাস্টার্স দিচ্ছি এবং সেকারণে আমরা চার ফ্রেন্ড একসাথে আমাদের ড্রইং রুমে থাকি। সারারাত পড়ি এবং সকালে পরীক্ষা দিতে যাই। মাঝে মাঝে বিকেলে একটু রেস্ট নেয়ার জন্যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাই। ওই সিগারেট খাওয়ার সময় যখনি দেখতাম ওই ছোট্ট মেয়েটা ওদের তিনতলার বারান্দায় আসতো, আমরা ওকে বলতাম, পড়তে যাও। ও পড়তে চলে যেত আমাদের কথা শুনে। এভাবে যখনি দেখতাম ওকে পড়তে যেতে বলতাম এবং ও চলে যেত পড়তে। এরকম একদিন ও এসেছে এবং আমরা বলেছি, পড়তে যাও, তখন হঠাৎ খুব রেগে ও বলে উঠলো, আমি পড়েছি, আপনারা পড়তে যান।

আমরা শুনে চমকে গেলাম এবং সত্যি আবার ফিরে এলাম পড়তে। এভাবে আমাদের পরীক্ষা চলছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম, মাঝে মাঝে একটা সুন্দরী মেয়ে, বয়স হবে ২০-২১ হবে, ওই ছোট্ট মেয়েদের বাসার বারাব্দায় আসে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। আমাদের খেয়াল করে, তারপর একসময় চলে যায়। আমরা নিজেরা আলোচনা করলাম হয়তো মেয়েটা ওই ভদ্রলোকের স্ত্রী এবং এও বললাম, দেখছস, কত কম বয়সী মাইয়া বিয়া করছে ওই লোকটা। এইটা একটা কাম করলো?

আমাদের রাগ হলো কোনো ধরনের কিছু করতে না পেরে। কারণ কোনও কিছু যদি বলি ওই বড়ভাই এসে হয়তো আম্মাকে বলে দিবে এবং কি লজ্জা পাব যে, একজন বিবাহিত মহিলাকে কিভাবে আমরা ইশারা দিলাম। যাই হোক, বহু কষ্টে কন্ট্রোল করলাম আমরা আমাদের। মাস ছয়েক পরে ওনারা বাসা ছেড়ে বিদেশ চলে গেল এবং যাওয়ার পরে আম্মার কাছে সুনতে পেলাম, ওই মেয়েটা ওই বড় ভাইয়ের বড় মেয়ে। কী যে আফসোস লাগলো আমাদের!

আবার আগের কথায় ফিরে আসি। গানের গলাটা ভিন্ন, একটু চিকন কিন্তু খুব স্মুথ। আরেকটু ভালো করে খেয়াল করে দেখি, গলাটা আমাদের বাসার নিচের তলা থেকে আসছে। দেরি না করে খুব সাবধানে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লাম যাতে আম্মা টের না পান। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসে দেখি, আমাদের বাসার সামনের ড্রয়িং রুম যেটাতে মন্তাজ ও রিপন থাকতো, সেটার রাস্তার দিকের দরজাটা খোলা এবং দরজার কাছে মাটিতে বসে গিটার হাতে রিপন গান গাচ্ছে। আমি অসম্ভব আশ্চর্য হয়ে গেলাম, এই ছেলে এত সুন্দর গায়! আমি গ্যারেজের কাছে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে নীরবে ওর পুরো গানটা শুনলাম। এক সময় ও শেষ করলো, আমি খুব সাবধানে উপরে উঠে এলাম, কেমন যেন লাগলো মনে মনে।

পরেরদিন সকাল বেলা রিপনদের ঘরে গেলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি গান করো কবে থেকে? রিপন হঠাৎ একটু থমকে গেল এবং নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ভাই বেশ আগে থেকেই গাই।
কোথায় শিখছ?
আমাদের একটা ব্যান্ড ছিল রাজশাহীতে, ওখানে আমি গান গাইতাম আর গিটার বাজাতাম।
তাই নাকি! কয়েকটা গান শোনাও।

রিপন লজ্জায় ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলা দিয়ে কয়েকটা গান শোনালো। ওদের ব্যান্ডের গান। ভালো লাগলো গানগুলি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যান্ড বুন্ড ফালায়া তুমি এইখানে কি করতেছ? রিপন বলল, ভাই আমাদের পরিবারে আমি বড় ছেলে। বাবা অসুস্থ, একটা কাজ খুঁজছিলাম। ইচ্ছা ছিল ঢাকায় কোনও একটা ব্যান্ডের সাথে টানাটানির কাজ নিবো। ঢাকায় এসে খবর পেলাম যে, আপনি লোক নিচ্ছেন। তাই চলে আসলাম আপনার কাছে।
আমি বললাম, তুমি কি আমাকে চিনতা আগে?
রিপন বলল, কি বলেন ভাই, আমিতো চিনেই আসছি আপনার কাছে, আমরা আপনাদের গান করিতো ব্যান্ডে।

