ডায়রিয়া, কলেরা ও ডেঙ্গুর মতো করোনার তকদির

শিমুল বাশার

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৪, ২০২০

লকডাউন মানাতে দায়িত্ব নিয়ে আর কেউ এগিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। একটা দেশের চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার চিত্র রাতারাতি পাল্টে ফেলা সম্ভব হয় তখনই যখন শতভাগ কন্ট্রোল থাকে। চালচোর, তেল চোরের এ সোসাইটিতে সেটা যে কতটা সম্ভব তা বুঝতে গভীর জ্ঞানের দরকার হয় না। সুতরাং চিকিৎসা সেবা আগে যেমন পাইতেন আগামীতেও তেমনই পাবেন, তবে খরচা লাগবে।

আচ্ছা, গাইনি চিকিৎসক করোনার চিকিৎসা দেবে, এমন আশা করেন? একজন ডেন্টিষ্টও কিন্তু চিকিৎসক তার কাছে করোনার চিকিৎসার জন্য ছুটে যান... আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাত করোনা মোকাবিলার জন্য বানানো এক সাজানো সুন্দর বাগান? তাহলে?

সংক্রামক ব্যামো এমনই এক জিনিস এটার নিয়ন্ত্রণে যেতে হলে ওই ইনস্টিটিউটের হাতে রাষ্ট্রীয় অনেক ক্ষমতাই থাকতে হবে অথবা তাদের মতামত নিয়ে রাষ্ট্রকে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। ইউনিফায়েড অ্যাকশনে যেতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও ঐক্য তৈরি করতে হবে। আপনি, আমি প্রস্তুত?

আমাদের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মতো ক্ষমতাটাও প্রাকটিস করতে পারে না। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ সরকারের একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট মাত্র। তারা মহামারি ও সংক্রামক ব্যাধি গবেষণা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিষয় নিয়ে কাজ করে শুধু... কি কাজ করে তা নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন।

১৯৭৬ সালে একটি বিলের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রানী ভিক্টোরিয়ার যুগে এ সাবকন্টিনেন্টে এমন ধরনের ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করে দেয়া হইতো। সে ইতিহাস আছে। সে সময়টা কিন্তু গণতান্ত্রিক সময় ছিল না, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও না। সে সময় এই ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এ মহাভারতে জনগনের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো সরকারকে। বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বিক্ষোভ হয়েছিল সে সময়। কমিশনের কর্তাদের খুন করার জন্য বিদ্রোহীরা পরিকল্পিত হামলাও করেছিলো।

সে যুগ আর নাই। কিছুদিন আগে ভারতের রাজপথে বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশ তাদের লাঠিপেটাও করেছে। তবে সরকারি ব্যবস্থাপত্র মানাতে খুব বেশি কি সফল হয়েছে তারা? এখন পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ধারণা এসেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানে জনগণের জন্য জনগণের সরকার। তারা জনগনকে ক্ষ্যাপাতে চাইবে না। তারা বিক্ষোভকে ভয় পায়, তারা জনগণের মন রক্ষা করে চলতে চায় সব সময়, চাইবেও।

পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রই এ ধরনের ডিজাস্টার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। পৃথিবীর স্বার্থপর রাষ্ট্র ধারণা মানব সভ্যতার কল্যাণের জন্য স্ট্রাকচারড নয়। এ কারণেই হয়তো এমন একটা গ্লোবাল সমস্যার কালেও আমাদের প্রবাসী ভাইদের ফেরত নিতে হয়। এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের নাগরিকের দায়িত্ব নিতে অপরাগতা প্রকাশ করে ফেরত নিতে চাপ দেয়।

বাংলাদেশ গরিব রাষ্ট্র হবার পরও চেষ্টা করেছে উন্নত রাষ্ট্রের মতো করে তবে আনলাকিলি এমন ডিজাস্টার ম্যানেজ করার জন্য মানসিক ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতি আমাদেরও খুব বেশি ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রকে তো সব ধরনের পরিস্থিতিতেই রান করতে হয়। অতএব প্রয়োজন অনুযায়ী কখনো কখনো পুরনো সিদ্ধান্ত পাল্টে নতুন সিদ্ধান্তও নিতে হবে, নিতে হয়।

সুতরাং লকডাউনের ঘোষণা রেখেই ধীরে ধীরে বেসরকারি সব শিল্প প্রতিষ্ঠান চালুর সুযোগ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী যখন তখন লকডাউন ভঙ্গের কারণে আটকের ক্ষমতাতো হাতে রইলোই আবার এ বিষয়ে সরকারকেও দায়ী করার সুযোগ থাকলোনা। সাপও মরলো...!

এভাবে ঢিলে ভাব চলতে চলতে ব্যক্তি একদিন তার একান্ত প্রয়োজনে সোশ্যাল ডিসট্যান্স নিজেই তুলে নেবে, দৈনন্দিন কাজে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে মানুষ। ডায়রিয়া, কলেরা ও ডেঙ্গুর মতো করোনার তকদির নিয়েই `টুডে অর টুমরো` দর্শনে সুখে-দুখে জীবন অতিবাহিত করতে থাকবে সবাই।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মী