দুই বছর আগে একদিন

পাপিয়া জেরীন

প্রকাশিত : এপ্রিল ১১, ২০১৯

বাংলাদেশ বিমানে বইসা ভাবতেছি, এইটা বাস নাকি বিমান! আমার পিছনের সীটে একটা ঘাটের মড়া বুইড়া(বয়স আনুমানিক: ৬৫ ) কিছুক্ষণ পরপর অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়ায়া বিকট শব্দে ঢোক গিলতেছে।তার মেয়ের হাতব্যাগ থিকা পার্কওয়ে হসপিটালের কাগজ উঁকি দিতেছে। বুঝতে বাকি নাই লোকটার কেমোথেরাপি চলতেছে।

 

আমার এমনেই বিরক্তির সীমা নাই তার উপর জরুরী ঘোষণা আসতেছে --বৈরী আবহাওয়ার জন্য চালক সাহেব অসুবিধার সম্মুখীন, সীটবেল্ট... ব্লা-ব্লা! তিতলীরে দুধ দেওয়া জরুরী,এদিক ওদিক তাকায়ে ওরে দুধ দিলাম। হঠাৎ পিছনে চোখ গেল, দেখি সেই ঘাটের মড়া চোখ ফাটাইয়া তাকায়ে আছে। আমি চোখ দিয়া অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করলাম, কোন লাভ হইলো না। বরং এবার সে করুণ দৃষ্টিতে চাইয়া রইলো।একবার ভাবলাম তারে বলি," চাচামিয়া! আসেন এক চুমুক খাইয়া যান।" পরে ভাবলাম ধুর হিন্দী চুল। একটা সময় বেটার মাইয়া সব বুঝতে পাইরা বেটারে কম্বল গায়ে দিয়া দিলো আর রোবোটিক আওয়াজে কইলো... বাবা চোখ বন্ধ করেন তো! ঘুমায়ে যান।

 

পুরুষ মানুষ(বালেগ থিকা ঘাটের মড়া) এর কমন রোগ এইটা। অধিকাংশ শিক্ষক প্রজাতির পুরুষ আপনারে (মাইয়াগোরে) জ্ঞান দিতে দিতে মাথায় হাত দিয়া হেয়ার স্টাইল নষ্ট কইরা দেয়। তাদের মধ্যে কিছু অংশ(যাদের হাত পিছলা) আপনারে উপদেশ দিতে দিতে হাতখানা ব্রাএর ফিতা বরাবর নামায়ে দিবে(বিশেষত অংকের জাহাজ যারা)তারপর ৯০ ডিগ্রী এঙ্গেলে সরল রেখায় গিয়ে হুকে আইসা খেই হারায় ফেলবে। এটা মজাক হিসেবে নিয়েন না.... সত্য কথা।

আমাদের গ্রামের রইশ্যার মা(বিশিষ্ঠ ধাত্রী) বলেন, তুমি বুক অর্ধেক ঢাকবা, মর্দায় বাকি অর্ধেক কল্পনা করবো। তুমি পুরা ঢাকবা, মর্দায় পুরাডাই কল্পনা করবো। তুমি বুরকা পরবা, মর্দায় দিনে খোয়াব দেখতে শুরু করবো। আর যদি দেখো -- কুনো মরদ তোমার বুকের দিকে চাইতাছেনা... তয় বুইঝা নিবা মরদ বেটার চউখে কুনো দোষ নাই, দোষ তুমার!মাইনে তোমার কুনো বুকপানি নাই। বুজলা গো নাতিন? "

আমি বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলাম। আসলেই ঘটনা ঠিক। কিন্তু আমি সাইন্স এর পক্ষের লোক, ব্যাখ্যা ছাড়া কিছু গ্রহণ করতে নারাজ। অনেক বইপত্র লিংক খুঁইজাও কোন ভালো তথ্য পাইলাম না।

পরে সেইদিন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ‘যৌনতার রহস্য ও মানবদেহ’ নিয়া একটা একটা প্রোগ্রাম দেখলাম। তারা বললো যে, প্রাণিজগতে কুকুর, হরিণ থেকে শুরু করে অনেক প্রাণী আছে যারা... বিপরীত লিঙ্গের যৌনাঙ্গ শুঁকে ঠাহর করতে পারে যে, তার ডিম্বস্ফোটন ঘটছে কিনা বা ডিম্ব নিষিক্ত হওয়ার মতো পরিপক্ক হইছে কিনা। তেমনি মানুষের ক্ষেত্রে পুরুষরা মেয়েদের স্তনের অবস্থা আর চোখেরও চর্মের উজ্জ্বলতা দেখে সেটা ঠাহর করে। মেয়েদের শরীরের ভেতরে একটা ঋতু চক্রের মতো পরিবর্তন ঘটে, সে অনুযায়ী ওভুলেশনের পারফেক্ট দিন কয়টায় মেয়েদের স্তন উন্নত ও স্তনবৃন্ত অনমনীয় থাকে। শরীরে রক্তসঞ্চালন ও তাপমাত্রা বাড়ে।পুরুষের মস্তিস্ক খুব সুন্দর ভাবে প্রোগ্রামিং করা... তারা নারী শরীরের এই অংশগুলিকে প্রতিনিয়ত পরিমাপ এর আওতায় আনে অজান্তেই(কেউ বেশী কেউ কম)।
তবে ব্রা ব্যবহার এর কারণে মেয়েদের স্তনের এ পরিবর্তনগুলো এখন আর স্পষ্ট বোঝা যায় না(ব্রাএর কাজ যেহেতু উত্থিত দেখানো)... বরং সবসময়ই (ব্রা পরিহিত অবস্হায়) মেয়েটি ডিম্বস্ফোটনের প্রকৃষ্ট ধাপে আছে বলে(মনে) ভুল হয়।

এই হইলো পুরুষের একটা অস্বাভাবিক আচরণের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ও স্বাভাবিক ব্যাখ্যা।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী