সৌদিতে ধরপাকড়: নিঃস্ব হয়ে ফিরল ১৭৫ বাংলাদেশি

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯

অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিল তারা। কিন্তু ফিরতে হলো একেবারে খালি হাতে। রোববার রাত ১১টা ৭ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি-৮০৪ ফ্লাইটে করে ১৭৫ বাংলাদেশি কর্মী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

তারা যখন বিমানবন্দর দিয়ে নামল, তখন তাদের অনেকেরই ছিল খালি পা। কারো মুখে এবড়োথেবড়ো দাড়ি। কেউ আবার সৌদিতে যে পোশাক পরে কাজ করতো, সে পোশাকেই দেশে ফেরে। রোববার রাতে ঢাকায় পা রাখার পর বাড়ি যাওয়ার ও রাতের খাবার খাওয়ারও টাকা ছিল না তাদের কাছে।

তারা জানায়, কর্মরত অবস্থায় সৌদি প্রশাসনের ধরপাকড়ের শিকার হয়ে কোনো টাকা-পয়সা না নিয়েই তাদেরকে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে।

১৭৫ বাংলাদেশি কর্মীকে বিমানবন্দরে খাবার সরবরাহসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জরুরি সেবা দেয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।

১৭৫ জনের একজন চাঁদপুরের বাবুল হোসেন বলেন, “ছয় মাসের বৈধ আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) থাকা সত্ত্বেও কর্মস্থল থেকে ধরে আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার কোনো কথা শোনেনি সে দেশের প্রশাসন।”

সৌদি প্রশাসনের ওপর একই অভিযোগ করেছেন নরসিংদীর মো. জোবাইর, লক্ষ্মীপুরের ফরিদ, টাঙ্গাইলের আলিম, মনির হোসেন,  মুন্সীগঞ্জের শরিফ হোসেন, মেহেরপুরের সেলিম রেজাসহ অনেকে।

ফেরত আসা জোবাইর বলেন, “প্রতিদিন শত শত কর্মীকে সৌদি প্রশাসন গ্রেফতার করছে ও যাচাই-বাছাই না করেই ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। রিয়াদ ডিপার্টেশন ক্যাম্পে এখনো হাজারখানেক বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে।”

ফেরত কর্মী মনির হোসেন বলেন, “বৈধ আকামা থাকা সত্ত্বেও কয়েক দিন আগে আমাকে জোর করে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর কিছু দিন সেখানে রেখে দেশে ফেরত পাঠালো। আমার মতো এমন অনেক ভুক্তভোগী সেখানে রয়েছে।”

ফেরত আসা এসব কর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে, তাদের কফিল (মালিক) আকামা নতুন করে নবায়ন করেনি বা আকামা বাতিল করে দিয়েছে। ফলে তারা সেখানে থাকতে পারেনি। এক্ষেত্রে সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে। জেলখানায় অনেক বাংলাদেশি আটকে আছে। তাদের অনেকের আকামা নবায়ন করা হয়নি।

সৌদি প্রেস এজেন্সির সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের অবৈধভাবে কাজ করা কর্মীদের ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি সরকার। এ পর্যন্ত কাজ ও থাকার নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে প্রায় ৩৮ লাখ বিদেশিকে গ্রেফতার করেছে সৌদি প্রশাসন। সাড়ে তিন মাসে গ্রেফতার হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ বিদেশি। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতারের মোট ৯ লাখ ৪০ হাজার ১০০ বিদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি সরকার।