ওমর সাঈদের আত্মকথন ‘ত্রাণ দেয়ানেয়া এবং আনন্দ’

প্রকাশিত : মে ১০, ২০২০

দুস্থ কিম্বা বিপদগ্রস্থ পশুপাখি ও মানুষের মাঝে ত্রাণ কিম্বা সাহায্য দেয়ার আনন্দ এ জীবনে অনেক উপভোগ করেছি। হয়তো ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেয়ার সৌভাগ্য খুব সামান্য হয়েছে... তা নেই বললেই চলে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে অথবা স্বেচ্ছাসেবী হয়ে অনেক নিয়েছি সেই অহংকারময় পৈশাচিক চরম আনন্দ... না, আপনি যদি প্রমাণ চান তবে দিতে পারব না সত্যিই। কারণ প্রচারের উদেশ্যে তার কোনো প্রমাণ কখনোই রাখা হয়নি।

জিজ্ঞেস করতে পারেন, তবে আজ কেন বলছেন সে কথা?  বলছি এই কারণে যে, এক মাস আগে আমি যে বাসায় ভাড়া থাকি সেখানে একটা সামাজিক সংগঠনের (দুঃখিত, সংগঠনের নামটি মনে পড়ছে না) একজন লোক এসে বাসার সকলের লিস্ট করে নিয়ে গিয়েছিল সাহায্য প্রদান করার জন্য। আমিও সেখানে নাম দিয়েছিলাম। মাঝখানে তাকে মনে মনে গালিও দিয়েছি অনেক, কী করবো বলুন? লিস্ট করে নিয়ে যাওয়ার পরে কোনো খবর নেই। হঠাৎ করেই গতকাল সেই ত্রাণ বাসায় এসে পৌঁছে দিয়ে গেল।

আমি অদ্ভুত এক শিহরণ উপভোগ করলাম... এই এক অন্যরকম আনন্দ। এতে কোনো অহংকার নেই... কোনো গৌরব নেই। খুবই সহজ সরল এক আনন্দ। সত্যিকারের আনন্দ এইটাই বোধহয়, যা ত্রাণ দেয়ার মাঝে কোনোদিন খুঁজে পাইনি। মনে হচ্ছে, একটা চলমান যুদ্ধের মাঝখানে বিলম্বিত দুপুরে হঠাৎ সাইরেন গোলা বারুদের শব্দ থেমে গিয়ে গোধূলিবেলায় ওস্তাদ বিসমিল্লাহ্‌ খানের সানাইয়ে বেজে উঠেছে প্রিয় রাগ ‘মধুবন্তী’। আমি ওই বস্তাটা নিয়ে ঠোঁটে ক্যাবলা একটা হাসি খেলিয়ে ঘরে ঢুকেই খুলে দেখলাম তাতে কেজি পাঁচেক চাল, এক কেজি মোটা মুসুরের ডাল (ইন্ডিয়ান) আর ‘সুপার ফ্রেস’ কোম্পানির একটা এক লিটারের ফার্টিফাইড সয়াবিন তেল রয়েছে। আমি এই পণ্যগুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে আনন্দটা খুব গিলেছি। পরক্ষণেই মনে হলো, আমি তো রোজা! এত আনন্দ একসাথে গিলতে থাকলে হয়তো রোজা হাল্কা হয়ে যাবে...