রোহিঙ্গাদের নিয়ে খেলবেন না, মানুষ নিয়ে খেলা যায় না

মোরশেদ হাসান

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯

রোহিঙ্গাদের নিয়ে খেলবেন না। মানুষ নিয়ে খেলা যায় না। কখনও খেয়াল করেছেন ফুটবল, রেসলিং দেখার সময় মানুষ দুর্বল দলের পাশে দাঁড়িয়ে যায় কেন? কারণ সৃষ্টির আদিতে সে ছিল অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বণ্য প্রাণীদের আতঙ্কের মুখোমুখি হয়ে তার দিন কাটত। সেই স্মৃতি রয়ে গেছে বংশ পরম্পরায় তার জিনে।

 

রোহিঙ্গারা সুখে আমাদের এখানে আসেনি। পরিষ্কার এথনিক ক্লিনজিংয়ের মুখোমুখি হয়ে তারা প্রাণ বাঁচাতে এসেছিল। ইউরোপ-আমেরিকায় তারা যায়নি। ফাইভ স্টার হোটেলে তারা থাকে না যে তাদের হিংসা করতে হবে। ক্যাম্পে অমানবিক অবস্থায় তারা থাকছে। এটা আরাম- আয়েশের কোনো জীবন নয় যে কেউ হিংসা করবে! ভুলে গেছেন ১৯৭১ সালে ছবিতে দেখা পশ্চিমবঙ্গে বড়ো বড়ো পানির পাইপে বাংলাদেশি শরণার্থীদের থাকার চিত্র। তবে আজ কীভাবে আরেক দল মানুষকে লাথি দিয়ে বের করতে চান? এই কী শিক্ষা!

 

হ্যাঁ রোহিঙ্গারা একটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ ভূমে ফিরে যাবে। মনে রাখবেন নেটে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি লিখে সার্চ দিলেই পাবেন `রোহিঙ্গা` নামটি। আপনি তাদের বিরুদ্ধে রাজ্যের যুক্তি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারা অপরাধী, আপনার নির্ভেজাল সম্পদ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। পাহাড়ের গাছপালা শেষ করে দিচ্ছে।

 

যেখানে দশ-পনেরো লাখ মানুষ থাকে সেখানে ০% অপরাধ বলে কিছু নেই। বরং আমাদের চেয়ে তাদের অপরাধ কম। ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রিত এক কোটির ওপরে শরণার্থী কোনো অপরাধ করেনি? আপনি নিশ্চিত তো! তারা এখনও আমাদের ঘরে এসে খাবারে ভাগ বসায়নি। তাদের খাবার এবং অন্যান্য খরচ আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বহন করা হচ্ছে। বরং আমরা দুই পয়সা কামাই করে নিচ্ছি। অনেক চাকরি-বাকরির সংস্থান হয়েছে সেখানে। রোহিঙ্গা নারীদের ভোগ করার জন্য বহু টাউট-বাটপারের সৃষ্টি হয়েছে। সোনাগাছিতেও এরা ছিল। রোহিঙ্গাদের দিয়ে ড্রাগসহ অপরাধ কাজকর্মের হোতা কারা? রোহিঙ্গাদের আগে ফেনসিডিল, ইয়াবা ব্যবসা কারা করত? আর পাহাড়ের গাছ-গাছালি নষ্ট! এমনিতে অহেতুক গাছ কেটে বনজ সম্পদ নষ্ট হলে তার প্রতিকারে নামতে হয়। কিন্তু যখন মানুষ থাকে তখন আপনি মানুষের মায়া বাদ দিয়ে গাছের জন্য দুচোখের অশ্রু ছেড়ে দেন। এই মায়াবী অশ্রুর অধিকারী হয়ে কী করবেন!

 

নিজে কত বছর বাঁচবেন? এই ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবেন? আজ মরলে কাল আপনজনরাই পুঁতে দিয়ে আসবে। মানুষকে অহংকারী হতে নিষেধ করা হয়েছে। অবিসংবাদিতভাবে রোহিঙ্গারা মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। রোহিঙ্গারা কারা? হ্যাঁ রোহিঙ্গা একটি জাতি। পর্তুগিজ আর মগ দস্যুরা আমাদের দক্ষিণাঞ্চল থেকে মানুষের তালু গরম শলাকা দিয়ে ছিদ্র করে নৌকায় করে আরাকানে দাস হিসেবে নিয়ে গিয়েছিল তারাও মিশে আছে এই জাতিতে। তারা যে ভাষায় কথা বলে এটি বাংলা ভাষা, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রূপ।

 

আপনি লাথি মারতে চাইলেও মেরে বের করতে পারবেন না। পাছায় লাথি মেরে টিভির অ্যাডে বরিশাল যাওয়া যায়, বাস্তবে কোথাও যাওয়া যায় না। তবে লাথি মারার বাণী ছড়াচ্ছেন কেন? ভুলে যাচ্ছেন কেন এদের কাঁধের ওপর দিয়ে টপকিয়ে ফোনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলেন নোবেলের জন্য। নোবেল পাইতে চাইলেই হবে? নিজে নোবেল হতে হবে না!