পাঞ্জাবি লেখক অমৃতা প্রীতমের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩১, ২০২০

পাঞ্জাবি কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার অমৃতা প্রীতমের আজ ১৫তম মৃত্যুদিন। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ছয় দশকের দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কবিতা, কল্পকাহিনি, জীবনী, প্রবন্ধ, লোক সঙ্গীত প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় দুশো গ্রন্থ রচনা করেন, যা বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়।

অমৃতা কউর ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কর্তার সিং হিতকরি ব্রজ ভাষার একজন পণ্ডিত, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিখ ধর্মের প্রচারক ছিলেন। অমৃতার বয়স যখন এগারো বছর তখন মায়ের মৃত্যু হয়। এরপরেই তিনি ও তার পিতা লাহোর শহরে বসবাস শুরু করেন।

মায়ের মৃত্যুর পরে একাকিত্বের কারণে তিনি লিখতে শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ অমৃত লেহরেঁ প্রকাশিত হয়। এই বছর তিনি প্রীতম সিং নামক একজন সম্পাদককে বিবাহ করেন ও স্বামীর নামে নিজের নাম পরিবর্তন করে অমৃতা প্রীতম রাখেন।

তিনি অজ্জ আখাঁ ওয়ারিস শাহ নূ নামক একটি বিষাদধর্মী কবিতা রচনা করেন, যেখানে ভারতের বিভক্তির সময়কার বিপর্যয়ের প্রতি তার ক্ষোভ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঔপন্যাসিক হিসেবে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো পিঞ্জর নামক একটি বিখ্যাত উপন্যাস, যেখানে তিনি পারো নামক একটি স্মরণীয় চরিত্র সৃষ্টি করেন, যাকে তিনি নারীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার, মানবতা লঙ্ঘন এবং অস্তিত্ববাদের প্রতি সমর্পণের বিরুদ্ধে মূর্ত প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলেন। ২০০৩ সালে এই উপন্যাস থেকে পিঞ্জর নামক হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।

১৯৫৬ সালে তিনি তার রচিত সুনেহে নামক দীর্ঘ কবিতার জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি তার কাগজ তে ক্যানভাস নামক উপন্যাসের জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার জয় করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পদ্মশ্রী, ২০০৪ সালে পদ্মবিভূষণ ও সাহিত্য অাকাদেমি ফেলোশিপ লাভ করেন।

রোমান্টিক কবি হিসেবে লেখা শুরু করলেও শীঘ্রই তিনি অঞ্জুমন তরক্কি পসন্দ মুসান্নাফিন-এ-হিন্দ নামক প্রগতিশীল লেখক সংঘে যোগ দেন। ফলে ১৯৪৪ সালে তার লোক পীড় নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি রচিত হয়, যেখানে পঞ্চাশের মন্বন্তরের পরে যুদ্ধ বিধ্স্ত অর্থনীতিকে সরাসরি সমালোচনা করা হয়। ভারতের স্বাধীনতার পরে তিনি লাহোর থেকে ভারতে চলে আসেন। স্বাধীনতার পরে দিল্লি শহরে গুরু রাধা কিষণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রথম জনতা গ্রন্থাগার নির্মাণে তিনি সহায়তা করেন।

১৯৬০ সালে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এই সময় কবি সাহির লুধিয়ানভির সঙ্গে তার প্রণয় ঘটে, কিন্তু পরে কণ্ঠশিল্পী সুধা মালহোত্রার সঙ্গে সাহিরের প্রেম গড়ে উঠলে অমৃতা লেখক ইমরোজের সান্নিধ্যে জীবনের শেষ চল্লিশ বছর অতিবাহিত করেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর, ছিয়াশি বছর বয়সে নতুন দিল্লি শহরে অমৃতার মৃত্যু ঘটে।