মর্ত্যলোকের ইন্দ্রপুরী শ্রী চিন্ময় সেন্টার

কাজী জহিরুল ইসলাম

প্রকাশিত : মে ০২, ২০২৪

কিছু মানুষ আছেন যাদের সংস্পর্শ আমাদের আলোকিত করে। কিছু গৃহ আছে যেখানে পা রাখলেই ইতিবাচকতার আলোয় হৃদয় উদ্ভাসিত হয়। কিছু উদ্যান আছে যেখানে দাঁড়ালেই শান্তির হাওয়া এসে আত্মাকে প্রশান্ত করে। তেমন একজন মানুষ ছিলেন বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক ধ্যানসাধক ও শান্তির দূত শ্রী চিন্ময়। তেমন একটি গৃহ নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় অবস্থিত `শ্রী চিন্ময় কেন্দ্র ধ্যান জাদুঘর (শ্রী চিন্ময় সেন্টার পিলগ্রিমেজ মিউজিয়াম) এবং তেমনই একটি উদ্যান শ্রী চিন্ময় অ্যাস্পিরেশন গ্রাউন্ড। এর আগেও বেশ ক`বার সেখানে গিয়েছি। বারবারই ওখানে যেতে ইচ্ছে করে। আজকের যাওয়ার মধ্যে ছিল খানিকটা আনুষ্ঠানিকতাও।

গুরু শ্রী চিন্ময়ের ধ্যান-শিষ্য গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব দিমা নেফারতিতি ও শ্রী চিন্ময় ওয়াননেস হার্ট সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মহাতপা পালিত— এই দুজন মিলেই আজকের আয়োজনটি করেন। বার্লিন থেকে নিউইয়র্কে বেড়াতে এসেছেন কবি, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নাজমুন নেসা পিয়ারী। যাকে নিয়ে কবি শহীদ কাদরী লিখেছিলেন তার কালজয়ী কবিতা ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’। দিমার মাথায়ই চিন্তাটা প্রথম আসে। ফোন করে বলেন, জহির ভাই, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে গুরুর পিলগ্রিমেজ জাদুঘর আপনি পরিদর্শন করেন। তাছাড়া ‘পিস রান টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড’ পাবার পরে শ্রী চিন্ময় সেন্টারের প্রধান সিস্টার রঞ্জনার সঙ্গে আপনার একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়াও খুব জরুরি। এদিকে পিয়ারী আপাও বার্লিন থেকে এসেছেন। আপনারা দুজনই আমার প্রিয় মানুষ। আপনি রাজি থাকলে আমি আপনাদের দুজনের জন্য এই রোববারে একটি অফিশিয়াল ভিজিটের আয়োজন করতে চাই।

দিমা মুখে বললো বটে ‘আপনি রাজী থাকলে’, কিন্তু আমি জানি, আমার এই ভগ্নি আমার মুখ থেকে হ্যাঁ ছাড়া আর অন্য কোনো কিছুই শুনতে চান না। আমারও বা কী সাধ্য দিমাকে না বলি। একদিনের মধ্যেই সব আয়োজন করে ফেলে দিমা। পুরো প্রোগ্রামের মিনিট-সেকেন্ড ধরে সময়সূচি আমাদের জানিয়ে দেয়। পিয়ারী আপার কিছুটা যানবাহন জটিলতা ছিল। কিন্তু তা সত্বেও আমরা সময়টা ঠিকমতোই ধরতে পেরেছি। অ্যাস্পিরেশন উদ্যানে তখন মেডিটেশন চলছিল। আমরা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই রঞ্জনা ঘোষের উদ্ভাসিত হাসিমুখ, হাস্যোজ্জ্বল নয়না এবং সেন্টারের আরও অনেকে আমাদের রিসিভ করেন।

চণ্ডিকা অনেক আগে থেকেই আমাদের জন্য সদর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটা কথা এখানে বলা খুব দরকার, এই যে রঞ্জনা, নয়না, চণ্ডিকা নামগুলো শুনছেন, ওরা কেউ কিন্তু বাঙালি নয়, সকলেই আমেরিকান, শ্বেতাঙ্গিনী। গুরু চিন্ময় তার সকল অনুসারীকে একটি করে বাংলা নাম দিয়েছেন এবং শিষ্যরা পরিবারের দেয়া জন্মনাম এফিডেভিট করে গুরুর দেয়া নাম নিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করেন।