আমার একধরনের ভাললাগা আর এক ধরনের খারাপ লাগা, দুটাই লাগলো এবং সেই দিন থেকেই ওকে ভিন্নভাবে দেখা শুরু করলাম। ও ঠিক মন্তাজের মতো চালাক ছিল না। ও প্রতিটা ইন্সট্রুমেন্ট খুব যত্ন নিয়ে হ্যান্ডেল করতো। ওকে আমি ইন্সট্রুমেন্ট যেকোনো সময় বাজানোর অধিকারও দিয়ে দিলাম, ও অসম্ভব খুশি হলো। চলতে থাকলো জীবন ওইভাবে। একদিনে আমার ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলো, আমার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসলো। দেশের সবকিছু গুটিয়ে প্রবাসে রওনা দিয়ে দিলাম। মন্তাজ, ফারুক এবং রিপনও বিদায় নিলো।

এরপর ২০০৩ ক্যানাডার পাট চুকিয়ে দিয়ে ফিরে গেলাম জন্মভূমিতে। আবার শুরু করে দিলাম মিউজিক। ২০০১ সালে আর্ককে অকেজো করে দিয়ে হাসান চলে গিয়ে নিজের ব্যান্ড তৈরি করে এবং সাথে আর্কের পুরো মেম্বার সেটআপটাও নিয়ে যায়। ফলে আর্ক একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে ধুলোয়। আমি আবার নতুন করে চেষ্টা চালাতে থাকি আর্ককে একটু দাঁড় করাতে, রেজওয়ান এবং নতুন একজন গায়ক মুনকে নিয়ে চেষ্টা চালাতে থাকি এবং একটা অ্যালবামও রিলিজ করি। তখন পঞ্চমকে পাই নাই। কারণ ও আগেই নতুন একটা ব্যান্ড তৈরি করে ওর নিজের মিউজিক নিয়ে বিজি ছিল।

এভাবে চলতে থাকে জীবন। ২০০৫ সালের দিকে হঠাৎ একদিন রিপন এসে হাজির। তখন আমার সাউন্ড কোম্পানি নাই। ও আমার কাছে একটা চাকরি চায়, জানায় খুব অভাবে আছে। আমি নিজেও তখন পল্লী বিদ্যুতায়নের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। তবুও আমার এক বসের কাছে ওর জন্য খুব তদবির করি, উনি জানান কোনও এক পল্লী বিদ্যুতায়ন সমিতিতে ঢুকিয়ে দিবেন। ঢাকায় ওর কোনও থাকার জায়গা ছিল না। তাই আমার বাসায় থেকে যেতে বলি, ও থেকে যায়।

একদিনের ঘটনা। একটা রেকর্ডিং সেরে রাতে বাসায় এসেছি। মানিব্যাগে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। ব্যাগটা ড্রইং রুমের পাশের কনসোল টেবিলের উপর রেখে গোসল করতে গিয়েছি। গোসল সেরে ভাত খেয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি। সকাল বেলা রেকর্ডিঙে যাওয়ার আগে মানিব্যাগটা নিয়ে পকেটে ঢোকানোর আগে খুলে দেখি ওখান থেকে ৩০০০ হাজার টাকা নাই। মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। আমার স্ত্রী টিনাকে জানাই, ও কাজের মেয়ে এবং মহিলাটাকে জিজ্ঞাসা করে, ওরা না করে। ও এবং আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, বুঝতে পারি না তাহলে কে নিলো! আম্মাও জিজ্ঞাসা করেন ওনাকে দেখাশোনা করে যে মেয়েটা, তাকে। সেও নেয় নাই জানিয়ে দেয়। আমরা পুরা কনফিউজড হয়ে যাই। এক রাতের ব্যাপার, এর মধ্যে কোথায় যাবে টাকাটা? টিনা বলে, তুমি কি একটু রিপনকে জিজ্ঞাসা করবা?

