মহাত্মা গান্ধীর চিন্তার জগৎ

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৬, ২০২০

গান্ধী প্রচুর লিখেছেন সারাজীবনে। গান্ধীর সেসব লেখার মধ্যে বহু স্ববিরোধিতা আছে, প্রচুর পুনরাবৃত্তি আছে। কিন্তু সেইসব লেখার ভিতর দিয়ে গান্ধী চরিত্রের নানা দিক বা তাঁর মনোজগৎ এবং চিন্তাগুলি ধরা পড়ে। তিনি লিখেছেন, বুভুক্ষু জনসাধারণ, যাদের চক্ষু দীপ্তিহীন এবং অন্নই যাদের কাছে ঈশ্বর, তাদেরকে ভগবানের বাণী শোনানো অরণ্যে রোদনেরই শামিল। কর্মের পবিত্র বাণী তাদের সামনে তুলে ধরলে তবেই ভগবানের বাণী তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। সুষ্ঠুভাবে প্রাতঃরাশ সম্পন্ন করার পর অধিকতর সুষ্ঠু মধ্যাহ্নভোজনের প্রত্যাশায় বসে বসে আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের কথা আলোচনা করা খুবই মনোরম। কিন্তু দুবেলা যারা পেট ভরে অন্ন পায় না, তাদের কাছে ভগবানের কথা বলবো কোন মুখে? তাদের কাছে ঈশ্বর শুধু অন্নবস্ত্রের রূপেই আবির্ভূত হতে পারেন। ভারতীয় কৃষককুল তাদের জমি থেকে অন্ন পায় বটে, তবে বস্ত্রের অভাব পূলণ করার জন্যে আমি তাদের চরখা দিয়েছি। আর আমি সেই অর্ধাহারী, অর্ধনগ্ন কোটি কোটি জনতার একমাত্র প্রতিনিধি বলেই আজ কৌপিন পরে ঘুরে বেড়াই।

তিনি লিখেছেন, দরিদ্রের কাছে মিতব্যয়িতাই হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা। ঐ সব বুভূক্ষু জনসাধারণের মনে আপনি আর কোনো রকমেই সাড়া জাগাতে পারবেন না। এ সব তাদের কাছে হৃদয়গ্রাহী হবে না। কিন্তু আপনি তাদের কাছে খাদ্য নিয়ে যান, আপনাকে তারা দেবতা মনে করবে। প্রতিদিনের আহার জোগানো ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা তাদের নেই। ভগবানের কথা তাদের কাছে বললে তারা আমাকে এবং আপনাকে পাষণ্ড আখ্যা দেবে। ঈশ্বরকে যদি তারা আদৌ চিনে থাকে তবে তারা তাঁকে আতঙ্কজনক, প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং নিষ্ঠুর অত্যাচারী শক্তি বলেই জানে। তিনি লিখে চলেছেন, আমার বিবেচনায় আমরা প্রত্যেকেই এক এক ধরনের তস্কর। এখনই আমার যা দরকার নয়, এমন কিছু নিয়ে রেখে দিলে, সেটা অপর কারো কাছ থেকে চুরি করা হয়। প্রত্যেকে যদি নিজের প্রয়োজনটুকু মেটায়, আর তার বেশি কিছুই না করে, তবে দুনিয়ায় দারিদ্র থাকবে না এবং অনশনে কারো জীবন যাবে না। লক্ষ লক্ষ লোক যখন অনশনে কাটায় এবং মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তখন ধনিক সম্প্রদায়ের প্রয়োজনাতিরিক্ত অথ্যাধিক সম্পদ থাকার দরুণ অবহেলাভরে সেগুলির অপচয় হয়। সবার যেটুকু প্রয়োজন, তা যদি সবাই রাখে, তাহলে কারো আর অভাব থাকে না এবং সবাই পরিতুষ্ট হয়। নিয়ম হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ জনসাধারণ যা পায় না, দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করা। প্রত্যাখান করার এই যোগ্যতা হঠাৎ আমাদের মধ্যে আসবে না। লক্ষ লক্ষ জনসাধারণের অধিকারে যা নেই, তার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ না করার মতো মনোবৃত্তি গড়ে তোলাই হচ্ছে প্রথম কাজ।