শ্রী চিন্ময়ের সকল ভক্তই বাংলা নামের অধিকারী। মেয়েরা শাড়ি পরেন এবং ছেলেরা নীল রঙের পাঞ্জাবি পরেন। অ্যাস্পিরেশন গ্রাউন্ডে যখন দেখি শাদা, কালো ইউরোপীয়, আফ্রিকীয়, মার্কিনি সকল নারী-পুরুষের পরনে বাঙালির পোশাক, বাঙালির সাজ, অনেক বাংলা শব্দের অর্থই তারা জানেন, নিজেদের বাংলা নাম বলে পরিচয় দেন, শ্রী চিন্ময়ের লেখা গানগুলো বাংলায় পরিবেশন করেন, বাংলা কবিতা পড়েন, তখন মনে হয়, বাংলা ভাষার বিশ্বায়নে গুরু চিন্ময়ের চেয়ে বেশি কাজ আর কোনো বাঙালি করেছেন! আমি মনে করি, আরও বহু আগেই তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা উচিত ছিল।

রঞ্জনা গুরুর গুরু হয়ে ওঠা, ধীরে ধীরে এই সেন্টার গড়ে তোলা, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার বহুমুখি কাজ করা, গান করা, কবিতা লেখা, ছবি আঁকা এবং ক্রীড়ায় আত্মনিয়োগ করা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের নাতিদীর্ঘ ব্রিফিং দেন এবং নান্দনিকভাবে সজ্জিত এই নন্দনকানন, শ্রী চিন্ময় অ্যাস্পিরেশন গ্রাউণ্ডের সকল কিছু ঘুরে ঘুরে দেখান। উদ্যানের চারপাশে অতি সুশৃঙ্খলভাবে বিভিন্ন উচ্চতায় গুরুর ছবি, প্রতিকৃতি এমন নান্দনিক পুষ্পসজ্জায় সজ্জিত এবং উদ্ভাসিত যে, মনে হয় যেন তিনি সর্বত্রই হেঁটে বেড়াচ্ছেন, দাঁড়িয়ে আছেন, ভক্তদের বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এতটা আনুষ্ঠানিকতা হবে, বুঝতে পারিনি। হঠাৎ নির্দেশনা এলো, আমি ও পিয়ারী আপা যেন রঞ্জনার সঙ্গে মঞ্চে উঠি। গ্যালারিতে তখনও কয়েক ডজন ডিসাইপল স্পিকারে ভেসে আসা গুরুর কণ্ঠে উচ্চারিত আধ্যাত্মিক বাণী শুনছেন। আমার লেখা কিছু বই সঙ্গে ছিল, রঞ্জনাকে দেব বলেই নিয়ে যাই। দিমা ও মহাতপা দিদি বলেন, ওগুলো যেন মঞ্চে, আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করি। রঞ্জনা পরম মমতায় বইগুলো গ্রহণ করেন, এবং আমাকে হাতের ইশারায় মাইক্রোফোন দেখিয়ে বলেন, আমি যেন কিছু বলি।

শ্রী চিন্ময় সম্পর্কে আমি খুব সামান্যই জানি। তিনি বাংলাদেশের মানুষ, চট্টগ্রামে জন্ম, ১২ বছর বয়সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে চলে যান শ্রী অরবিন্দের আশ্রম পণ্ডিচেরিতে। সেখানেই ধ্যান-সাধনার দীক্ষা গ্রহণ করেন। মধ্যরাতের পরে যখন কিশোরের দুচোখে রাজ্যের ঘুম তখন কে যেন তার বাহুতে খোঁচা দিয়ে বলত, বৎস্য উঠে পড়ো, এখন ধ্যান করার সময়। তিনি লাফ দিয়ে বিছানার ওপর উঠে বসতেন। মনে হতো গুরু অরবিন্দই তাকে জাগিয়ে দিয়েছেন। এরপর সারা রাত চলত ধ্যান সাধনা। এভাবেই চট্টগ্রামের চিন্ময় কুমার ঘোষ হয়ে ওঠেন বিশ্বখ্যাত আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী চিন্ময়।

অবিশ্বাস্য তার কাজের ভলিউম। অনবরত লিখতেন, ছবি আঁকতেন, গান করতেন। সকল বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। তার রচিত পুস্তিকার সংখ্যা ১৬০০, গান লিখেছেন ২১ হাজার, যার মধ্যে ১৩ হাজার গান তিনি লিখেছেন মাতৃভাষা বাংলায়, বাকি ৮ হাজার ইংরেজিতে। তার রচিত কবিতার সংখ্যা ১ লক্ষ ১৫ হাজার। বিশ্বশান্তির এই দূত একজন পটুয়াও ছিলেন, শান্তির প্রতীক হিসেবে তিনি প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার পাখির ছবি আঁকেন। তিনি মনে করতেন, সঙ্গীত হচ্ছে মানুষের হৃদয়ের ভাষা। এই ভাষা খুব দ্রুত এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। পৃথিবীর সকল মানুষ, সকল প্রাণী যুক্ত, এই বোধ জাগাতে পারলে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে সঙ্গীত একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাই তিনি আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশে দেশে ৮০০টি পিস কনসার্ট করেন।

১৯৬৪ সালে, ৩৩ বছর বয়সে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ধ্যান-সাধনা কেন্দ্র, বাড়তে থাকে ভক্তের সংখ্যা। ১৯৭০ সালে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব উ থান্ট বিশ্বশান্তির জন্য শ্রী চিন্ময়ের ধ্যান-সাধনাকে কাজে লাগাতে চান, গুরুকে অনুরোধ করেন সপ্তাহে দুদিন তিনি যেন জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ে ধ্যান-চর্চা পরিচালনা করেন। সেই থেকে আজ অবধি তা অব্যাহত আছে।

আমি গুরু চিন্ময়ের বেশ কিছু গ্রন্থ পাঠ করেছি। ‘দিব্যপুরুষ’ গ্রন্থটি ধ্যান-সাধকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা মনে হয়েছে। তিনি তার ধ্যান-সাধনার জার্নিটা তুলে ধরার মধ্য দিয়েই এই নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন। একটি নির্দেশনা এখানে উল্লেখ করি। তিনি বলেছেন, পরমাত্মার অনুসন্ধান একটি লম্বা জার্নি, এই যাত্রাপথের দুপাশে অনেক মনি-মানিক্য চমকাতে দেখবে, অনেক অতিন্দ্রীয় ক্ষমতা তোমার মধ্যে দেখা দেবে, এসবে প্রলুব্ধ হয়ে থেমে যেও না, চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবে।

আমরা অনেক পীর, ফকির ও সাধুকে দেখি, এইসব ক্ষমতার চর্চা করেন এবং অর্থ উপার্জন করেন। তারা ক্রমশ নিস্তেজ ও লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়েন। পঞ্চাশে উপনীত হয়ে শ্রী চিন্ময় শান্তির জন্য দৌড় কর্মসূচির আয়োজন করেন। এইসব দৌড় কর্মসূচির একটি খুবই অবিশ্বাস্য। ৫২ দিনে ৩ হাজার একশো মাইল দৌড়ানো। সকাল ৬টা থেকে মধ্যরাত অবধি ভক্তরা দৌড়ান, এভাবে চলে টানা ৫২ দিন। ঝড়,বৃষ্টি ও তুষারপাত কোনো কিছুই তাদের থামাতে পারে না। শুনে হয়তো অনেকেই ভাবছেন, এও কি সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব তো বটেই, এই প্রতিযোগিতা প্রতি বছর একবার করে হয়। ৬ থেকে ১৫ জন প্রতি বছর এই দীর্ঘ পথ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করেন।

আপনারা অনেকেই স্বচক্ষে দেখেছেন, যাদের সেই সুযোগ হয়নি তারা ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন, শ্রী চিন্ময় কী করে থাইল্যান্ডে হাতি উত্তোলন করেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তিনি এক হাতে একাধিক মানুষ উত্তোলন করেছেন, প্রায় দেড় হাজার পাউন্ড ওজন ঊরুর ওপর ভর রেখে উত্তোলন করেছেন। এই কাজগুলো কোনো একক মানুষের পক্ষে বিজ্ঞান সম্মতভাবে করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানের বাইরেও যে একটি সত্য জগৎ আছে শ্রী চিন্ময় তা-ই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন।

