সমালোচকরা নটি পাড়ার ভালো নর্তকি, ভালো বউ না
মৃদুল মাহবুবপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
সাহিত্য গবেষকদের সমস্যা হলো তারা ক্রিয়েটিভ না, অথচ সাহিত্য সংশ্লিষ্ট এরা। তারা খুব ভালো করে মহৎ কিছু দেখতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে, তাদের রুচির এন্টেনা একশোতে একশো। কিন্তু তাদের সৃষ্টির যন্ত্র বন্ধ্যা। ফলে তাদের ভেতর সৃষ্টির ব্যাকুলতা আছে মাত্র, সৃষ্টি নাই। ভালো সেক্স করতে জানলে যেমন বাপ হওয়া যায় না, তেমনি আমাদের সাহিত্য সমালোচকরা নটি পাড়ার ভালো নর্তকি, ভালো বউ না।
ফলে সাহিত্য সমালোচক নামক অধিকাংশ মূর্খ গবেষকরা অপর ক্রিয়েটিভ মানুষদের চিন্তার কম্পাইলেশন নিজের নামে লিখে নিজেদের সামন্য সাহিত্য জগতে আবির্ভূত রাখে। এই টুকুই তাদের সংযোগ সাহিত্য পল্লীর সাথে। এর বাইরে তারা একটা অশ্বডিম্ব প্রসবকারী বিচিত্র মিউল। কিন্তু ভাব দেখলে মনে হয়, তারাই সাহিত্যের নির্দেশনা দিতেছে।
উদাহরণ: বাংলাদেশের জীবনানন্দ গবেষকদের দিকে তাকান। তাদের মতো আনস্মার্ট, অল্প বিদ্যার লোক আমি দেখি নাই। মানে জীবনানন্দের কবিতা কয়টা পড়ছে, বিভিন্ন কবিদের জীবনানন্দের উপর লেখাপত্র পড়ছে, কলিকাতা কেন্দ্রিক নাম না-জানা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যদুমধুদের বইপুস্তক পড়ছে। তারপর তারা লিখতে বসছে। নিজের কোনও উপলব্ধি নাই। জীবনানন্দ আলোচনার ভেতর একটা ভাব আছে।
রবীন্দ্র গবেষক। একই। পাঞ্জাবি টাঞ্জাবি পরে। মেয়ে হলে কপালে বড় টিপ দেয়। নজরুল গবেষকরা সবচেয়ে মূর্খ যেহেতু কলকাতায় নজরুল গবেষণা কম। তাদের নকলের উৎস নাই। ফলে এদের চেপে ধরলে চুপ হয়ে যায়।
আর আছে লোকসাহিত্য গবেষক। হাসতে হাসতে পেটব্যাথা তাদের গবেষণা দেখে। লেখার পর নিজেরাও দ্বিতীয় বার পড়ে না নিজের লেখা। সকল লালন গবেষক রং-ঢঙের মাস্টার। কী কী বালছাল কয়, চুল দাড়ি রেখে ঘোরে। জয়গুরু জয়গুরু করে। পাতে নেয়া যায় না এগুলো।
আমি কোনরূপ ননক্রিয়েটিভদের সাহিত্য সমালোচনা পড়ি না। কোনও কবির উপর কারো লেখা পড়তে গেলে দেখি, লোকটি কবি কিনা। শুধুমাত্র সাহিত্য সামালোচক মূলক জঙ্গলদের লেখা হতে দূরে থাকা দরকার। এরা সাহিত্যকে মিসগাইড করে সাধারণ পাঠকের কাছে।
আমি এই সকল সাহিত্য সমালোচকদের কিছু গালি দিয়ে রাখলাম আগাম। কারণ সাহিত্য সমাজে তারা যতটা, তারা যে ততটা নয়, তা জানান দেয়া দরকার। এই অকম্মা সাহিত্যের পরজীবীদের থেকে সাধারণ পাঠককে দূরে রাখা দরকার। নিজেদের দুর্বলতাকে তারা সমগ্র সাহিত্য সমাজের দুর্বলতা হিসাবে দেখে। যে যে বিষয়ে গবেষণা করে তার বাইরে কিছু আর নেই। জানার সীমাবদ্ধতার এমন উদাহরণ কম। ফলে সীমাবদ্ধের মতামতের উপর সাহিত্যের ভালো মন্দের বিচারের ভার রাখা যায় না। তারা সাহিত্যকে সর্বদা পিছন থেকে, অতীতের নানা মাপের আলোকে দেখে ও সেই মান সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
বড় কথা হলো, বেশির ভাগ সাহিত্যিকদের সাহিত্য সামালোচনা কাজের কিছু না। ইনিয়ে বিনিয় নান্দনিক কথার সমাহার, অব্যবহারিক ভাবের আধান। বরং একটি সাহিত্যকে একজন অর্থনীতিবিদ, তাত্ত্বিক, দার্শনিক, মনোবিদ, সমাজবিজ্ঞানী কীভাবে দেশে তা বরং কাজের।
লেখক: কবি