অনেক দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞাসা করি, রিপন তুমি কি এই কনসোল টেবিলে কোনও টাকা দেখছ? আমি আমার মানিব্যাগ এখানে কালরাতে রাখছিলাম। ব্যাগে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ছিল। কিন্তু এখন তিন হাজার টাকা পাচ্ছি না। রিপন বলল, না ভাই, আমিতো দেখি নাই।

ওর এভাবে সরাসরি না করে দেয়াটা মেনে নিতে পারলাম না। কেন যেন সন্দেহ লাগলো, হয়তো ওই নিয়েছে। কিন্তু ভয়ে লজ্জায় বলতে পারছে না। আম্মার কাজের মেয়ে মনোয়ারা এসে বললো, ছোট ভাইয়া, ওই রিপনই নেছে। ভয়ে কতি পায়রতেছে না। ঘাপান দিলি পরে সব কয়ে দিবি।

আমাদের সন্দেহতে মনোয়ারার কমেন্টটা বেশ একটা সাপোরটিং হিসাবে কাজ করলো। আমার আর ইচ্ছা করলো না জিজ্ঞাসা করতে। তবে ওকে বললাম, রিপন, তুমি একটা কাজ করো, কাল তুমি চলে যাও দেশে। চাকরির কোনও খবর হলে আমি তোমাকে ডেকে পাঠাবো। রিপন মুখটা কালো করে মাথা নিচু করে থাকে এবং মিনিট তিনেক পরে বলে, আচ্ছা ভাই, আমি চলে যাব কাল।

আমি আর কিছু বলি নাই। পরের দিন সকালে রিপন ওর জিন্সের প্যান্ট আর চেক শার্টটা পরে আমার কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায় এবং যাওয়ার সময় মাথা নিচু করে অনেক কান্নাকাটি করে তবে মুখে আর কিছুই বলে না। যারা খুব অসহায়, তাদের একটা সময় আর কিছুই বলার থাকে না চোখ থেকে জল ঝরানো ছাড়া।

দেশে থাকার অনেক চেষ্টা করার পরেও কেন যেন আর থাকা হয় না। আমরা ক্যানাডা চলে আসার জন্যে মনস্থির করি এবং সময় চলে আসে ফিরে আসার। আবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে মনটা একেবারে ভেঙে যায়। মন খারাপ নিয়ে উঠে পড়ি সোনালি চিলের ডানায়। সোনালি চিল পিঠে করে উড়িয়ে নিয়ে চলে আসে সোনালি সূর্যের দেশে। যেখানে তিন হাজার টাকার মতো কত টাকাই হিসাববিহীন খরচের খাতায় মনে করে লেখাও হয় না। অথচ রিপনের বেলায় ওর মতো গরিব মানুষের আত্মসম্মানে আঘাতের জন্য আমাদের মতো অমানুষদের মুহূর্তে আরও অমানুষ করে দেয়। ওর সেদিনের মাথা নিচু করে কাঁদতে কাঁদতে চলে যাওয়াটা আজও ভুলতে পারিনি, কোনোদিনও ভুলতেও পারবো না। আরও খারাপ লেগেছিল যখন ও চলে যাওয়ার ক’দিন পরে ওর খালা ফোন করে বলেছিলো যে, ও টাকাটা নেয় নাই। তবে সবচাইতে খারাপ লাগার বিষয়টা ঘটেছিল সেদিন যেদিন আমি আমার মানি ব্যাগের তিন হাজার টাকার হিসাবটা ও চলে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন পর মিলাতে পারি। যেদিন রাতে ঘটনাটা ঘটে, সেদিন স্টুডিওতে একটা গানের সেতার এবং বাশি রেকর্ড করেছিলাম এবং বাদকদের পেমেন্ট হিসাবে টাকাটা রেকর্ডিং শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফেরার ঠিক আগেই পে করি এবং ভুলে যাই।

ক’দিন পরে যখন গানটা মিক্স করতে যেয়ে বাঁশি ও সেতার বাজানো অবস্থায় পাই তখন রিকালেক্ট করতে পারি যে, সেদিন আমি ওনাদের পেমেন্ট করেছিলাম তিন হাজার টাকা। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়। রিপনকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পারিনি, ও রাজশাহীতে ছিল না তখন। তবে আমাদের ওই জ্বালার দশ শতাংশ ক্যানাডা আসার ছয় মাস পরে কমেছিল, যেদিন প্রথম শুনেছিলাম আমার প্রাক্তন পল্লী বিদ্যুতের বসের কাছে যে, ওর কোনও একটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরি হয়েছে।

আজ প্রায় ১৫ বছর পরে ওকে খুব মনে পড়ছে। রিপন তুমি যদি কোনোদিন যদি এই লেখাটা পড়ো, আমাকে মাফ করে দিও, তুমি আসলেই ওই টাকাটা নাও নাই। আমারই ভুল ছিল।