আপনি-আমি যখন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রাণীকুলের সঙ্গে যুক্ত তখন আমরা অসীম ক্ষমতার অংশ হয়ে উঠি। সেই ক্ষমতা দিয়ে হাতিকে শূন্যে তুলে ফেলা তো কোনো ঘটনাই নয়। কিন্তু যখনই আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই তখনই দুর্বল হয়ে পড়ি। এই দর্শনই শ্রী চিন্ময় আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন।

তিনি নিজে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমার বয়স প্রায় সত্তর। আমি কোনো ভারোত্তলক নই। এটা আমার পেশা নয়। কিন্তু কেন আমি এত অধিক ভার উত্তোলন করে মানুষকে দেখাই? আমি তাদের বোঝাতে চাই, যার শক্তি আছে তার কাজ অন্যকে আক্রমণ করা নয়, তার কাজ অন্যকে সাহায্য করা, শান্তির জন্য কাজ করা।”

সেন্টারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এইসব কথার কিছু উচ্চারণ করি। সেই সঙ্গে পৃথিবীর সকল প্রাণী যে যুক্ত এর পক্ষে আমার নিজের কিছু বিশ্বাসের কথাও বলি।

একদিন সিস্টার চণ্ডিকা আমাদের বাড়ির সানরুমে বসে গুরুর প্রয়াণ দৃশ্যটি বর্ণনা করেন। বেশ কয়েকবারই তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সেবার, মানে ২০০৭ সালেও হয়েছিলেন। সে-বছর তিনিই পাবেন এইরকম একটা কথা বেশ জোরে-শোরেই শোনা যাচ্ছিল।

কিন্তু না, ঘোষণা এলো তিনি নন, ২০০৭ সালের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন অন্য একজন আমেরিকান, দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর। আরও বেশ কয়েক বছর আগেই তিনি দেহত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, সব ঠিকঠাকও ছিল, কিন্তু হঠাৎই তিনি সিদ্ধান্ত বদলান, না, আরও কিছু বছর তিনি বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করতে চান। এরপর তার কাজের গতি আরও বেড়ে গেল। আরও বেশি পিস কনসার্ট, আরও বেশি পিস রান। যেহেতু নোবেল পুরস্কার মরণোত্তর দেয়া হয় না, তাই তিনি দেহত্যাগের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেন। কিন্তু ২০০৭ সালে যখন হলো না, আর দেরি করতে চাইলেন না, ঐদিনই দেহ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

অ্যাস্পিরেশন গ্রাউন্ডে মেডিটেশন চলে সন্ধ্যার অনেক পর অব্দি। তিনি ভক্তদের বলেন, যারা আরও একটু বেশি মেডিটেশন করতে চাও আমার সঙ্গে চলো। তার বাড়িতে মধ্যরাত পর্যন্ত মেডিটেশন চলে। সাধারণত কয়েকজন ভক্ত-স্বেচ্ছাসেবী থেকে যান, সব সাফ-সুতরো করে, গুছিয়ে, গুরু শুয়ে পড়লে তারা প্রস্থান করেন। এক পর্যায়ে গুরু সোফা থেকে উঠে দাঁড়ান, কয়েক মিনিট রিলাক্সেশন ব্যায়াম করেন, তারপর সোফায় বসে উপস্থিত ভক্তদের বলেন, তোমাদের যথেষ্ঠ সাহস আছে তো, সব কিছু সামলে নিতে পারবে তো? কিন্তু কি সামলাতে হবে, কেন এত সাহসের দরকার, এসব কিছুই বলেন না। এরপরই তিনি ঢলে পড়েন।

ডাক্তাররা দেহ পরীক্ষা করেছেন, না, হার্ট অ্যাটাক বা কোনো ধরনের অসুখে নয়, স্বাভাবিক মৃত্যু। অ্যাস্পিরেশন গ্রাউন্ডেই তাকে সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন। আসলে কি ঘুমিয়ে আছেন? না, তার ভক্তরা মনে করেন, গুরু চিরজাগরুক, তিনি জেগে আছেন, এখানেই আছেন। দেখছেন আমাদের সকল কর্মকাণ্ড।

আমরা মঞ্চ থেকে নেমে আসি। একটি ঝুড়ি থেকে করতল ভরে ফুল তুলে নিই। গুরুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। ফিরে এসে বসি গ্যালারিতে। এরপর রঞ্জনা ঘোষ জানান, ওখানে প্রসাদ রাখা আছে, সাধারণত মেডিটেশন শেষে আমরা প্রসাদ গ্রহণ করি, চলুন প্রসাদ নিই। অতি সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে আমরা গুরুর সমাধি প্রদক্ষিণ করে প্রসাদ-বেদীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রসাদ ছিল নাশপাতি ও সিরিয়াল বার। তুলে নিয়ে রঞ্জনার ইশারায় পুনরায় গ্যালারিতে গিয়ে বসি। সকলের প্রসাদ নেওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা সকলেই গ্যালারিতে চুপচাপ বসে থাকি। যেন প্রসাদগ্রহণও একটি উপভোগ্য, আনন্দময় ইভেন্ট, এটিও ভক্তিভরে আনন্দচিত্তে দেখতে হয়। সকলের প্রসাদ নেওয়া হয়ে গেলে রঞ্জনার নির্দেশিত পথে আমরা ধীরে ধীরে জাদুগৃহের দিকে এগুলাম, যেখানে গুরু পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে, যারা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, ক্রীড়াবিদ, চিত্রকর, সঙ্গীতজ্ঞ, আনুষ্ঠানিক দেখা-সাক্ষাৎ করতেন।

ভাঙা এপ্রিল হেলে পড়েছে মে মাসের কোলে, আকাশে ঝকঝকে রোদ। নিউইয়র্কের স্প্রিং যদি এমন উষ্ণ হয়ে ওঠে আমরা আড্ডা দিতে বেরিয়ে পড়ি। শীতের দেশের মানুষেরা এরকম একটি  দিন পেলে কিছুতেই ঘরে বসে থাকে না। দিমাকে মনে মনে একটা লম্বা ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম এই দিনটিকে বেছে নেবার জন্য, যখন আমরা অ্যাস্পিরেশন গ্রাউন্ডের পেছনে, গ্যালারি টপকে উঠছিলাম টিলার ওপরে, যেখানে হালকা নীল রঙের অন্যরকম এক দ্যুতি নিয়ে জ্বলজ্বল করছে পিলগ্রিমেজ মিউজিয়াম।

শ্রী চিন্ময় সেন্টারের প্রতি আমার বিশেষ আকর্ষণের একটি বড় কারণ এই যে, এখানকার প্রতিটি বস্তু ও কর্মসূচি এত গোছানো ও পরিচ্ছন্ন যা মনের মধ্যে একটা স্বর্গীয় দোলা তৈরি করে। অর্জুন যখন তার পিতা দেবরাজ ইন্দ্রের আমন্ত্রণে ইন্দ্রপুরীতে গেলেন, তখন সেখানকার যেসব সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছিল, শ্রী চিন্ময় সেন্টারে এলে আমি যেন সেইসব দৃশ্যই দেখতে পাই। এখানে গন্ধর্ব আছেন, আছেন তিলোত্তমা, ঊর্বশী, রম্ভা, ঘৃতচী, মেনকারাও। তারা গুরুর রচিত গানে কণ্ঠ দেন, ভক্তির অমৃত রসধারায় প্লাবিত করেন এই পবিত্র অঙ্গন।

সেন্টারের ডেকোরেশনের উপকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নানান রঙ ও আকৃতির তাজা পুষ্প, কারুকার্যময় সুঁচিকর্মের সমাহার এবং তা বিচিত্র বর্ণের, রঙ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যেন স্বয়ং বিশ্বকর্মার পরামর্শ নিয়েই করা হয়েছে সবকিছু। বিশ্বকর্মার কথা এজন্য বললাম, এই যে বিভিন্ন উচ্চতার অসংখ্য বেদী, মঞ্চ, গ্যালারি এবং এসবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আলো ও প্রাণ-স্পন্দনের ঢেউ এই অসাধারণ সমন্বয় তো কেবল তিনিই করতে পারেন যার মাথায় বিশ্বকর্মার আশির্বাদের হাত রয়েছে। বেদ, রামায়ন, মহাভারতের বিভিন্ন পর্বের চিত্রায়ণ নির্মিত হয়েছে সেন্টারের সর্বত্র, নানান জায়গা থেকে সংগৃহীত ও উপহার হিসেবে পাওয়া কাষ্ঠ, পিতল, ব্রোঞ্জ ও প্রস্তর-নির্মিত নান্দনিক ভাস্কর্য ও কারুকর্মের সমন্বয়ে। আছে নানান আকৃতি ও উচ্চতার প্রদীপ, জ্বলছে ধুপ। ধুপ ও পুষ্পের গন্ধে এক অপার্থিব মুগ্ধতা তৈরি হয়েছে। এখানে এলে মনে হয়, আমি যেন ভারতবর্ষের কোনো এক সুরের ভূবনে ঢুকে পড়েছি। কারণ এখানে-ওখানে সাজানো আছে ভারতীয় সঙ্গীতের নানান ইন্সট্রুমেন্ট, পার্থিব গন্ধর্বরা তো রয়েছেনই আশপাশে।

