লেখক মুশতাক আহমেদ

লেখক মুশতাক আহমেদ

‘সমালোচকদের নির্যাতনে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মার্চ ০২, ২০২১

সমালোচকদের গ্রেফতার ও নির্যাতনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)। ২ মার্চ নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিতে সংগঠনটি এ মন্তব্য করে।

বিবৃতিতে আইএফজের জেনারেল সেক্রেটারি অ্যান্থনি বেলাঙ্গার বলেন, “সমালোচকদের গ্রেফতার ও নির্যাতনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বাংলাদেশে আমাদের যেসব সহকর্মী শোকার্ত, তাদের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। এই লেখককে জেলে রাখা উচিত হয়নি, আর উচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত জেলে মৃত্যুর প্রশ্নই আসে না।”

তিনি আরও বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এটা একটা অপরাধ। কারাবন্দি সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। এ থেকে যথেষ্ট প্রমাণ আসে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের দাবি, মুশতাকের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, ফেসবুকে করোনা ভাইরাস মহামারি নিয়ে সরকার গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয় মুশতাক আহমেদকে। তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশি হেফাজতে মারা যান।

তাকে এদিন অচেতন অবস্থায় গাজীপুরের তাজুদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এদিনই স্থানীয় সময় রাত ৮টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুরের উচ্চ নিরাপত্তা সম্বলিত জেলখানার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট গিয়াস উদ্দিনের মতে, রাত ৭টা ১০ মিনিটের দিকে অচেতন হয়ে পড়লে দ্রুত এই লেখককে হাসপাতালে নেয়া হয়।

তবে এখনও পরিষ্কার নয়, তিনি কিভাবে মারা গেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পোর্স্ট মর্টেম রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া যাবে এ বিষয়টি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মাইকেল কুমার ঠাকুর নামে লেখালেখি করতেন মুশতাক আহমেদ। ২০২০ সালের ৬ মে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার কারণে তাকে বিচারহীনভাবে আটকে রাখা হয়। তিনি সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে লেখালেখি করতেন।

ছয়বার তার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দিয়ে, স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন বলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে, তার মৃত্যুকে রহস্যময় বলে মন্তব্য করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মুশতাকের মৃত্যুর পর পরই ঢাকায় বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। লেখক মুশতাকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর নিন্দা জানানো হয় এসব বিক্ষোভ থেকে। একই সঙ্গে এর জন্য সরকারকে দায়ী করা হয়।

করোনা ভাইরাস মহামারির সময় অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনামূলক পোস্ট বা রাজনৈতিক কার্টুন প্রকাশের কারণে মুশতাক ছাড়াও আহমেদ কবির কিশোরসহ দশজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে পুলিশ। কিন্তু মুশতাক আহমেদ,আহমেদ কবির কিশোর ও অন্য এক আসামির বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলতে থাকে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সরকারকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এটা ব্যবহার করে যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ তল্লাশি, জরিমানা অথবা গ্রেফতার করতে পারে। কারণ, এতে রয়েছে অস্পষ্ট কিছু ধারা। ওদিকে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, গত বছর সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীসহ ১৩৮ জনকে গ্রেফতারের তথ্য প্রমাণ্য আকারে ধারণ করেছে তারা।