জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের আজ ১২৩তম জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জুলাই ৩০, ২০২০

জ্ঞানতাপস, জাতীয় অধ্যাপক ও দাবাগুরু কাজী মোতাহার হোসেনের আজ ১২৩তম জন্মদিন। ১৮৯৭ সালের ৩০ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে নানার বাড়িতে তার জন্ম। পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার পাংশা থানার বাগমারা গ্রামে।

শিক্ষাজীবনে ১৯১৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ পরীক্ষায় বাংলা ও আসাম জোনে প্রথম স্থান দখল করে মাসিক ত্রিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২১ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান দখল করে এমএ পাস করেন। ওই বছর কেউ প্রথম শ্রেণি পাননি।

এমএ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ডেমোনেস্ট্রেটর পদে চাকরিতে যোগ দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ। তারপর এমএ পাস করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার পদে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন ১৯৩৮ সালে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাধক প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আগ্রহ ও পরামর্শে কলকাতায় ড. প্রশান্তচন্দ্র মহলনবীশের অধীনে স্ট্যাস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে সংখ্যাতত্ত্ব বিষয়ে লেখাপড়া করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব পড়ানোর ভার নেন এবং সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগ ও ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

দেশে সংখ্যাতত্ত্ব পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে তিনিই ১৯৫০ সালে ‘ডিজাইন অফ এক্সপেরিমেন্টস’ বিষয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। কাজী মোতাহার হোসেন উদ্ভাবিত পদ্ধতি ‘হোসেইনস্ চেইন রুল’ নামে অভিহিত। ১৯৫৪ সালে তিনি ‘প্রফেসর’ পদ লাভ করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ‘ডিন’ ছিলেন। ১৯৬৪ সালে কাজী মোতাহার হোসেন সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

পরে তাকে ‘সুপারনিউমেরারি প্রফেসর অব স্ট্যাটিস্টিক’ পদে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইএসআরটি) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন এবং ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রফেসর এমিরিটাস’ পদে নিযুক্ত করা হয়। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ (ডিএসসি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৭৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় অধ্যাপক’ এর মর্যাদা দেয়া হয়।

কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু। দাবাগুরু মোতাহার হোসেন ১৯২৯ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত একনাগাড়ে প্রায় ৩০ বছর অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব পাকিস্তানে একক চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। সাহিত্য জগতেও তিনি ছিলেন সর্বজনপ্রিয় এক নাম। অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার দাবা খেলার সাথি ছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য একদিক। ড. কাজী মোতাহার হোসেন নজরুল সম্পর্কে অনেকগুলো প্রবন্ধ ও একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

তিনি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত তার একমাত্র প্রবন্ধ গ্রন্থে ‘সঞ্চরণ’ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়েরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। ব্যক্তিজীবনে তিন কন্যা ও দুই পুত্রের জনক কাজী মোতাহার হোসেন। পুত্র-কন্যাদের প্রায় সকলেই জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সনজীদা খাতুন, কাজী আনোয়ার হোসেন জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র রচয়িতা, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন রবীন্দ্রসংগীতের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এবং প্রয়াত কনিষ্ঠ পুত্র কাজী মাহবুব হোসেনও অনুবাদ সাহিত্যে সুপ্রতিষ্ঠিত।

১৯৮১ সালের ৯ অক্টোবর ৮৪ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন। কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একাধারে বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সঙ্গীত, দাবা, বিভিন্ন সংগঠনের সংগঠক। মুক্তবুদ্ধি আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোধা।