হতাশা গ্রাস করলেই হেরে যাবেন

শিমুল বাশার

প্রকাশিত : মার্চ ২৪, ২০২০

ক্রিয়েটিভ মানুষ মাত্রই আইসোলেশন সন্ধানী। আইসোলেশন পেলেই তারা সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠেন এবং তখন কিছু না কিছু সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমার মতো যারা নন ক্রিয়েটিভ তারা যদি কোনো কারণে আইসোলেশানে থাকেন তবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন বারবার মনে হতে থাকে, এ বড় দুঃসময়! ভয়ানক মন খারাপ হয়ে থাকে সব সময়।

খেয়াল করে দেখবেন, এ সময় যদি কোনো কারণে বাইরে বের হন মনটা একটু হালকা লাগছে। এর কারণটা আসলে কী? কারণ বাইরে বের হলে অনেক মানুষের মুখ দেখা যায়, নিজেকে শুধু একাই অসহায় মনে হয় না তখন। সাহস পাওয়া যায়। মনে হয়, মরলে সবাই মিলেই মরবো। আপনার আমার এই সাইকোলজিটাই করোনা প্রতিরোধের জন্য এখন প্রধান বাধা।

ধরেন, কোথাও আগুন লাগলো। সে সময় দেখবেন কিছু মানুষ সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেন দাঁড়িয়ে থাকে, জানেন? বিপদের দিনে মানুষই মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে। এ কারণে তারা বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াতে চায়। এটাকে নেতিবাচক ভাবে দেখার এত কিছু নাই। খেয়াল করলে দেখবেন, তাদের মধ্যেই কেউ কেউ আছেন উদ্ধার কাজে সেসময় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এই দলটা ভলান্টারি মেন্টালিটির মানুষ।

স্যালুট এরকম মানুষদের। তারাই এখন দলে দলে নিজ উদ্যোগে স্যানিটাইজার বানিয়ে বিতরণ করছেন, মাস্ক বানাচ্ছেন, পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরে, ডাক্তারদের জন্য পিপিই বানাচ্ছেন। আর ক্রিয়েটিভরা কম খরচে ঘরে বসেই কিভাবে স্যানিটাইজার বানানো সম্ভব তা নিয়ে চিন্তা করছেন, কিভাবে জাতিকে এই দুর্যোগের কালে বাঁচিয়ে রাখা যায় তার পরিকল্পনায় সহায়তা করছেন, করোনা রিলেটেড আর্ট ওয়ার্ক করছেন, প্রেরণাদায়ক মিউজিক সৃষ্টি করছেন কিংবা বিভিন্নরকম গবেষণাপত্র পড়ে করোনার গতিবিধির খোঁজ রাখছেন, দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন ভালো-মন্দের।

মনে রাখবেন, পৃথিবীর অনেক অনেক প্রাচীন সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে এমন মহামারিতে। সুতরাং ভয়ের কিছু নাই। মানুষ এসব ভয়াবহ ডিজাস্টার জয় করেই মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রেখেছে। যেহেতু প্রবলেমটা বৈশ্বিক সেহেতু সমাধানটাও বৈশ্বিক ভাবেই আসবে। এ অবস্থায় হতাশ না হয়ে দম নিন এবং টিকে থাকুন কিছুদিন। ভালো থাকুন প্রতিটি দিন। পরিচ্ছন্ন সময় কাটান। বর্তমানে বাস করুন। হতাশা গ্রাস করলেই হেরে যাবেন তখন মরার আগেই মরবেন। এই দুর্যোগের কালে কিভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন, সেই চিন্তা করুন।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য কত কষ্ট করছেন, আরো না হয় করবেন। এই পৃথিবী আপনার আমার। একদিন ভাইরাস জয় করে সুন্দর পৃথিবীর মুখ দেখবো, দেখবোই। চলেন সবাই মিলে সেই ফাইটটা শুরু করি। আমাদের সুন্দর সময় আসবেই। শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত সবাইকে বাঁচানোর ফাইট করবো, নিজে বাঁচবো বিকজ আই এম লেজেন্ড।

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক গণমাধ্যমকর্মী