গুজব ছড়িয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মৃতদেহে আগুন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩০, ২০২০

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে শহিদুন্নবী জুয়েলকে (৩৭) পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছোড়ে পুলিশ। স্থানীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সঙ্গী সুলতান যোবাইয়ের আব্দারকে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল।

বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিকেল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এদিকে নিহত জুয়েলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কয়েক বছর আগে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের গ্রন্থাগারিক পদ থেকে চাকরিচ্যুত হন। নিহত জুয়েল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বলেও জানা গেছে।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাবের সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছে।

পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্ত বলেন, “তুচ্ছ ঘটনায় বিতর্ক থেকে গুজব ছড়িয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ। স্থানীয় জনতার ছোড়া পাথরের আঘাতে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। জনতার হাতে আটক গুরুতর আহত সুলতান যোবায়েরকে পুলিশ হেফাজতে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তার অবস্থান জানানো যাচ্ছে না।”

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।