যেভাবে লেখা হলো ‘আলোয় অন্ধ শহর’

সালাহ উদ্দিন শুভ্র

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৮, ২০২০

আমার অফিস শেষ হয় রাত ১১টায়। বের হতে হতে ১২টা, সাড়ে ১২টা, কখনও পৌনে ১টা। ঘুরতে ঘুরতে মিরপুর আসলে দেখা যায়, রাতের গভীরে এলাহি কারবার। বিরাট সব ক্রেন, লরি, পাইলিং মেশিন, কংক্রিটের চাই। হেলমেট আর বিশেষ পোশাক পরে গুটি গুটি পায়ে কিছু মানুষ কাজ করছে নিঃশব্দে। অনেক আলোর মধ্যে তাদের ছায়া ছায়া শরীর।

চেনা মিরপুর কেমন ধাতব আর যান্ত্রিক। ঘটাং ঘট, ঘটাং ঘট শব্দ হচ্ছে অনেক রাত পর্যন্ত। তখন মাথায় আসলো সায়েন্স ফিকশন লেখার কথা। কেমন হবে এই মেট্রোরেল হয়ে গেলে ঢাকার অবস্থা। বা তারও পরে, দেড়শো বছর পরে? কিন্তু ভাবা আর লেখা তো এক নয়। এর মধ্যে বৈভবের পাপিয়া জেরীন পাণ্ডুলিপি চাইলেন। আমি কাউকে না করতে পারি না। ওনাকেও হ্যাঁ বলে দিলাম।

হ্যাঁ বলে আর রেহাই পেলাম না অবশ্য। পাপিয়া নিয়মিত তাগাদা দিতে থাকলেন। আমি ওনাকে ডেট দেই আর মিস করি। পাপিয়া বলতে থাকেন, মেলার শেষে বই আনার চেয়ে না আনাই ভালো। আমিও নিজে তা বুঝি। কিন্তু আমার লেখার সময় কই? রাত ১টায় বাসায় ফিরে কি লেখা যায়? তবু সবসময় একটা তাগাদা ছিল বলে ভাবতাম, লিখতেই হবে। সে কারণে ১টায় ফিরে খেয়েদেয়ে ২টার দিকে বা তারও পরে ঘণ্টা খানেকের বা তার বেশি সময়ের জন্য লিখতে বসে পড়তাম।

মাথা অনেকটা ফাঁকা থাকত। আগে থেকে কোনো প্ল্যান থাকত না। এক বসায় তিন হাজার, চার হাজার বা দেড় হাজার শব্দ লিখেছি। দেড় কি দুই মাসে সাড়ে বত্রিশ হাজার শব্দ নামিয়ে ফেললাম। সাহিত্যে ভালো লেখার একটা সূত্র হলো, কোনো প্রেজুডিস বা আগাম প্রস্তুতি ছাড়া লিখে যাওয়া। সেটা করতে পেরে আমি বিস্মিত। লেখা শেষ করে পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে প্রুফ হওয়ার পর আরেকবার নিজের লেখা নিজেই এডিট করতে বসলাম। দেখলাম, বানান আর সামান্য কিছু ভুল আছে। তবে পড়ে ফেলা যাচ্ছে।

এর মধ্যে বাসেই একদিন পাণ্ডুলিপি দেখেছি। পাশে কখন ইউনিভার্সিটির এক বন্ধু এসে বসল, টেরই পেলাম না। নামার সময় সে শুধু বলল, ‘আজকে আর ডিস্টার্ব করলাম না।’ আমি পুরাই হতবাক। বারবার ডেট মিস করার কারণে আমার আর উপায় ছিল না। উপন্যাস লেখা খুব ঝামেলার কাজ।

আমি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের টার্গেট করতে চেয়েছিলাম। সেটা পেরেছি লেখায় রাখতে। আবার সায়েন্স ফিকশন রিডাররা হালকা বিষয় পছন্দ করেন না, তাই চেয়েছি যথেষ্ট আ্যডাল্ট রাখতে। আর টুইস্ট রাখতে। উপন্যাসের শেষ পর্বে আসার আগে বোঝা যাবে না, আসলে কী জন্য কী ঘটেছিল। পড়ার পর যেন সিক্যুয়েলের দাবি ওঠে, সেটাও রাখতে চেয়েছি।

বইটার কভার করেছেন তিনজন। সেটাও আরেক গল্প। আর লেখার সময় আমার ছেলে গহনের ল্যাপটপের কী খুলে ফেলা, নতুন কীবোর্ড কেনার ঘটনা তো আছেই। মনে মনে একবার ভেবেছিলাম, যে দুই ছেলের দোকান থেকে কীবোর্ড কিনেছিলাম, ওদের একটা কপি দিয়ে আসব।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ বইটি পাওয়া যাবে প্রকাশনা সংস্থা ‘বৈভব’র স্টলে। স্টল নম্বর ৭১৮