এবার বিশ্বকাপ হবে আমাদেরই

শিমুল বাশার

প্রকাশিত : মে ২৬, ২০১৯

২০১৯ সালে এশিয়ার কোনো টিমের যদি ওয়ার্ল্ডকাপ পাবার যোগ্যতা থেকে থাকে তবে সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ টিমের। কে, কিভাবে যোগ্যতার বিচার করে, তা আমি জানি না। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সেরা ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ছোটবেলায় যাকে আপনারা ডাকতেন কৌশিক নামে। কৌশিকের জন্য ক্রিকেটের এতটা পথ পাড়ি দেয়া সহজ ছিল না, তা আপনাদের সবারই জানা। মাঠে কৌশিক আছে মানেই শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত জয়ের অদম্য মনোবল জাগ্রত আছে। সেই কৌশিকই এখন আমাদের ক্যাপ্টেন।

গেল ১৯ বছর ধরে ওয়ানডে খেলছেন। দেশকে পাইয়ে দিয়েছেন একের পর এক জয়। টুর্নামেন্ট জয় অধরা ছিল। ওয়ার্ল্ড কাপের আগে ধরা দিয়েছে সেটিও। অভিজ্ঞতার বিচারে মাশরাফি বিন মর্তুজার ধারের কাছে কেউ আর নেই। বলেন তো এই মুহূর্তে পৃথিবীর সেরা অলরাউন্ডার কে? আমাদের বদ সাকিব, সাকিব আল হাসান। যার গুণের ছায়ায় সব দোষ ঢেকে যায়। পৃথিবীর কোনো দলের কোনো প্লেয়ারকে তোয়াক্কা করার ছেলে সে নয়। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং কোন বিভাগে তাকে এভয়েড করা যায় বলেন? সাকিব মাঠে মানে এই মুহূর্তের ওয়ার্ল্ড স্বীকৃত সেরা প্লেয়ারটা প্রতিপক্ষের প্লেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কাউকে পাত্তা দেয়ার টাইম আছে?

আমার দৃষ্টিতে তামিম ইকবালের মতো ওপেনার আর কোনো দলের নেই। তার কাউন্টি খেলার অভিজ্ঞতাও আছে। একবার তো ইংলিশদের এক মাঠে ছক্কা মেরে গ্যালারি ফুটা করে দিয়েছিল! এই মুহূর্তে আছেন সেরা ফর্মে, বয়সের সাথে সাথে পরিপক্কতা এসেছে খেলার ধরনেও। আসেন এবার মিডল অর্ডার। মুশফিক! এত আইডিয়াল ক্রিকেটার পৃথিবীতে আর একজনও নাই। যেকোনো দলের মিডল অর্ডারে যদি মুশফিকের মতো একজন নির্ভরযোগ্য প্লেয়ার থাকে তবে তাদের আর কিছু লাগে না। রিয়াদ? রিয়াদ যে কী করতে পারে তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে কিছুই বোঝার উপায় নাই। মনে হবে এই প্লেয়ারতো একটু পরেই আউট হয়ে যাবে। এটার নামই ক্যামুফ্লাজ।

দলকে সে যে কোথায় নিয়ে যেতে পারে আগের বিশ্বকাপে বিশ্ববাসী অবাক হয়ে তা দেখেছে। যখন মিডল অর্ডারে মুশফিক রিয়াদ, সাকিব থাকে তখন এটা একটা পারফেক্ট প্যাকেজ হয়ে যায়। আসেন এবার সৌম্যকে নিয়ে ভাবি। যেদিন ক্ষ্যাপবে সেদিন বোলাররা চোখে আর কিছু দেখতে পাবে না। ফিল্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে রান হতে থাকবে। লোয়ার অর্ডার? সাব্বির, মোসাদ্দেক যে আগুন তা সবার জানা। মোসাদ্দেক যে নির্ভার হয়ে গলা পর্যন্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপে নামছে তা ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ফাইনাল ম্যাচে আপনারা দেখতে পেয়েছেন নিশ্চয়ই।

এবার আসি বোলারদের কথায়। রুবেল একটা পিওর ফাজিল। আমার মতে ফাস্ট বোলার ফাজিল না হলে হয় না। রুবেল যেকোনো সিচুয়েশানে দলকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। বলকে একটা চুম্মা দিয়ে ছেড়ে দিবে, ব্যাটসম্যান পেছনে তাকিয়ে দেখবেন, স্টাম্প নাই। রুবেল যে কী ইংল্যান্ড সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল গেল বিশ্বকাপে। এখন সে আরো পরিণত। ইয়র্কার দিতে পারেন প্রায় প্রতি বলেই। মুস্তাফিজ আমাদের কার্টার মাস্টার। ছন্দ পেয়ে গেলে খবর আছে সবার! সবশেষ ভরসার নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা, বোলিংয়ে রান দেয়ার বিষয়ে খুবই কৃপণ। ইংল্যান্ডের কন্ডিশানে এই কৃপণতাই হতে পারে দলের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। সবাই ভাবছেন এভারেজে দলগুলো সাড়ে তিনশো রান করবে। বাংলাদেশ যখন প্রতিপক্ষ তখন এই হিসাবটা শিকেয় তুলে তারপর খেলা দেখতে বইসেন।

স্পীনে সাকিব, মিরাজ, রিয়াদ রান মেশিন স্লো করে দিবে আমি কনফার্ম। সবকিছুর ঊর্ধ্বে আছে আমাদের দলটার দীর্ঘদিন একসাথে খেলার অভিজ্ঞতা। সত্যিকারের দল হয়ে খেলার দীর্ঘদিনের চর্চা, মাঠে আনন্দ বেদনার দলগত এপ্রোচ। আছি আমরা সাপোর্টারেরা.. সুদিনেও আছি, দুর্দিনেও আছি দলের পাশে। এবার বিশ্বকাপ হবে আমাদেরই। ছবিও কথা বলে, দেখেন কার দিকে সবাই তাকিয়ে...

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী