রথো রাফির গদ্য ‘নতুন হাসির ঢেউ লাগুক অবিশ্বাসীদের গায়ে’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২০

একটা ক্ষয়ে যাওয়া পেন্সিলের কথা কে ভাবে! সে অদৃশ্য হয় চোখ থেকে, এবং একই সাথে স্মৃতি থেকেও। যখন পুরো ছবিটা আঁকা হয়ে যায় বিশাল একটা ক্যানভাসে, তখন পেন্সিলটাকে দেখা যায় না। শুধু ছবিটাই দেখা যায়। আর পেন্সিলটার ক্ষয় নিয়ে কেউ ভাবে না। ছবিটা নিয়েই ভাবে।

আর ভাবে না, ছবিটার পেছনে একটা হাতের কতবার কেঁপে ওঠা আছে। একজন আঁকিয়ের হয়তোবা একমাস এর পেছনে একবারেই হারিয়ে গেছে— যা তার জীবনেরই একমাস। যা আর ফেরত আসবে না। একটা মাসের ফসল এই ছবিটা, যা হয়তো আঁকিয়ের নামটিও বয়ে বেরানোর সামর্থ্য রাখে না, যদিও আঁকিয়ে এ আশা করে। যদি সামর্থ্য রাখে, সময়ের দিক দিয়ে এ এক ধরনের আত্মপ্রসারণই বটে। কয়েক ফোঁটা চেতনাগত আয়ু লাভ। স্থানের দিক দিয়েও এ চেতনাগত প্রসারণই।

অথচ কেউ যখন একটা ছবি দেখে, ক্ষয়ে যাওয়া পেন্সিলটা আর দেখতে পায় না। দেখার রীতিও নেই। বরং অনাস্থাই আছে, আজকাল। পেন্সিলটাকে খুঁজতে আসা মানে সময়ের ছবিতে রূপান্তর হওয়ার হিসেব নেয়া— যার ওপর আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণই নেই। এর ফলে মনে হয়, যেন অনুপস্থিত ঈশ্বরকে ডেকে আনছি ছবির কর্তা হিসেবে। দর্শক হিসেবে ঈশ্বরের মন খুঁজতে এসেছি, ছবিটার বহুবর্ণ তাৎপর্যপুঞ্জ নয়— আমার সাথে ছবির দ্বন্দ্বটাকে নয়। ছবিটা দেখা ফেলে, ছবির সাথে নিজের দ্বন্দ্বকে ম্লান করে দিয়ে এক ধার্মিক ভক্তের মতো ঈশ্বরের ইচ্ছা খুঁজতে খুঁজতে ক্ষয়ে যাওয়া, আত্ম-উত্থানের বদলে আত্মলীন হয়ে যাওয়া।

এবং আজকালের প্রতিষ্ঠানের যে চাহিদা, মাস্টার-স্লেইভ আত্মীয়তা, তাকে উজ্জীবত রাখা, দীর্ঘায়ু করা! আজকাল তাই, আমরা ছবি দেখতে আসি, শুধু ছবিটা। আর ছবিটাকেই মূল্যায়ন করি। ছবির পেছনের কাউকে নয়।

কিন্তু একটা ছবি কি শুধুই একটা ছবি? নিশ্চয়ই এর চেয়ে অধিক কিছু, যে দেখে-পড়ে-ভাবে, তার কাছে। আবার কেউ তিলকে তাল করতে যেমন পারে, তেমনি তালকে তিলও করতে পারে— এমনই বিচিত্র হতে পারে দর্শক-শ্রোতা বা পাঠকের মন।