আমরা বাসন্তী-রোদের উষ্ণ ওমের মায়া কাটিয়ে ঢুকে পড়ি পিলগ্রিমেজ জাদুঘরে। আপনি যখন নতুন কোনো জায়গায় যাবেন, নতুন কোনো ঘরে ঢুকবেন, লক্ষ্য করে দেখবেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই, কারো সঙ্গে কথা বলার আগেই, একটা অনুভূতি এসে আপনার দেহমনে ধাক্কা দেয়। সেই অনুভূতিটা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটোই হতে পারে। আমরা জুতো খুলে পিলগ্রিমেজ জাদুগৃহের চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই একটা ভীষণ ইতিবাচক অনুভূতি এসে আমাদের চাঙা এবং কৌতুহলী করে তুললো। এর অনেক কারণের একটি কারণ হয়ত এই যে, গৃহাভ্যন্তরের বাহুল্যহীন, রুচিসম্মত এবং অতি উঁচুমানের সাজসজ্জা, যেদিকে চোখ যায় সব কিছু ঝকঝকে পরিস্কার, পুরু কার্পেটে মোড়ানো মেঝে, অবাধ আলোপ্রবাহের প্রাচুর্য এবং দুজন শাড়ি পরা শ্বেতাঙ্গিনীর নমস্কারের আভাস দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো।

প্রতি বছর আগস্ট মাসে গুরুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এখানে নানান উৎসবের আয়োজন করা হয়। এবার একটি অডিও-ভিজুয়াল তথ্যচিত্র নির্মিত হবে এবং সেই তথ্যচিত্রের জন্য আমাকে এবং নাজমুন নেসা পিয়ারীকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হবে, রেকর্ডিংয়ের কাজটি এই ঘরেই হবে, জানালেন তথ্যচিত্র নির্মাতা দিমা নেফারতিতি। কারণ এখানে যে কেউ যখন-তখন ঢুকতে পারেন না, এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়, শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিরাই এখানে আসেন, তাই এই সুযোগটি নিতে চাইছেন নির্মাতা।

প্রথমতলার দেয়াল জুড়ে শ্রী চিন্ময়ের আঁকা অসংখ্য ছবি টানানো, কেন্দ্রের প্রধান রঞ্জনা ঘোষ প্রতিটি ছবি আমাদের ঘুরে ঘুরে দেখান এবং এগুলোর থিম ব্যাখ্যা করে বোঝান। শ্রী চিন্ময়ের আঁকা ছবি আমি আগেও দেখেছি এবং ছবি আঁকার সময় ধারণকৃত তার ভিডিও দেখেছি, তাতে আমার এই ধারণা স্পষ্ট হয়েছে তিনি ছবি আঁকার সময় মস্তিস্ককে দূরে সরিয়ে রেখেছেন, এঁকেছেন হৃদয় দিয়ে। ফলে এইসব ছবি তার হৃদয়ের প্রকৃত অনুভূতির প্রতিফলন, এখানে চিন্তা ও বুদ্ধির কোনো প্রতিফলন নেই। মানুষ বুদ্ধি দিয়ে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানায়, কিন্তু মানুষের হৃদয় কেবল সত্যটাই বলে। হৃদয় নিয়ে অবশ্য শ্রী চিন্ময়ের নিজস্ব ব্যাখ্যাটি দারুণ।

