কণ্ঠশিল্পী শচীন দেব বর্মণের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩১, ২০১৯

কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেব বর্মণের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জঙ্গীত জগতে তিনি ‘শচীনকর্তা’ নামে পরিচিত।

একশোরও বেশি চলচ্চিত্রে তিনি সুরারোপ করেছেন। সুরকার হিসেবে তার প্রথম ছবি ‘রাজগী’। ১৯৭০ ও ’৭৪ সালে জাতীয় পুরস্কার, ১৯৬৯-এ পদ্মশ্রী পেয়েছেন। কিছুটা অনুনাসিক কণ্ঠস্বরের জন্য তিনি শ্রোতাদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। প্রায় একশো বছরেও বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে তার কালোত্তীর্ণ গানের আবেদন এতটুকু ম্লান হয়নি।

১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শচিনকর্তা ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। তৎকালীন ত্রিপুরার অন্তর্গত কুমিল্লার রাজপরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

১৯২০ সালে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯২২ সালে ওই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-তে ভর্তি হন। ১৯৪৪ সাল থেকে স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করতে শুরু করেন।

ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার জন্য কোলকাতা গেলে উস্তাদ বাদল খান, আলাউদ্দীন খান, আব্দুল করিম খান, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় আর মান্না দে’র কাকা দৃষ্টিশক্তিহীন শিল্পী কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র কাছে তালিম নেয়ার সৌভাগ্য হয় তার। কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র শিক্ষা শচীন কত্তার সফল শিল্পী, সুরস্রষ্টা আর সঙ্গীত পরিচালক হয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।

হিন্দি ছবির অমর কিছু গানের সুর তিনি লোকগানের বিশাল ভাণ্ডার থেকেই নিয়েছিলেন। মোহাম্মদ রফির গাওয়া ‘তু কাঁহা ইয়ে বাতা’, ‘তেরে ঘরকে সামনে’, ‘দিলকা ভঁওয়ার কারে পুকার’সহ অসংখ্য গানে বাংলার লোকগানের প্রভাব খুব স্পষ্ট। কিশোর কুমারের ‘রূপ তেরা মাস্তানা’ আর নিজের গাওয়া ‘কাহেকো রোয়ে, চাহেযো হোয়ে’র মতো তুমুল জনপ্রিয় গানের সুরেও আছে লোকগীতির ছোঁয়া।

রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি বা বাংলার অন্য কোনো গানের সুন্দর সুর নিয়েও হিন্দি ছবির গানকে সমৃদ্ধ করেছেন শচীন দেব বর্মন। এর মধ্যে নজরুলগীতি ‘অরুণ কান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ অবলম্বনে মান্না দে’র গাওয়া ‘পুছো না ক্যায়সে ম্যায়নে র্যা য়েন বিতায়ি’ (ফিল্ম: মেরি সুরত তেরি আঁখে, ১৯৬৩) তো মুম্বাই ফিল্ম ইতিহাসের সেরা গানগুলোর মাঝেই জায়গা করে নিয়েছে।

একজন সেরা পেশাদার সঙ্গীত পরিচালকের মাঝে যেসব গুণ না থাকলেই নয় তার সবই ছিল শচীন দেব বর্মনের। নিজে ক্লাসিক্যালে তালিম নিয়েছেন দীর্ঘদিন। ফলে শিল্পী হিসেবে নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে, ১৯৩৪ সালে অল বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক কনফারেন্সে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে প্যারালিটিক স্ট্রোক হয়ে কোমায় ছিলেন পাঁচ মাস। এরপর ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর তার প্রয়াণ হয়।