এই যে ক্যানভাসে অনুভূতির বাহন একেকটি রেখা, এসব রেখা কেবল আঁকিয়ের চিন্তার অনুসরণ নয়। কেবল আঁকিয়ের অনুভূতি নয়। যাকে আঁকছে তাকে যেভাবে আঁকিয়ে অনুভব করেছে, এবং এই ভাবনার সাথে যাকে আঁকছে তার ভাবনার সমান্তরালতা তার চারপাশেরই জনমনে যেভাবে রয়েছে, তাকেও স্বীকার করে গড়ে ওঠে এই স্বকৃত-রেখার বন। এই সবকিছু একাকার হয়ে মিশে একটা অনুভবরেখা, একটা সংবদনরেখা হয়ে ওঠা। ক্রমে একটা ব্যক্তিরেখা এবং একটা চিন্তারেখা হয়ে ওঠা। সবশেষে, একটা সর্বজনীন-সংবেদন-রেখা হয়ে ওঠা। সবমিলিয়ে আঁকিয়ে জেগে ওঠে— নিজের ভেতর থেকে, নিজের রক্তমাংস মথিত করে।

সে আত্ম-উদ্ভাসনের পথে হাঁটতে গিয়ে আত্ম-উদ্বোধনের নিবিড় লক্ষ্যে আত্মবিসর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর পেছনে শিল্পীর এক সপ্তাহ কি একমাসের শ্রমই কি যথেষ্ট? নাকি তার অনেক অনেক বেশি কিছু এই রেখা? আবার সর্বজনীন হয়ে ওঠা মানে তো আত্মজনীনতা নিঃশেষ হওয়ার সম্ভাবনাকেও চূড়ায় তোলা।

একটা ছবি আসলে একজন আঁকিয়ের আঁকা শুরুর দিন থেকে ওই ছবিটির আঁকার শেষ মূহূর্তের পুরো শ্রমের একটা ফসল। এভাবে একজনের আঁকিয়ে জীবন যদি দশ বছরের হয় তাহলে যে ছবিটা এখন সে আঁকলো আসলে সেটা দশবছরের বোধিজমাট একটা রূপ। বিশ বছর হলে, ছবিটা বিশবছরের বোধি-জমাট-এক-শস্য-শিলা।

তো আমরা এমন বাস্তবতা ভুলেই কোনো ছবির দিকে তাকাই। এর ইতিহাস পিছনে ফেলে নতুন সব মিথের জন্ম দিই। যেন নিজের কাছে নিজে বিস্মিত হওয়ার একটা জাদুঘোর গড়ে তুলতে গিয়ে নিজেদেরই ইতিহাস বিস্মৃত হওয়া।

কবিতার দিকটাও এর ব্যতিক্রম নয় মনে হয়। একটি কবিতাও সম্ভবত মাথারও অনেক দূরে তার জন্মসম্ভাবনাকে নির্মাণ করে চলে। চোখের জানালা টপকে, কানের সুড়ঙ্গ সাঁতরে, ত্বকের গভীরে ব্যাপ্ত হয়ে জিভের অভিজ্ঞতায় পরিবর্তিত হয়ে প্রেমিক-চোরের মতো মাথার নাগাল পেলেই কবিতার জন্ম-ক্রিয়া শুরু হয় মগজের তন্তুতে তন্তুতে। কবির মাথাও প্রতিটা বোধিকণাকে, যা ততণে বাগকণায় রূপ নিয়েছে, বাসনাসিদ্ধ এসব ক্রমোজোমকে তন্তুর গায়ে জুড়ে দিতে থাকে। একটা তন্তুর সাথে অপরটার ইপ্সিত বুনোনের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। আঙুলের ডগায় এসে তার জন্মপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

চোখের সামনে একটা ফুটফুটে বাচ্চার মতো হাসে, যে হাসির অর্থ সবাই জানে, শিশুটিও জানে নিশ্চয় (কবিতাটি জানে কিনা আমি কখনোই বুঝতে পারি না!)। এই জানা হয়তো ততটা যুক্তিভিত্তিক নয়, যতটা অনুভবভিত্তিক। যারা হাসিটি অনুভব করে নিজের নির্মাণ হিসেবে তারা ক্রিয়ামগ্ন হয়ে অপেক্ষায় বসে থাকে, আর ভুলচুকে অবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। আরো একটা নতুন হাসির ঢেউ লাগুক অবিশ্বাসীদের গায়ে, হাওয়া লাগুক— এই আশা নিয়ে বসে থাকা যেন ফুরোয় না। তখন বস্তুবিশ্বের ব্যর্থতার পাহাড়ে একটা নিঃসঙ্গ ফুলফোটার মতো বিস্ময় নিয়ে আসে কবিতা— কতটা পাঠকে তা ঘটে জানে না, নিজের কাছে তা কতটা অনুপম, জানে কবি। জানে, কী দুর্লভ!

