বিখ্যাতদের ফেসবুক!

শরিফ সাইদুর

প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০১৯

বঙ্কিম ও বিভূতিভূষণরা এখন ফেসবুক চালালে তাদের পোস্টের নমুনা কেমন হতো? বঙ্কিম তার সাহিত্যকে ও মেধাকে যেভাবে নিজের আদর্শ প্রচারে কাজে লাগিয়েছিলেন ফেসবুকও সে কাজেই ব্যবহার করতেন। বিজেপি, আরএসএস ও বজরং দলের কর্মীরা তার পোস্টে বেশি লাইক দিত, শেয়ার দিতো। আর মুসলিমরা কমেন্টে গিয়ে বলত, আপনি লেখেন ভালো। কিন্তু বিষ ছড়ান আর কি! অতি হুজুগেরা বঙ্কিমের ছবি নিয়ে বাজে মিমি তৈরি করতো।

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রথমেই কট্টর সনাতনপন্থীদে রিপোর্ট খেতেন। নিয়মিত ফেসবুক পেইজ হারাতেন। আবার নতুন করে খুলতেন। শরৎচন্দ্র তার সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে ছোট ছোট পোস্ট দিতেন। আর তার বিরোধীরা কমেন্ট করতো, চোখের জলের লেখক, নেশখোর, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তার লাইক উপরের দুইজনের চেয়ে বেশি হতো।

মীর মশাররফ হোসেনের পেজ হতো মারামারির জায়গা। বিষাদ সিন্ধুর জন্য প্রচুর গালাগাল পেতেন। অতপর ধার্মিক, আধা ধার্মিকদের কমেন্ট যুদ্ধ চলতে৷ অতি ধার্মিকরা বলত মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে এমন সংস্কৃতে ঠাসা গদ্য লেখতে ভয় হয়নি। আল্লাহর ভয় নেই! ইত্যাদি ইত্যাদি!

নজরুল পড়তেন বিপাকে। শ্যামা সংগীত লেখার দায়ে প্রথমেই কমেন্টে কাফের ঘোষণা পেতেন। আর তিনি শাসকদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে জেলে যেতেন। এরপর তার মুক্তি চেয়ে সবাই স্ট্যাটাস দিতো।

মানিক বাবুর স্ট্যাটাসগুলো অধিকাংশ স্ট্যাটাস হতো সমাজতন্ত্র নিয়ে। তবে সবাই তার উপন্যাসের প্রশংসা করতো। পল্লীকবি বিভিন্ন কবিতা পোস্ট দিতেন। রমজান আসলে পোস্ট দিতেন `তারাবি` কবিতা। বৃষ্টির সময় বৃষ্টির কবিতা। আর বলতেন, আধুনিক কবিতা কি বুঝি না বাপু। তোমরা আমায় বুঝিয়ে দাও।

রবীন্দ্রনাথ পড়তেন বিপাকে। বিভিন্ন ইস্যুতে অনেকে তার মত চাইত। অতপর তিনি বুদ্ধিজীবীর ভেক ধরতেন। ইউরোপ সফর করে বিভিন্ন লেকচার দিতেন ও লেকচারের ভিডিও পোস্ট দিতেন। কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ দিতে চেয়ে ফাউন্ডেশন গড়তেন। ফেসবুকে পোস্ট দিতে ফান্ড চাইতেন। আর উনার বিরুদ্ধবাদীরা কমেন্টে গিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতো। কদম্বরী দেবীকে নিয়ে আরকি।

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তার আইডি দিয়ে সবার লেখা পড়তেন। কিন্তু কোন স্টাটাস দিতেন না। আহমদ ছফার অনুরোধে মাঝে মধ্যে কয়েকজনকে লাইক দিতেন।

এইসব দেখে সে সময়ের জনপ্রিয় লেখক বিভূতিভূষণকে অনেকেই ফেসবুক পেইজ খুলতে বলত৷ তার বন্ধু নীরদচন্দ্র চৌধুরীর পরামর্শে একটা খুলতেন। সে পেজ থেকে বাংলার প্রকৃতির বিভিন্ন দৃশ্য পোস্ট দিতেন।

আর হুমায়ুন আজাদ নামের ব্যক্তিটি বর্তমান সময়ের এক ঢাকাই বুদ্ধিজীবীর মতো বলতো, অমুক ছোট লেখক, তমুক মাঝারি লেখক। অমুকের লেখা পড়া যায়না৷ অমুকের লেখা হালকা। আর দিনশেষে পাকিস্তান নিয়ে ও আওয়ামীলীগের গুণকীর্তন করে বড় লেখা দিতেন।