তিনি লিখে রেখে গেছেন, ভারতকে খুঁজে পাওয়া যাবে তার সাতলক্ষ গ্রামে, মুষ্টিমেয় কয়েকটি শহরে নয়। অসংখ্যবার আমি একথার পুনরাবৃত্তি করেছি। কিন্তু আমরা শহরবাসীরা বিশ্বাস করি যে, ভারতের সত্তা আছে তার শহরগুলিতে এবং গ্রামগুলির সৃষ্টি হয়েছে আমাদের প্রয়োজন মেটাবার জন্য। শহরবাসীরা সাধারণত গ্রামবাষীদের শোষণ করে এবং কার্যত হতভাগ্য গ্রামবাসীদের জীবিকার উপর নির্ভর করে। ভারতের পঁচাত্তর ভাগেরও উপর কৃষিজীবি। তাদের শ্রমের প্রায় যাবতীয় ফল যদি আমরা তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেই বা অপরকে দিতে দেই, তবে আমাদের স্বশাসনের কোনো অর্থই হয় না। গ্রামবাসীদের প্রতি ঘোর অপরাধে আমরা অপরাধী। শিক্ষার সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বহুদিন যাবৎ গ্রামবাসীদের অবহেলা করে এসেছেন। তাঁরা শহরের জীবনযাত্রা বেছে নিয়েছেন। ভারতের নগরসমূহের প্রয়োজনীয় বস্তুসামগ্রী গ্রামে উৎপন্ন হয়ে শহরে চালান আসতো। শহরগুলি বিদেশী মালের বাজারে পরিণত হওয়ায় এবং সস্তা ও খেলো বিদেশী মাল বাজারে স্তূপীকৃত করে গ্রামগুলিতে অর্থাগামের রাস্তা বন্ধ করায় ভারত দরিদ্র দশায় পতিত হলো। বিরাট এবং মহৎ সমাজসংস্কারের কাজে শহরের ছেলেরা যদি যথোপযুক্ত অংশ গ্রহণ করতে চায় তবে তাদের শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে গ্রামের প্রয়োজনীয় প্রত্যক্ষ সংস্রব থাকা দরকার।

শিক্ষা নিয়ে গান্ধীর চিন্তার মধ্যে যেমন বিভ্রান্তি ছিল, ঠিক একইভাবে যথেষ্ট নতুন এবং প্রাসঙ্গিক কথা বলে গেছেন। তিনি প্রবলভাবে মেকলের শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর শিক্ষাচিন্তায় দেখা যায়, তিনি একটি কৃষিপ্রধান দেশের শিক্ষার সমস্যা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। শিক্ষা বিষয়ে গান্ধীর ভাবনা কৃষিপ্রধান ভারতের জন্য যথেষ্ট গুরুত্ব বহণ করে। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে শেষপর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদের শক্তিকে পরাস্ত করা যাবে না সে বিষয়েও তিনি নিশ্চিত ছিলেন। তাঁর শিক্ষাচিন্তায় দৈহিক শ্রম এক বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে। তিনি বলেন, মানুষের মনের বিকাশ ঘটবে কায়িক শ্রমের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে। যখন গান্ধী এসব কথা বলছিলেন তখন শিক্ষিত গতর-আয়েসী মানুষের অর্থাৎ উচ্চও মধ্যশ্রেণীর মধ্যে দৈহিক শ্রমের প্রতি এক প্রচ্ছন্ন অবজ্ঞা ছিলো যা এখনো বর্তমান। তিনি তাই সমকালীন শিক্ষা সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ভারতের প্রচলিত বিদ্যালয়গুলিতে যা চলে, তাকে শিক্ষা আখ্যা দেওয়া যায় না; এ হচ্ছে বুদ্ধির লাম্পট্য। তাঁর শিক্ষাদর্শ যে খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থের অনুকুলে ছিলো সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি লিখেছেন, ‘শিশুকাল থেকে শিক্ষার্থীদের শ্রমের প্রতি মর্যাদাবোধের শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে। শিশুদের এমন শিক্ষা অবশ্যই দেয়া উচিৎ নয় যাতে তারা শ্রমবিমুখ হয়।’ তিনি মাতৃভাষাতে শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে জোর দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, নতুন পৃথিবী গড়ার স্বার্থে শিক্ষা নিশ্চয় নতুন ধরনের হবে। শিল্প, কলা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা একই ছকের মধ্যে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। সঙ্গীত প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যসূচীর অঙ্গ হওয়া দরকার।

