নুসরাতের মা বলছি

শিরিন আক্তার

প্রকাশিত : এপ্রিল ১২, ২০১৯

আমার মেয়ের নাম নুসরাত। ও যখন জন্ম নেয় ওর মিষ্টি মুখটা দেখে আমার সব যন্ত্রণা এক নিমিশে মিলিয়ে গিয়েছিলো। মেয়েকে নিয়ে ওর ভাই বাবার আদিখ্যেতা একটু বেশিই ছিলো। যখন যা বলবে তাই যেন করতে হবে। মেয়ে আমার কেমন জানি সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শিখছে । আমি ভয় পাই, তাই ওকে বাচাতে আমি মাদ্রাসায় পড়াই।

 

আমার আর আমার মেয়ের একটা কেমন জানি সম্পর্ক ছিলো। বাইরে থেকে এসেই তাকে আমাকে লাগবেই। মা, মা করে বাড়ি ঘর মাতিয়ে ফেলে সে। আমিও অপেক্ষা করি কখন আমার মায়ের মুখখানা টেনে নিয়ে আমি আমার বুকে লাগাবো। ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিবো। কি বা খাবার দিতে পারি ওদের, যতখানি পারি মজা করে রান্না করে ওদের মুখে তুলে দেই।

 

আমার মেয়ের নাম নুসরাত। ও যখন জন্ম নেয় ওর মিষ্টি মুখটা দেখে আমার সব যন্ত্রণা এক নিমিশে মিলিয়ে গিয়েছিলো। মেয়েকে নিয়ে ওর ভাই বাবার আদিখ্যেতা একটু বেশিই ছিলো। যখন যা বলবে তাই যেন করতে হবে।
আমার মেয়ের গায়ে একটা মিষ্টি গন্ধ আছে। ও ঘরে ঢুকলেই আমি সেটা টের পাই।

কি জানেন মেয়ে আমার ভালোই লেখাপড়া আর কোরআন টা শিখছিলো। ওর বন্ধুদের কাছেও ও বেশ জনপ্রিয় ছিলো। সেদিন বাড়ি ফিরে মনটা খুব খারাপ দেখে আমি কাছে টেনে নেয়ে জানতে চাইলাম। ও বললো আমি কাওকে ছাড়বো না। আমাকে অপমান করছে মা। মাদ্রাসার স্যার যদি এমন হয় আমরা কোথায় যাবো মা, বলতে পারো? আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি।

সেদিন ঘর থেকে বের হবার সময় মেয়ে আমাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরেছিলো, কেন জানিনা আমার গায়ের গন্ধ নিচ্ছিলো। হয়তবা পুড়ে যাবে বলেই। আহা কি ব্যাথা ওর সারা শরীরে....।।।।।।

কয়দিন ধরে আমার ময়নাটার খুব কস্ট হচ্ছে। আমি সারারাত ওর শরীরটাতে ফু দেই কিন্তু জ্বালা কমে না। আজ থেকে আমার আর কাওকে ফু দিতে হবেনা।
ঘরে ঢুকেছি মাত্র। ওর কাপড়গলো আলনায় ভাজ করা। পোড়ার গন্ধ কাটানোর জন্য ধোয়া কাপড়গুলো কাছে টেনে আনলাম । নুসরাতের পোড়া গন্ধ সারা কাপড়ে,
আমার শরীরে, আমার নিশ্বাসে...

ওরা ডেকে আমাকে বলল আমার মেয়েটা আর বেঁচে নেই। ও নাকি মারা গেছে। আহারে আমার ময়নাটা। কি সুন্দর দেখতে মুখটা। আমি অনেকগুলো শেষ চুমু দিলাম সারা মুখে। কোন পোড়ার গন্ধ নেই সেই মিষ্টি গন্ধটা নাকে আসছে। আমার সোনা পাখিটা আমাকে শুধু বলে গেলো, ওমা তুমি আমার অন্যায়ের বিচারের জন্য পথে থেকো...।।

হাসপাতালে বসে শুনতে পেয়েছিলাম আমার ময়নাকে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ পাঠাবে। আমি বলেছিলাম দরকার নেই । ঐ জানোয়ারটাকে কোথায় পাঠাবেন সেটাই আমি শুনতে চাই। ওর আমি ফাসি চাইনা, আমি ওকে পুড়ায়ে মারতে চাই। আমি নিজে ওর গায়ে আগুন লাগাতে চাই। আপনাদের যাদের ঘরে মেয়ে আছে তারা কি আসবেন আমার সাথে? আমি নুসরাতের মা বলছি, আসেন না সবাই। প্রধানমন্ত্রী কি আসবেন আমার সাথে। আপনার কি নুসরাতের জন্য কিছুই করার নেই। নাকি কোন এক ধর্মীয় জুজুর ভয়ে মুখ ফিরিঁযে রাখবেন???

 

সংগৃহীত