আর আমরা তো জানি, জীবনের সপক্ষে লড়তে কোনও যুক্তি লাগে না, মৃত্যুকে মেনে নিতেই যুক্তি লাগে। যুক্তি সবসময়েই মৃত্যুসখা। আত্মহত্যা আর আত্মোৎসর্গে যুক্তি লাগে। যুক্তিই হারাকিরির বৈধতা সৃষ্টি করে, গণহত্যার, ক্ষমতার। যুক্তিই নিজের চেয়ে অন্যকে হত্যার দিকে একজনকে অধিক ঠেলে দেয়। জীবন নিজেই মৃত্যুর বিরুদ্ধে, আত্মহত্যার বিরুদ্ধে— যুক্তি নয়, ভ্রম উৎপাদন করে চলে, অবিরাম। এতেই এর সার্থকতা! তবে এর ভেতর দিয়ে আজও যুক্তির প্রয়োজনীয়তা, যুক্তিহীনতার প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যায় নি, দূর ভবিষ্যতেও হয়তো তা-ই থাকবে।

কবিতার দিকটাও এর ব্যতিক্রম নয় মনে হয়। অযুক্তি একে পুরো বুঝতে পারে না, যুক্তিও। অযুক্তি ও যুক্তির সঙ্গমজাত সন্তান হয়তো জেনেটিক্যালি অযুক্তির দিকেই কিছুটা ঝুঁকে থাকে। তবু স্বজ্ঞা থেকে সদূর প্রজ্ঞার দিকে আমাদের এক অফুরান যাত্রা। এ হয়তো যে-কারোর জন্যই অবিচ্ছেদ্য এক তীর্থযাত্রা— চির চলমান আর চির অফুরান— তাই মৃত্য সিদ্ধান্ত নয়, একটা দাঁড়ি— আকস্মিক দাঁড়ি, প্রজ্ঞার পূর্বের কোনও একটা অনামা জায়গায়। হৃদয়গত দিক দিয়ে, হয়তো তাই, কবিতা জীবনেরই মৃত্যুর বিরুদ্ধে জারি রাখা একটা অনিবার্যবিভ্রম!

অন্যস্থান অন্যসময় থেকে একটি কবিতা পাঠের ফলও একই রকম। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি মানে তো ভিন্নসময় আর ভিন্নস্থানই। ফলে সেই ব্যক্তির যতো প্রিয়ই হোক একটা কবিতা তা কোনোভাবেই পূর্ণমাত্রায় বোধগম্য থাকবে না— তখনো কবিতাটি নানা ব্যাখ্যাসম্ভব থাকবে, যদিও। লেখার সময়টিতে সম্ভাবনা, সামঞ্জ্যবোধ, একাত্মতা, যুক্তিকল্পনার মেলবন্ধন, আলোড়নসম্ভুত নানাকিছুই লেখাটিকে একটি অমোঘ চেহারার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়— ক্রমে হয়ে ওঠে একটা অজ্ঞাতপূর্বকিছু— যে লেখে তার সাপেক্ষেই। কিন্তু একবার জন্ম সম্পন্ন হলে, লেখকও সেই সময় ও স্থান থেকে ছিটকে পড়েন, সক্রিয়তা ও সংরক্ত অবস্থান থেকে দূরে চলে আসেন— এক অনুপম পাঠকে পর্যবসিত হন। নির্মাণ-সক্রিয়া বিচ্যুত হন। তখন তিনি স্মৃতি ও ভাবনার দখলে চলে যান, অনুত্তেজক ও প্রায়স্থিরতার এক বিন্দুতে— এখন তিনি কবিতাটি নিয়ে যা ভাবছেন, তা কবিতাটির রূপকে পাল্টাচ্ছে না আর। বরং কবিতার সংস্পর্শে এসে সংঘর্ষ-সমঝোতায় পাঠকব্যক্তিটির ভাবনা-অনুভূতিই পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে।