তিনি লিখেছেন, মূল থেকে স্বাধীনতা আরম্ভ হতে হবে। এই জন্য প্রত্যেক গ্রামকে হয় একটি সাধারণতন্ত্রে পরিণত করতে হবে, আর নয় পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন এক একটি সাধারণতন্ত্রে পরিণত করতে হবে, আর নয় পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন এক একটি পঞ্চায়েত সেখানে স্থাপন করতে হবে। সুতরাং স্বভাবতই প্রত্যেক গ্রাম আত্মনির্ভরশীল হবে এবং এমনকি সমস্ত দুনিয়ার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার উপযুক্ত শক্তি সঞ্চয় করবে। সমাজের প্রত্যেক নরনারী শুধু তাদের প্রয়োজনেই কথাই জানবে না, সমপরিমাণ শ্রম দ্বারা অপরে যা পায় না, তা কারো পাওয়া উচিত নয় এ কথাও তাদের জানা থাকবে। এসব আকাশকুসুম এবং চিন্তার অযোগ্য বিষয় বলে আমাকে হয়তো বিদ্রুপ করা যেতে পারে। পরিপূর্ণরূপে অনুসরণে সমর্থ না হলেও ভারত যেন এই বাস্তব চিত্রানুযায়ী নিজ জীবন পরিচালিত করে। গ্রামের নিজের নাট্যশালা, বিদ্যালয় এবং সাধারণ সভাগৃহ থাকবে। বিশুদ্ধ জলের জন্য গ্রামের স্বকীয় জলসরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। নিয়ন্ত্রিত কূপ বা পুষ্করণী দ্বারা এ করা সম্ভব। যতদূর সম্ভব যাবতীয় কার্যকলাপ সমবায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত করতে হবে।

তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছনতা সম্পর্কে কিছু চমৎকার কথা লিখেছেন? তিনি জানাচ্ছেন, কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির দেখতে গিয়েছিলাম। এবং এর গলির মধ্য দিয়ে যাবার সময়ে আমার মনে নিম্নোক্ত চিন্তার উদ্রেক হলো। উপর থেকে হঠাৎ কোনো আগন্তক এই মন্দিরে এসে পড়ে এবং আমরা হিন্দুরা যে কী রকম সে সম্পর্কে তাঁকে চিন্তা করতে হয়, তবে তাঁর পক্ষে আমাদের নিন্দা করা কি অন্যায় হবে? এই বিরাট মন্দির কি আমাদের চরিত্রের প্রতিবিম্ব নয়? হিন্দুদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হয়ে এ কথা আমি বলছি। আমাদের পবিত্র মন্দিরের গলিগুলি কি এতো অপরিষ্কার থাকা উচিত? গলিগুলি সর্পিল এবং সংকীর্ণ। আমাদের দেবালয়গুলি পর্যন্ত যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রশস্ততার আদর্শ স্বরূপ না হয়, তবে আমাদের স্বায়ত্বশাসন আর কতো ভালো হবে? ইংরেজ ভারত থেকে চলে যাওয়া মাত্রই কি আমাদের দেবালয়গুলি পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা এবং শান্তির আকর হয়ে উঠবে? তিনি এই প্রশ্নটিই তুলেছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকার ক্ষেত্রেও কি ইংরেজরা বাধা? তিনি চাইতেন ভারতবাসী যেন আগে নিজের মনের ভিতর থেকে শক্তিশালী এবং যোগ্য হয়ে ওঠে।

তিনি লিখেছেন, হিন্দুধর্ম এক রক্ষণশীল ধর্ম এবং সেই কারণেই এক বিরাট শক্তিতে পরিণত হয়েছে। হিন্দুধর্ম সর্বাপেক্ষা অধিক পরমতসহিষ্ণু। কারণ এতে ধর্মান্তরিতকরণের স্থান নেই এবং পূর্বের ন্যায় এখনো এই ধর্ম সম্প্রসারণক্ষম। আমার মতে হিন্দুধর্ম বৌদ্ধধর্মের বিলুপ্তি ঘটায়নি, বরং সুষ্ঠুভাবে বৌদ্ধধর্মকে নিজের ভিতরে একাঙ্গীভূত করেছে। স্বদেশীভাবের জন্যই একজন হিন্দু ধর্ম-পরিবর্তনে অনিচ্ছুক। অবশ্য এর অর্থ এ নয় যে, তার ধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ। হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে আমার বক্তব্য জগতের যাবতীয় মহান ধর্মবিশ্বাসগুলি সম্বন্ধেও প্রযোজ্য। সত্য ও সদাচার অপেক্ষা মহত্তর ধর্ম আর কিছু নেই। ধর্ম বলতে আমি কী বুঝি ব্যাখ্যা করে বলছি। এটা হিন্দু ধর্মের কথা নয়, যদিও আমার কাছে তার স্থান অন্য সব ধর্মেরই ঊর্ধ্বে। যখন কোনো জীবিত মানুষের মধ্যে নীতিবোধের মূর্ত প্রকাশ ঘটে তখন সেটাই ধর্মের পরিচয়। বাস্তব পরিস্থিতির যে ধর্ম খেয়াল রাখে না এবং সমাধানে সহায়তা করে না, তাকে ধর্ম বলা যায় না। আমার হিন্দু প্রবৃত্তি আমায় শেখায় যে, প্রত্যেক ধর্মেরই কমবেশি সত্য আছে। সবগুলি একই ঈশ্বর থেকে উদ্ভুত। তবে এর সবগুলিই অসম্পূর্ণ মানবীয় সত্তা মারফৎ আমাদের কাছে এসেছে বলে এর কোনোটিই নিখুঁত নয়।

