সাহিত্য যত থিয়োরেটিক্যাল, তারচে বেশি সমাজ-রাজনৈতিক
মৃদুল মাহবুবপ্রকাশিত : জানুয়ারি ১৬, ২০২০
লেখালেখি আসলে একটা আর্ট। সর্বদা মৌলিক কিছু তৈরি করতে হবে, সেটা নয়। দুনিয়ায় অনেক এক্সপার্ট আছে, স্পেশালিস্ট আছে, গবেষক আছে। তারা তাদের আবিষ্কার, ইনসাইট ভাষা ভেতর দিয়ে সাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না। একজন লেখক তা পারে। আপনারা কি বিশ্বাস করেন, নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে থাকা অবস্থায় তার মাথার উপর আপেল পড়েছে আর তিনি অভিকর্ষজ বল আবিষ্কার করেছিলেন? তার জীবনী তেমন কিছু বলে না। এটা একজন লেখক লিখেছিলেন বিজ্ঞাননের তত্ত্বগুলো জনপ্রিয় করার জন্য। নিউটনের অভিকর্ষ থেকে এই লেখকের তৈরি করা গল্প কোনও অংশেই কম প্রয়োজনীয় নয় সমাজের জন্য।
লেখককে খুব মৌলিক কিছু আবিষ্কারের দায় দেয়ার কিছু নাই। সমাজের ব্যবহারিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টা তিনি কতটা সফলভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন, তার উপর নির্ভর করছে তার লেখকত্ব। ব্যবহারিক ভাবে শিল্পকে কীভাবে তিনি উপস্থান করছেন, সেটাই বিষয়। কবিতা বলেন, উপন্যাস বলেন, প্রবন্ধ বলেন, যাই হোক না কেন, সে সমস্তের সময়োপযোগী উপস্থাপনই ম্যাটার।
আরো একটা উদাহরণ দেই। নোয়াহ হারারি তুমুল জনপ্রিয় লেখক। যারা একটু সমকালীন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শনের খোঁজ খবর রাখেন তারা জানেন, হারারী কোনও মৌলিক চিন্তক কিম্বা আবিষ্কারক নন। তবে তিনি উপস্থাপক হিসাবে অতি অসাধারণ। নানা তত্ত্ব ও রিসার্চের ইন্টাররিলেশর ভিত্তিক কম্পাইলেশন এমন অভূতপূর্ব ভাবে খুব কম লোক করতে পারে। ফলে খুব মৌলিক কিছু না নিয়েও স্যাপিয়েন্স বা হমো দিয়ায় কোটি কোটি কপি বিক্রি হয়। এবং মূল আবিষ্কারকর্তা ও রিচার্সারা যে জনসংযোগ পারে নাই, হারারী তা পেরেছে। এটাই লেখকের অবদান।
লেখকরের মৌলিকতা থেকে ব্যবহারিক দিক কম জরুরি বিষয় নয়। আমাদের লেখকরা ব্যবহারিক হয়ে ওঠা থেকে, সময়কে সার্ভ করা থেকে তাত্ত্বিক হয়ে উঠতে চায়। কথা থেকে ভাষাপ্রধান হয়ে ওঠে। হাসি থেকে দাঁত বেশি দৃশ্যমান হলে শ্রোতার ভেতর যেমন ভীতি তৈরি হতে পারে, কোনও কোনও প্রবন্ধের বই আমাদের মর্মমূলে ভয় ধরিয়ে দিতে চাইবে। দেখো, পাঠক কত কিছু তুমি জানো না। লাইনের পর লাইন কোটেশন। জ্ঞান প্রদর্শনের জাদুঘর সেগুলো।
আমার গদ্যের বই ` কবিতাকলা ভবন`এ মূলত শিল্প-সাহিত্যের ব্যবহারিক বিষয়গুলো নিজের মতো লিখেতে চেয়েছি প্রবন্ধের বোরিং ফরম্যাট বাদ দিয়ে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি যত থিয়োরেটিক্যাল, তার থেকে বেশি সমাজ-রাজনৈতিক। ফলে আপনার সময়ের সাহিত্য যেমন, আপনার সময়টাও তেমন। এগুলোর একটা ডিল আমি করতে চেয়েছি। বইটা পাবেন একুশে বইমেলায় বৈভবের স্টলে।