দুলদুল (ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের ঘোড়া)। এঁকেছেন শিল্পী রনি আহম্মেদ।

দুলদুল (ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের ঘোড়া)। এঁকেছেন শিল্পী রনি আহম্মেদ।

কারবালার শাহাদাৎ, ফাতিমার কোরবানি এবং আল্লাহর প্রেমের খেলা

খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আশুরার দিন সাত রকমের খাদ্য তৈরি করে বিতরণ করবে, প্রতিটি দানার জন্য নেকি লেখা হবে এবং সেই অনুপাতে পাপ মোচন হবে। আর যে ব্যক্তি আশুরার দিন রোজা রাখবে তার আমলনামায় এক বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে।

হযরত বললেন, যে রাতে খাতুনে কিয়ামত বিবি ফাতিমা তুয যোহরা সালামাতুল্লাহি আলাইহা মাতৃগর্ভে প্রবেশ করবেন তার একদিন আগে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম একটি বেহেস্তের আপেল এনে আকা হযরত মুহাম্মদ ﷺ কে বললেন, এই আপেলটি আপনি ﷺ একা খাবেন, অন্য কাউকে এর ভাগ দেবেন না। আকা হযরত মুহাম্মদ ﷺ সেদিন জিব্রীল আলাইহিস সালামের কথা রক্ষা করেছিলেন। সেই রাত্রেই উম্মুল মুমিনিন খাদিজা رضي الله عنه এর গর্ভে হযরত ফাতিমা সালামাতুল্লাহি আলাইহার দেহ তৈরি শুরু হয়।

বিবি ফাতিমা সালামাতুল্লাহি আলাইহার পরবর্তী ঘটনা সকলেরই জানা আছে। তাঁর নয়নমণি, কলিজার ধন কারবালাতে কিভাবে অনাহারে পিপাসার্ত অবস্থায় জালেমদের হাতে শহিদ হয়েছেন তাও আপনারা জানেন। আমি ‘ছির’ কিতাবে লেখা দেখেছি, শিশুকালে আমিরুল মুমিনীন হযরত হাসান ও হুসাইন আলাইহিস সালাম যখন দোলনার মধ্যে কাঁদতেন এবং বিবি ফাতিমা সালামাতুল্লাহি আলাইহা কাজে ব্যস্ত থাকতেন তখন জিব্রীল আলাইহিস সালামের প্রতি আল্লাহর হুকুম হতো তুমি ফাতিমা সালামাতুল্লাহি আলাইহার ঘরে যাও এবং সাহেবজাদাদের দোলনা দোলাও যাতে তারা আরামে ঘুমাতে পারে। আদেশ পাওয়া মাত্র হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম হলকুম পালনে কর্মতৎপর হয়ে উঠতেন।

হযরত ইমাম হুসাইন সালামাতুল্লাহি আলাইহির শাহাদাতের দিন সমস্ত অভ্যন্তরীন জগতে অমানিশার কালো ছায়া নেমে এসেছিল। আকাশে ঘনঘটা, বিদ্যুতোর মাতম, গজবের ফেরেস্তারা দরবারে এলাহীতে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান শুধু হুকুমের অপেক্ষা। আদেশ পেলেই শত্রুবাহিনীকে সমূলে বিনাশ করে দেবে। কিন্তু ইলাহীর ইচ্ছা ছিল অন্যরূপ।

রাব্বুল আলামিন ফেরেস্তাদের বললেন, তোমরা শান্ত হও, নিশ্চুপ হও, প্রেমের খেলা অবলোকন করো। এরা আমার অতি প্রিয়, অতি আপন, প্রকৃত বন্ধু। তোমরা অপেক্ষা করো এবং দেখো আশেক মাশুকের খেলা। আজকের ঘটনার শেষ হবে কিয়ামতের দিন। সেদিন হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম জালেমদের পরিণতি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই ইনসাফ হবে।

কী আশ্চর্য ঘটনাই না সেদিন কিয়ামতের মাঠে ঘটবে। পবিত্র খান্দানের পবিত্র সন্তান হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তাঁর শত্রুদের মাফ করে দেবেন এবং নাজাতের জন্যও সুপারিশ করবেন। কিন্তু ইসলামের দুশমন এজিদ বাহিনী সেদিন নাজাত পাবে না। তারা দোজখের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের মুক্তির সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

কিয়ামতের দিন কারবালার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত জালেম ও ইসলামের দুশমনদেরকে হযরত ফাতিমা সালামাতুল্লাহি আলাইহার সামনে হাজির করা হবে এবং এদের বিচার করতে বলা হবে। কিন্তু সে মহা জননী সেদিন জালেমদের বিচার করবেন না বরং মাফ করে দেবেন।

এত গেল মহান হৃদয়ের কথা ‘প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা’। কিন্তু আল্লাহর আইন আছে, বিধান আছে, নীতি আছে। কারবালার শহিদদের রক্ত কি বৃথা যাবে? না, যাবে না। আল্লাহতাআলার ভাবগম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসবে, ‘এই ফাতিমা, আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করে কারবালার শহিদানের রক্তের বিনিময়ে তোমার পিতার সমস্ত গোনাহগার উম্মতদের ক্ষমা করে দিলাম।’

ইলাহির এই আওয়াজ শুনে মা ফাতিমা সালামাতুল্লাহি আলাইহা আস্বস্ত হবেন। তাঁর মন আনন্দে ভরে উঠবে। কিয়ামতের ময়দান হতে বিষাদের ছায়া সরে যেয়ে খুশির হিল্লোল বইবে। হযরত রিসালাতে পানাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র চেহারা মোবারক আনন্দোজ্জ্বল দেখাবে।

গ্রন্থসূত্র: রাহাতুল মুহিব্বীন

বয়ান: মাহবুবে এলাহী খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি। বয়ানের সময়কাল: ৫ মহররম, ৬৯১ হিজরী।