গান্ধী লিখছেন, হিন্দু-মুসলমান বিরোধের দুটি স্থায়ী কারণ সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা যাক। প্রথমটি হচ্ছে গো-হত্যা। হিন্দুধর্মের গোষ্ঠী-বিশেষ এবং সর্বসাধারণের, উভয়ের কাছে সমান প্রয়োজনীয় বিধায়, গোরক্ষণকে আমি হিন্দুত্বের মূলসূত্র বলে মানলেও এর জন্য মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষের কারণ আমি খুঁজে পাই না। ইংরেজরা প্রতিদিন যে গোহত্যা করছে তার জন্য আমরা কিছুই বলি না। একজন মুসলমান একটি গো-হত্যা করা মাত্র আমরা রেগে একবারে অগ্নিশর্মা হয়ে যাই। গো-মাতার নামে যেসব দাঙ্গা সংঘটিত হয়ে গেছে, তার সবগুলিতেই উদ্যমের অহেতুক অপব্যবহার করা হয়েছে। এর দ্বারা একটিও গরু রক্ষা পায়নি, বরং মুসলমান দেহে আঘাত পড়েছে এবং তার ফলে আরো গোহত্যা সংঘটিত হয়েছে। নিজেদের ভিতরে আগে গো-রক্ষা শুরু করার উচিত। ভারতের মতো আর কোথাও বোধ হয় পশুর এতো হতাদর করা হয় না। হিন্দু গাড়োয়ান কর্তৃক নিজের ক্লান্ত বলদকে নিষ্ঠুর অঙ্কুশের তাড়না করতে দেখে আমি অশ্রুমোচন করেছি। হিন্দুরা বিক্রি করে বলেই গরুর গর্দানে কসাইয়ের ছুরি পড়ে। এর একমাত্র কার্যকরী সমাধান এবং সম্মানজনক উপায় হচ্ছে মুসলমানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা এবং তাদের উপর গো-রক্ষার ভার ছেড়ে দেওয়া। মুসলমানদের কর্র্তৃক গো-হত্যা নিরারিত না হলে তাদের কোনোই পাপ হয় না। বরং হিন্দুরা যখন গো-রক্ষার জন্য মুসলমানদের সঙ্গে বিবাদ করে তখনই হয় ঘোরতর পাপ।

হিন্দুরা যেমন মুসলমানদের গো-হত্যা নিবারণে বাধ্য করতে পারে না, মুসলমানরাও তেমনি বলপূর্বক হিন্দুদের বাজনা বাজানো বা আরতি করা বন্ধ রাখতে পারে না। হিন্দুদের শুভবুদ্ধির উপর তাদের আস্থা রাখতে হবে। হিন্দু হিসেবে আমি হিন্দুদের পরামর্শ দেবো যে, তাঁরা যেন দর কষাকষির মনোবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে তাদের মুসলমান প্রতিবেশীদের মনোভাবের প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা দেখান এবং যখনই সম্ভব যেন তাঁদের সুবিধা করে দেন। আমি অবশ্য খবর পেয়েছি যে, বহু জায়গায় ইচ্ছা করেই মুসলমানদের রাগানোর জন্য ঠিক তাঁদের প্রার্থনার সময় হিন্দুরা আরতি শুরু করে। এ হচ্ছে বন্ধুত্বের নীতি-বহির্ভূত এবং মুর্খতাপ্রসূত কাজ। বন্ধুর মনোভাবের প্রতি সর্বাপেক্ষা অধিক মনোযোগ দেওয়াই বন্ধুত্বের রীতি। এর জন্য বিবেচনা করার প্রয়োজন হয় না। তবে শক্তি প্রয়োগে হিন্দুদের বাজনা বন্ধ করার কথা মুসলমানরা যেন ভুলেও কল্পনা না করেন। হুমকির সামনে বা হিংসার সামনে নতি স্বীকার করে নেয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের আত্মসম্মান এবং ধর্মবিশ্বাসকে বর্জন করা। আমার দৃঢ় প্রতীতি এই যে, নেতৃবৃন্দ না বলরে জনসাধারণ কখনো ঝগড়া চায় না। সুতরাং নেতৃবৃন্দ যদি চান যে ঝগড়াটিকে বর্বরতাজনক এবং অধর্মীয় বিবেচনা করে অন্যান্য প্রগতিশীল দেশের মতো আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে একে মুছে ফেলা হোক, তবে নিঃসন্দেহে আমি বলতে পারি যে, অনতিবিলম্বে জনসাধারণ তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।

লেখক: কলামিস্ট