মারুফ ইসলামের চিলতে গদ্য ‘জীবন এখানে এমন’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৮, ২০২০

আজ মিতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই আপনাদের। মিতার সঙ্গে আমার এক ধরনের প্রেম-প্রেম, উষ্ণ ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিন। শিক্ষিত, ভদ্র, আধুনিক মেয়ে মিতা। তার পরিবারের মানুষরাও অসম্ভব ভদ্র। আঙ্কেল-আন্টি, মানে মিতার বাবা-মা আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন।

সেই মিতার সঙ্গে একদা সালমান নামের এক যুবকের পরিচয় ঘটে। পরিচয় থেকে বন্ধত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। এবং নতুন প্রেমের কাছে পুরাতন প্রেম বরাবরই পরাজিত হয়। আমিও হলাম। দূরত্ব তৈরি হতে থাকলো আমাদের। দূরত্ব থেকে বিচ্ছেদ।

আরও সুখী জীবন কি প্রত্যাশা করেছিল মিতা? আরও সচ্ছ্লতা, আরও স্বাধীনতা? আরও স্বপ্নের কাছাকাছি থাকা? কিংবা যে জীবন যাপন করতে চায় মিতা, সেই জীবনের নিশ্চয়তা আমি দিতে পারব না, পারবে কেবল সালমান? সেই নিশ্চয়তার লোভেই কী মিতা ছেড়ে গেল আমাকে?

আমি ঠিক জানি না। হতেও পারে। আবার না-ও পারে। এসব বিষয় নিয়ে মিতার সঙ্গে কোনোদিন আলাপ হয়নি আমার। মিতাও নিজে থেকে ব্যাখ্যা দেয়নি কোনোদিন। তাই কোনো ঝগড়া বিবাদ ছাড়াই, কোনো মান অভিমান ছাড়াই, কোনো দোষারোপ ছাড়াই আমাদের সম্পর্কটা মৃত্যুবরণ করে।

তারপর কেটে গেছে বছর দুয়েক। আমি মিতার কোনো খবর রাখিনি। মিতাও আমার কোনো খবর রাখেনি। আমি ভেবেছি, সালমানকে বিয়ে করে মিতা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। মিতাও হয়তো ভেবেছে, আমিও কাউকে না কাউকে বিয়ে করে সুখেই আছি। তাই কেউ কারো সুখের জীবন তালাশ করতে যাইনি।

তবু অকস্মাৎ একদিন মিতার মাতৃজননীর ফোন আসে আমার মোবাইলে। আমি জানতে পারি, মিতা ভালো নেই। সে মানসিক হাসপাতালে। সালমান তাকে ছেড়ে চলে গেছে কানাডা প্রবাসী এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করে।

এটুকু শুনে আমার বন্ধুরা খুশি হয়েছিল। বলেছিল, প্রকৃতির প্রতিশোধ। তোকে ছেড়ে গেছে মিতা। মিতাকে ছেড়ে গেছে সালমান। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। আমাদের ভাবনা যতটা সরল পথে হাঁটে, জীবন ততটা সরল পথে চলে না। মিতা যেভাবে ভেবেছিল, তার জীবনটা সেভাবে এগোয়নি।

আমাদের জীবনগুলো এমনই। জীবন এখানে এমন।

লেখক: কথাসাহিত্যিক