শ্রী চিন্ময়ের দর্শনে হৃদয় কোনো শারীরিক অঙ্গ নয়, এটি হচ্ছে আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং এর অবস্থান মানববক্ষের ঠিক মাঝখানে। এটি স্বর্গীয় প্রেমে পূর্ণ, তাই এখানেই মহান আত্মা বা পরমাত্মা অবস্থান করেন। মানুষের সকল সম্ভাবনা এখানেই লুকোনো থাকে। সকলে তার সন্ধান পায় না। ধ্যান সাধনার মধ্য দিয়ে একে আবিস্কার করতে হয়। তিনি বলেন, তুমি যখন ধ্যানে বসবে, মনে করবে তোমার হাত নেই, তোমার পা নেই, আছে শুধু একটি হৃদয় এবং আরো পরে ভাববে তোমার হৃদয়ও নেই, তুমি নিজেই একটি বিশাল হৃদয়। এরপর হৃদয়ের ভেতরে থাকা পবিত্র আত্মার অনুসন্ধান করবে। আত্মাই সকল শক্তি, প্রেম ও পূণ্যের উৎস।

অপ্রস্তুত অবস্থায়, তাও আবার ইংরেজিতে, গুরু চিন্ময়কে নিয়ে কিছু কথা ক্যামেরার সামনে বলতে হলো। পিয়ারী আপাও তাই করলেন। এরপর আমরা আড্ডায় বসলাম। কেউ একজন পিয়ারী আপাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি জার্মানীতে কখন গেলেন, কেন গেলেন? তিনি বলেন, হিসেব করিনি তো, অনেক দিন হবে, প্রায় ত্রিশ বছর, বলেই আমার চোখের দিকে তাকান, আমি হিসেব করার একটা তাগিদ অনুভব করি। আমি তো জানিই, শহীদ ভাই, মানে নাজমুন নেসা পিয়ারীর স্বামী কবি শহীদ কাদরী, ১৯৭৮ সালে জার্মানীতে যান, পিয়ারী আপা যান তার কিছুদিন আগে। তো বছর গুনে তা আজ দাঁড়িয়েছে ৪৪ বছরে। সংখ্যাটা শুনে পিয়ারী আপা নিজেই হাঁ হয়ে যান, এতো বছর!

কেন জার্মানীতে? এর ব্যাখ্যাটা তিনি খুব সুন্দর করে দেন। এই ব্যাখ্যার মধ্যে একটি ভালো তথ্য ছিল যা আমাদের সকলেরই জানা দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে ডয়েচে ভেলি তাদের বাংলা সার্ভিস চালু করে। এর আগে তো বাংলা কোনো স্বাধীন দেশের ভাষা ছিল না, ছিল ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের ভাষা। এবং পাকিস্তানের একটি অঙ্গরাজ্যের ভাষা। বাংলা ভাষায় বহু মানুষ কথা বলতো, বাংলা রেডিও শোনার অনেক শ্রোতা ছিল কিন্তু একটি ভাষা যদি কোনো স্বাধীন দেশের প্রধান ভাষা না হয় ডয়েচে ভেলির মতো প্রতিষ্ঠান তো সেই ভাষায় একটি পূর্ণাঙ্গ সার্ভিস চালু করতে পারে না।

তো আমি ছিলাম অন্য জগতের মানুষ। কলেজে পড়াতাম। ওরা বাংলা সার্ভিসে স্টাফ নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিল, আমি ইন্টারভিউ দিলাম, হয়ে গেল। আমিই ছিলাম ডয়েচে ভেলির বাংলা সার্ভিসের প্রথম ফিমেইল ভয়েজ গিভার।

তখন চা এলো, শাড়ি পরা দুজন নারী, যেন রম্ভা এবং উর্বশী, আমাদের টেবিলে দুধ চা এবং আদা চা পরিবেশন করেন, সঙ্গে আলুর চপ, ওটসের কুকি, সবুজ এবং কালো আঙুর। খেতে খেতে যখন গল্প জমে উঠেছে তখন মহাতপা দিদি বলেন, জহিরুল ভাই, আপনাকে নিচের ফটো গ্যালারিটা দেখাতে চাই।

