কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০

কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের আজ জন্মদিন। ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মাজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তার পিতার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ এবং মাতার নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন।

শিক্ষাজীবনের শুরুতে শহীদুল্লাহ কায়সার সরকারি মডেল স্কুলে এবং পরে `মাদরাসা-ই-আলিয়া`র অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৬ সালে তিনি এখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন এবং অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু শেষ করেননি।

একই সাথে তিনি `রিপন কলেজে` (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইন বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তার বাবা ঢাকায় চলে আসেন এবং শহীদুল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। তবে এ ডিগ্রি লাভ করার আগেই লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটান।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় সহযোগী আল-বদরের হাতে অপহৃত হন। ধারণা করা হয়, অপহরণকারীদের হাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শহীদুল্লা কায়সার সমসাময়িক রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও ১৯৫১ সালে পার্টির সদস্য হন।

পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি দেশপ্রেমিক ছদ্মনামে রাজনৈতিক পরিক্রমা ও বিশ্বকর্মা ছদ্মনামে বিচিত্রা কথা শীর্ষক উপ-সম্পাদকীয় রচনা করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনে তার রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে ১৯৫২ সালের ৩ জুন তিনি গ্রেফতার হন।

এ সময় তাকে সাড়ে তিন বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই পুনরায় গ্রেফতার হন। কয়েক বছর পর মুক্তি পান। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয়। জননিরাপত্তা আইনে তাকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আটক রাখা হয়।

শহীদুল্লা কায়সার সাংবাদিকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিচালিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫৮ সালে দৈনিক সংবাদ-এর সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। এ বছরই অক্টোবরে গ্রেফতার হন। ১৯৬২ সালে মুক্তি পেয়ে পুনরায় দৈনিক সংবাদে যোগদান করেন এবং তার পরবর্তী জীবন সাংবাদিকতা করেন।

তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হচ্ছে, সারেং বৌ (১৯৬২) (চলচ্চিত্র রূপ ১৯৭৮), সংশপ্তক (১৯৬৫), কৃষ্ণচূড়া মেঘ, তিমির বলয়, দিগন্তে ফুলের আগুন, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, চন্দ্রভানের কন্যা ইত্যাদি।

শহীদুল্লাহ কায়সার ব্যক্তিগত জীবনে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পান্না কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সার নামে দুই সন্তান রয়েছে। পান্না কায়সার একজন লেখক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ যিনি সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য (১৯৯৬-২০০১) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শমী কায়সার টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী। শহীদুল্লার ভাই জহির রায়হান ছিলেন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার।

শহীদুল্লাহ কায়সার সাহিত্যকর্মের জন্য কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হন। এগুলো হলো, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৮৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৮)।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য তাকে তার বাসা ২৯, বিকে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি।