ধ্যান: মন নিয়ন্ত্রণের কৃৎকৌশল

শেষ পর্ব

তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস

প্রকাশিত : এপ্রিল ১২, ২০২০

মেয়েটা ঢুকল আমার রুমে। আমি সাধারণত সব পরিবেশেই খুব সাবলীল থাকি। কিন্তু সেদিন আমি সব গুলিয়ে ফেলেছিলাম। মেয়েটা সালাম দিয়ে বসলো আমার অনুমতি না নিয়েই। আমি একটু সময় নিয়ে স্বাভাবিক হলাম।

ও বলল, আমার নাম সাথী। আমি বুঝে ফেললাম, ও বানিয়ে বলছে। এটা ওর আসল নাম নয়। আমি স্বাভাবিক হলাম। এবং তখনই আবার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনলাম। হেসে বললাম, সঠিক নামটা বলুন, এটা আপনার সঠিক নাম নয়।
মেয়েটা বিব্রত হলো। আমি কনফিডেন্স ফিরে পেলাম। পরে বলল, আমার নাম মনি।

আমার অফিসে সবাই আসে কমপিউটার শিখতে। এসেই ট্রেনিংয়ের বিষয়, খুটিনাটি, খরচপাতি এসব জানতে চায়। কিন্তু মনি ওসব কিছুই বলছে না। একপর্যায়ে প্রশ্ন করলাম, আপনি ঠিক কি কারণে আমার অফিসে এসেছেন?

ও হাসলো। বলল, এমনিতেই। অফিসটা দেখতে এলাম। আরও দু’একটা কথা বলে মনি ওদিনের মতো চলে গেল। এরপর আরও দশ-বারোদিন ও আমার অফিসে এসেছে। একদিন বলল কমপিউটার শিখবে। একদিন বা দুই দিন ফ্রি টেনিংও দিলাম। ও একদিনও কমপিউটার শিখতে আমার অফিসে আসতো না। ও সম্ভবত অন্য কোনো চিন্তা নিয়ে আসতো। কিন্তু আমার তখন অন্য কোনো চিন্তা ছিল না।

তাছাড়া ওই বয়সে আমি মেয়েদের একটু বেশিই এড়িয়ে চলতাম। তাতে এক ধরনের ‘ফালতু’ মজাও পেতাম। আমি একদিন মনিকে সরাসরি প্রশ্ন করে বসলাম, আমার অফিসে আপনি ওদিন কেন এসেছিলেন?
এর উত্তরে ও শুধু হেসেছিল। একবার শুধু বলল,‘আপনাকে দেখলাম অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এজন্য আসলাম আপনাকে দেখতে।

সেদিনের সেই ঘটনার পর আমি মাইন্ড কন্ট্রোল প্রাকটিসটা সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিই। কিন্তু সমস্যাটা হলো, মানুষ তিনটি জিনিস কোনোদিন ভুলতে পারে না। সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা এবং মন নিয়ন্ত্রণ।

নিজের কথাই বেশি বলে ফেললাম। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আপনার নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার মনই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এবং এটার পরিণাম কখনোই ভালো হয় না। সুতরাং, আপনার নিজের মনকে আগে নিয়ন্ত্রণ করুন। নিজের নিয়ন্ত্রিত মনই আপনার সবচে বড় শক্তি।

আপনি ঠিক যেদিন থেকে আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন, সেদিন থেকেই আপনার সামনে একটা নতুন পৃথিবী দেখতে পাবেন। যে পৃথিবী চলবে শুধুই আপনারই কথামতো। ওই পৃথিবী সবসময় আপনার নির্দেশেই চলবে।

মানুষের মনের তিনটি স্তর রয়েছে। ক. সচেতন মন (সম্পূর্ণ সচেতন অবস্থায় আমরা যেমন থাকি বা ভাবি)। খ. অচেতন মন (ঘুম বা অজ্ঞান অবস্থা) এবং গ. অবচেতন মন (ধ্যান বা গভীর ঘুমের অবস্থা)।

মানুষের অবচেতন মন মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। অবচেতন মনের চিন্তা-ভাবনাগুলোই ‘প্রকৃতি’ মানুষের কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে দেয়। সম্পূর্ণ প্রকৃতি বা ন্যাচার সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে মানুষের অবচেতন মনের চাহিদা পূরণে। কাজেই অবচেতন মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারাটাই একজন মানুষের সফলতার প্রকৃত, প্রথম ও প্রধান মূলমন্ত্র।

আমি আমার অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণে আনার শিক্ষাটি গ্রহণের পর থেকে ‘না’ শব্দটির ব্যবহার ভুলেই গিয়েছিলাম। সবসময় একটি ‘হ্যাঁ’ আমার ভেতরে সদাজাগ্রতময়। কিন্তু মানুষের জীবনে কখনও কখনও একটি ‘না’ অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেয়। তখন সত্যিই এই ‘না’ শব্দটিই ‘অনেক বেশি ভারি’ হয়ে সামনে দাঁড়ায়। যাদের অবচেতন মনের উপর কন্ট্রোল নেই, তাদের জন্য ‘না’ কোনো মূল্যবান শব্দই নয়।

এই অবচেতন মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়েই না বলার ট্রেনিং নিচ্ছি। দেখা যাক কী হয়! এবার কাজের কথা বলি। আর সেটা হলো স্বপ্ন। আপনিও চেষ্টা করুন অবচেতন মনে পৌঁছতে। অবচেতন মনে পৌঁছতে পারলে আপনি অনায়াসে আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করবেন। অবচেতন মনে পৌঁছতে পারলে আপনি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়েও নিতে পারবেন। আপনি নিজ ইচ্ছাধীন স্বপ্ন দেখতে পারবেন। আর অবচেতন মন মূলত প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত।

আপনি যখন অবচেতন মনে কিছু চাইবেন তখন এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আপনার সেই চাহিদা পূরণের জন্য কাজ শুরু করে দেবে। আপনাকে চাইতে হবে এমনভাবে যেন আপনি বিশ্বাস করেন যে, আপনি যা চাচ্ছেন সেটা পেয়ে গেছেন। তখন দেখবেন আপনার কাজের গতিও চেঞ্জ হয়ে গেছে। আপনার কাজকর্ম তখন শুধুমাত্র সেই চাওয়াকে ঘিরেই আবর্তন করে যাচ্ছে।

একজন মানুষকে সফল হতে হলে তার নিজের প্রতি সর্বপ্রথম বিশ্বাস ও আস্থা আনতে হবে। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারলেই আপনি সফল হবেন। কাজেই সবার আগে নিজেকে বিশ্বাস করুন। দেখবেন, সফলতা শুধু সময়ের ব্যাপার।