নীল কার্পেটে মোড়ানো সিঁড়ি ভেঙে নামতে নামতে মনে হচ্ছিল, ইন্দ্রপুরীর গোলক থেকে মেঘ ভেঙে নামছিলাম মর্ত্যলোকে। ফটো গ্যালারির প্রাচুর্য এবং নান্দনিক উপস্থাপন আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, ক্রীড়াবিদ, সঙ্গীতজ্ঞ, অভিনয় শিল্পী, ধর্মীয় নেতা, সমাজসেবকের সঙ্গে গুরু শ্রী চিন্ময়ের দেখা-সাক্ষাৎ ও কর্মসূচীর অসংখ্য ছবি দিয়ে সাজানো দেয়ালের চতুর্দিক। এখানে ওখানে কিছু কারুকার্যময় আসন পাতা, কোনো অতিথি ক্লান্ত হয়ে গেলে কিছুক্ষণ বসে নিতেও পারবেন। যাদের সঙ্গে গুরুর ছবি এই গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে তাদের কারো কারো নাম মনে আছে, যেমন: সোভিয়েন ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ, মাদার তেরেজা, ভেটিকানের একাধিক পোপ, নেলসন ম্যান্ডেলা, জাতিসংঘের কয়েকজন মহাসচিব: উ থান্ট, হাভিয়ার পেরেজ ডি কুয়েলার, বুট্রোস বুট্রোস ঘালি, কফি আনান, বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা রিচার্ড গিয়ার, বিশ্বখ্যাত মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, টিমোরের প্রেসিডেন্ড, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের দুজন প্রধানমন্ত্রী, ওস্তাদ রবিশঙ্কর, প্রিন্সেস ডায়ানা, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট, আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বচরুদ্দিন ইউসুফ হাবিবীর ছবির কাছে এসে মহাতপা পালিত থমকে দাঁড়ান, যদিও প্রতিটি ছবির পেছনের ঘটনাই তিনি আমাকে বলেছেন কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাবিবীর ঘটনাটি আমাকে খুব নাড়া দেয়। তিনিও অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের মতো শ্রী চিন্ময়ের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন। তখন টিমোর লেসতে ইন্দোনেশিয়ার দখল থেকে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে। একদিন এই প্রসঙ্গে গুরু চিন্ময় প্রেসিডেন্ট হাবিবীকে বলেন, আপনার নিশ্চয়ই সেই ঘটনাটি মনে আছে, যখন আপনি কিশোর ছিলেন, একদিন এক ভয়ঙ্কর বিপদে পড়েন এবং তখন প্রতীজ্ঞা করেন, আল্লাহ যদি এই বিপদ থেকে আপনাকে উদ্ধার করেন তাহলে সমস্ত জীবন আপনি আপনার দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন? প্রেসিডেন্ট বলেন, অবশ্যই মনে আছে, এবং আমি তাই করছি, আমৃত্যু তাই করে যাব। তখনই শ্রী চিন্ময় আসল কথাটি বলেন, দেশপ্রেম মানুষের হৃদয়ের খুব গভীরে প্রোথিত থাকে। টিমোরের মানুষেরাও সেই দেশপ্রেমের তাগিদেই স্বাধীন মাতৃভূমির জন্য লড়াই করছে।

এর কিছুদিন পরেই ইন্দোনেশিয়া সিদ্ধান্ত নেয় টিমোর ছেড়ে দেবার।

এই ঘটনা জানেন টিমোরের লোকেরাও। আমৃত্যু গুরু চিন্ময়কে টিমোরের প্রেসিডেন্ট এবং জনগণ ভালোবেসেছেন, সেই ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে টিমোরের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে তারা গুরু শ্রী চিন্ময়ের ভাস্কর্য স্থাপন করেন।

সব আনন্দযজ্ঞই এক সময় শেষ হয়। আমাদের এই তীর্থদর্শনকালও ফুরিয়ে আসে। পড়ন্ত বিকেলে, বসন্তের নাতিশীতোষ্ণ হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে, আমরা বেরিয়ে আসি মর্ত্যের ইন্দ্রলোক শ্রী চিন্ময় সেন্টার থেকে।

শ্রী চিন্ময় এক মহাসমুদ্র, মণি-মানিক্যের খোঁজে সেই সমুদ্রে আমাকে যে আরো বহুবার ডুব দিতে হবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৯-৩০ এপ্রিল ২০২৪

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক