করোনার টিকা আসছে আজ

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২১, ২০২১

ভারত থেকে আজ বৃহস্পতিবার আসছে বহুল প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা। উপহার হিসেবে প্রথমেই বাংলাদেশ পাচ্ছে ২০ লাখ ডোজ টিকা। এগুলো আসার পর পরই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে।

ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকা আজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। এছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তিন কোটি ডোজ কিনেছে বাংলাদেশ সরকার।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব টিকা গ্রহণ করবেন। এরপর বেলা ১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ লাখ টিকা হস্তান্তর করবেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকশিনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

প্রথম দিন ২০ থেকে ২৫ জনের ওপর এ টিকা প্রয়োগ করা হবে। এরপর রাজধানীর চারটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপরও প্রয়োগ করা হবে এবং রাখা হবে এক সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে। পর্যবেক্ষণে ইতিবাচক সংকেত পাওয়া গেলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশজুড়ে শুরু হবে টিকাদান কর্মসূচি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, “কোভিড চলাকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যেভাবে স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রচার করা হয়েছে, একইভাবে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানের সব তথ্য মানুষের কাছে দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসচিব মো. আবদুল মান্নান বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, টিকাদানের জন্য একটা সম্ভাব্য দিন হচ্ছে ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে শুরু হবে এর কার্যক্রম। প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকদের একজন করে প্রতিনিধিকে টিকা দেয়া হবে। এভাবে সেদিন ২০ থেকে ২৫ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হবে। এরপর রাজধানীর কোভিড ১৯ ডেডিকেটেড চারটি হাসপাতালের পাঁচ থেকে ছয়শো স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দিয়ে সাতদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপরই সারাদেশে টিকার প্রয়োগ শুরু হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা-উপজেলা ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট পুনে থেকে দিল্লি এয়ারপোর্ট হয়ে টিকা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। উপহারের টিকা বিমানবন্দর থেকে মহাখালীর ইপিআই সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে পুলিশি মহড়াসহ। টিকা সংরক্ষণে ইপিআই সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখান থেকে টিকা দেশের বিভিন্ন জেলার সংরক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। এরপরই ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার সাত হাজার ৩৪৪টি ‘দল’ গঠন করেছে। প্রতিটি দলে দুজন নার্স বা পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (যারা টিকা দেবেন) চারজন স্বেচ্ছাসেবী থাকবে। অর্থাৎ টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালসহ ঢাকায় আপাতত তিনশো কেন্দ্র থাকবে, যেখানে মানুষ এসে টিকা গ্রহণ করবে।

ঢাকার বাইরে প্রত্যেক জেলায় চারটি, উপজেলায় দুটি এবং মেডিক্যাল কলেজে ছয়টি ‘দল’ টিকা প্রয়োগের কাজে নিয়োজিত থাকবে। প্রাথমিকভাবে ইউনিয়নে টিকা যাবে না। শুধু জেলা, উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে।

টিকা প্রয়োগসংক্রান্ত পরিকল্পনা নিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজিবিষয়ক) জুয়েনা আজিজের সভাপতিত্বে সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজিবিষয়ক) জুয়েনা আজিজ বলেন, “টিকা দেশে এলে সেটিকে যথাযথ নিরাপত্তার মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হবে এবং এটি প্রদানে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম না হয়, সে ব্যাপারে সরকার কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হবে।”

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।