জামায়াত এবং বদা শুক্কুরের পোলা

রহমান মুফিজ

প্রকাশিত : মে ০৩, ২০২০

অনেক আগে শোনা একটা চুটকির কথা মনে পইড়া গেল। চট্টগ্রামের কোনও এক এলাকার এক লোকের নাম ছিল শুক্কুর বক্স। যৌবনে এক অসহায় মাইয়ারে রেপ করতে যাইয়া ধরা খাইছিল। ক্ষুব্ধ লোকজন তার পুরুষাঙ্গে ইট ঝুলায়া সারা গ্রাম হাঁটাইছিল। চিটাগাংয়ে পুরুষাঙ্গরে কয় `বদা` বা `বোইদা`। শুক্কুরের বদায় ইট ঝোলানোর ঘটনাটা বহুদিন লোকেদের মুখে মুখে ঘুরছে।

ঝুলন্ত ইটের চাপে নাকি তার বদাটা প্রায় এক হাত লম্বা হয়া গেছিল। এর পর থেইকা শুক্কুরের নতুন নাম হইছিল `বদা শুক্কুর`। পরের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও তারে বদা শুক্কুর নামেই চিনতো। তাদের অনেকে হয়তো বদা শুক্কুরের নামের শানে নজুলও জানত না। তো প্রচলিত আছে, বদা শুক্কুর দুই নাম্বারি করে অনেক পয়সার মালিক হইছিল। কিন্তু ব্যাপক দান-খয়রাত কইরা, মসজিদ-মাদ্রাসা বানাইয়াও পরিচয় থেইক্কা বদা শুক্কুর নামটা মুছতে পারতেছিল না। সেই নাম কাটানোর লাইগা বদা শুক্কুর হজ করলো।

সাত গ্রাম ডাইকা, মেজবান খাওয়াইয়া মোল্লাদের দিয়া লোকজনের উদ্দেশে বলাইলো— যত দোষই করুক, আল্লার বান্দা মুসলমানদের নামরে বিকৃত কইরা ডাকা গোনাহের কাজ। আর এর মধ্যে যেহেতু শুক্কুর সাহেব হজ কইরা আসছেন তিনি এখন পুত-পবিত্র মানুষ। তারে বদা শুক্কুর নামে ডাকা যাবে না। আজ থেইক্কা উনারে সম্মান কইরা হাজী শুক্কুর বইলা ডাইকেন।

লোকজন মেজবান খাইয়া, ওয়াজ শুইনা মোল্লাদের কথায় হাঁ বোলাইতে বোলাইতে, মাথা দুলাইতে দুলাইতে, দাঁতে খিলাল চালাইতে চালাইতে যার যার বাড়ি ফিরতেছিল। সিল। পথিমধ্যে অন্য লোকজন হয়তো জিগাইছে, কি মিয়া, কইত্তে আইতাছেন? অমনি উত্তর আসছে, বদা শুক্কুরের মেজবান খায়া আইতেছি।

তো মেজবান খাওয়াইয়া, আলেম লোকদের দিয়া ওয়াজ শুনাইয়াও লোকের মুখে লাগাম দিতে না পারার কষ্ট বেচারা কোথাও রাখতে পারে নাই। এর মধ্যে তার ঘরে জন্মাইছে এক ফুটফুটে ছেলে। সে চিন্তায় পইড়া গেল, এই সন্তান কী পরিচয়ে বড় হবে? তার সন্তানের নামের আগে-পরে তো ঠিকই `বদা শুক্কুরের পোলা` যোগ কইরা দেবে লোকজন। এই সম্ভাবনা রদ করার জন্য সে বুদ্ধি বাইর করল। তার ছেলের নাম রাখল `আল্লাহ বক্স`। তার বিশ্বাস, নিশ্চয়ই ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আল্লাহ নামের আগে-পরে অশ্রাব্য কোন শব্দ যোগ করবে না। কেমনে করবে? আল্লাহ বদা শুক্কুরের পোলা— এইটা বলতেই তো বুক কাঁপার কথা মানুষের।

এর পরে এই গল্পটা কোথায় গিয়ে শেষ হইছিল জানা নাই। কিন্তু জামায়েতে ইসলাম নামের দলটা ওইখান থেইকা প্রেরণা নিয়া এই গল্পের যে শেষ টানবে সেইটা ভাইবা চমৎকৃত হইতেছি। স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত এই দল, যারা বাংলাদেশ নামের দেশটাই কখনো চায় নাই, সেই দলের নতুন প্রজন্মের লোকজন নতুন দল নিয়া আসছে। দলের নাম দিছে `আমার বাংলাদেশ`! কী চতুর, কী ধূর্ত আর কী ইনোভেটিভ ব্যাপার! শুইন্যাই ভাল্লাগতেছে, না?... নাকি বদা শুক্কুরের পোলা আইছে— এইটা ভাইবা গা গুলাইতেছে?

লেখক: কবি ও গণমাধ্যমকর্মী