এখন কেবল একে ঘিরে মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়ন, যা স্বভাবতই খণ্ডিত। নির্বাচিত একসেট শব্দের ও বাগবিধির ওপর অধি-গুরুত্ব দিয়ে নতুন একটা অনুভবমণ্ডলে নিজের উত্তরণ ঘটানো। যা কবিতার গায়ে আঁচর কাটে না, বরং কবিতাই নানাভাবে ব্যক্তি-ভাবনার সংকোচন প্রসারণ ঘটায়— উদ্বোধন ও নিয়ন্ত্রণ করে চলে।

সম্ভাবনা থেকে সক্রিয়তার ভেতর দিয়ে একটা আপাত-ফলের দিকে কবির যাত্রা। আর একটা ফল থেকে নানা সম্ভাবনার দিকে বিপরীতমুখী যাত্রা একজন পাঠকের। যে সম্ভাবনা ও যুক্তি নিয়ে লেখক সমাপ্তিতে পৌঁছেন, সেই যুক্তি ও সম্ভাবনার আংশিক ভেতরে বা বাইরে নতুন নতুন যুক্তি ও সম্ভাবনার দিকে চলে যায় পাঠক। কবি: একটা আপন অভিজ্ঞতা থেকে আন্তরিক ফলের দিকে। পাঠক: বাহ্যিক একটি ফল থেকে আপন অভিজ্ঞতার দিকে চিন্তা-সংবেদনের উজ্জীবিত-ওড়াল।

ভাগ্যিস দুজন মানুষের জীবন কখনোই এক নয়, এবং একজনের দুটি মুহূর্তের রূপও কেমন ভিন্ন! তাই একটি কবিতা দুজন মানুষের চোখে তো এক নয়-ই, এমনকি কবি-লেখক ও পরমুহূর্তের কবি-পাঠকটির মাঝেও শতভাগ ঐক্য নির্মাণ অসম্ভবে— উদ্বোধন-অনুভূতিতে সামান্য সাদৃশ্য ছাড়া অন্যসব মূল্যারোপেও সমতা নেই! সময়, স্থান ও ব্যক্তির পরিবর্তনস্রোতে এসব মূল্যমান কেমন কম্পনশীল হয়ে বেঁচে থাকে। এজন্যই কোন কবিতা নিয়ে পাঠক সমালোচনা করতে বাধ্য হয়, কেটে ছেঁটে নিতে চায়, নেয়। নিজের মতো অনুভব ও ব্যাখ্যার দিকে অবিরাম যাত্রা করে, এ নিজেরই অভিজ্ঞতা-উপলব্ধির সাথে কবিতার দ্বন্দ অদ্ভুত প্রশমন ক্রিয়া, পাঠকের দায়, যার একটু পেছনেই সাধারণ ও নক্ষত্রসমাজের প্রভাববলয়, এই পাঠ তার সাথে মানিয়ে নেয়ারও আয়োজন অনেকটা। এ প্রভাববলয় অতিক্রম করতে চাওয়া পাঠক খুবই দুর্লভ।

পেন্সিলটির বিদায় হলো তো ছবিটির জীবন শুরু। শ্রমের পাহাড় মুছে ফেলে, ঘামের পাহাড় পায়ের নিচে লুকিয়ে কবিতা ঠিকই এর ওপরে ফুটে থাকে— নাম না-জানা নতুন একটা ফুলের মতো। কবি অদৃশ্যমান হয়ে যায়, কবিতাটি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে— কালের স্রোতে ভাসতে থাকে— কেউ দেখে, কেউ দেখে না। এক যুগ বিস্মৃত হয়, তো আরেক যুগ কোলে তুলে নেয়— ঘ্রাণপাগলা, রঙপাগলা, কখনো বা বোধিপাগলা হয়ে! প্রতিটি যুগের এত এত নতুন চাহিদা আর আয়োজনের ভিড়ে অনাথ ছেলের মতো পূর্বযুগের প্রায় সমস্ত কবিতা অদৃশ্যই থেকে যায়— মুখ দেখাতে পারে না ৯৯% কবিতাই! হায়, আমিও ৯৯% অনাথের জন্মদাতা যারা রোগা, তদুপরি বংশমর্যাদাহীন, আতরাফ এই জ্বলন্ত বর্তমানেই।

সময় ও স্থানের পরম্পরায় একটি কবিতা দিন দিন পানসে ও সাধারণ হয়ে এলেও, তা আসলে বোধিতে পূর্ণবোঝাপড়ার ফল নয়, একটা সামাজিক সাধারণ-ঝোঁক, একটি সামজিক ক্লান্তিবিন্দুই বলা যায় তাকে, পাঠকসমাজ যেখানে এসে থেমে গেছে বলে মনে হয়, সম্পৃক্ততা বা সুপূর্ণতা নয়। একটি কবিতা তাই সবসময়ে রহস্যের মাঝে কেমন তলিয়েই থাকে— এই নিয়তিবিরোধিতা ছাড়া কোনও অর্থ যেন দোহন করা যায় না তখন তা থেকে আর!

কবির জীবন, ভাগ্যিস ঠিক পেন্সিলের মতো নয়। অনেকটা ব্যাতিক্রমই। আর তা সামজিকমূল্যায়নপ্রসূত, শ্বাশত কিছু নয়। একটা কবিতার পেছনে জেগে থাকে বহুদিন কবি, মনে হয় যেন মরণাতীত! কবি কি, সে তো কেবলই একটা নাম। পেন্সিল স্কেচ, পেন্সিল পোর্টেট বললে যেমন অজ্ঞাত এক পেন্সিলের প্রসঙ্গ এর সাথে লীন হয়ে থাকে, এও তেমনি। বস্তুবিশ্বের সবই কেমন মরণশীলতায় মগ্ন, কবিতো বটেই। কবিতার গায়েও লাগছে সারাণ মরণ-বাতাস, একেবারেই প্রতিরোধবিহীন। তবু দীর্ঘায়ু হওয়ার প্রচেষ্টা নিরন্তর, সবকিছুতেই— এর জন্য কোনও যুক্তি লাগে না— তেমনি হয়তো কবিতার এবং কবিরও। বস্তুবিশ্বের সমান্তরালে ধারণারও অর্থাৎ ভাষারও অমরতা পৃথিবীতে নিঃশেষ হওয়ার পর— রক্তকাদার একটা পৃথিবীতে চিন্তা-সংবেদনের বুদ্বুদের আয়ুটাকে আরো একটাসেকেণ্ড বাড়িয়ে নেয়ার অন্ত নেই কারো।

আর তার অবলম্বন যখন শুধুই ভাষা, তখন কবিতাই যেন কবিকে মুগ্ধ করতে চায়, মাথা থেকে আঙুল অবধি। আর চোখ থেকে মগজ অবধি। কোন সুফল যুক্তিশীলতার পরিণামে নয়, নিজেরই সহজ-সক্ষমতার একস্রোতে ভেসে থাকার নিদারুণ দুর্বলতা— মায়াবি টান! নশ্বরতাকে মেনে নিয়েই নশ্বরতার বিরুদ্ধে অনির্বাণ জেগে থাকা, নিরুপায় রক্তাক্ত হওয়া। ব্যর্থতায় ও অনুপমের চির-সঙঘর্ষে আবর্তিত হয়ে চলা!

লেখক: কবি