
শাহেদ কায়েস
সরোজ মোস্তফার গদ্য ‘জগতের অনুভব ও নির্ভীক মনলিপি’
প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০২৫
কবি শাহেদ কায়েসের কবিতার সাথে সকালটা শুরু হলো। কবিতার মায়ালোকে বিচরণ মানে কবির কল্পনার সাথি হওয়া। কবিতার বিচিত্র শব্দ ও রহস্যের জগতে প্রবেশ করে একজন কবিকে কি আবিষ্কার করা যায়? কবিতাই যেখানে শক্তি ও সত্তা সেখানে কবিকে কি আবিষ্কার করার দরকার আছে? হয়তো দরকার নেই। কিন্তু আমি মনে করি, কবিতার সাথে বিচরণ মানে কবির সাথে বিচরণ।
শাহেদ কায়েসকে আমার আশ্চর্য মায়াপূর্ণ মানুষ মনে হয়। সহজ পথের এক দরদি মানবযাত্রী হয়ে লিখছেন জগতের অনুভব ও নির্ভীক মনলিপি। প্রতিদিনের জারিত অভিজ্ঞতা থেকেই উৎসাহিত হয় তার কবিতা। তিনি সত্যের মতো প্রাকৃত। প্রচলিত অসংগতির বিরুদ্ধে তিনি ঘুরে দাঁড়ান, শিরদাঁড়া সোজা করে একাগ্র থাকেন। যা বলার তিনি বলবেনই।
তার কবিতা তার কণ্ঠস্বরের মতোই উচ্চকিত। জীবনকে বাজি রেখে তিনি আলোর প্রবাহে নামেন। অনন্ত সহজতার দিকে হাঁটলেও তিনি নির্ভীক, আপসহীন। সময়ের বার্তাবহ পাখির মতোন তিনি এক উজ্জ্বল শাহেদ কায়েস। এই শিক্ষাও তিনি পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পিতার কাছ থেকে। শোষকের আক্রোশ-আস্তানা তিনি উন্মোচিত করেন। বৈষম্য ও অসংগতিতে ঠাসা সমাজকে বদলে দেয় তার কাজ।
আমাদের যা-কিছু ঐতিহ্য, যা-কিছু গৌরবের উত্তরাধিকার— সবকিছুকে রক্ষার জন্য তিনি সচেষ্টা থাকেন। তার জীবনটা মূলত পরার্থপরতায় সংযুক্ত। একা মানুষ হয়েও তিনি বাংলার সামষ্টিক সমাজকেই আঁকড়ে ধরেন। তার চোখ হচ্ছে সামষ্টিকতার চোখ, সংগীত ও সহজতার চোখ।
সময় ও সমাজের বিপর্যয় তিনি নিষ্পৃহ নন। একাগ্র, উদ্যমী, প্রতিবাদী ও সক্রিয়। চরাঞ্চলে কিংবা পাহাড়ের বঞ্চিত শিশুদের জন্য তিনি স্কুল করেন। মেঘনার পাড়ে তৈরি করেন মায়াদ্বীপ। নিত্য-নৈমিত্তিক আচার ও আচরণে গা-ভাসিয়ে চলা তার স্বভাব নয়। সবাইকে নিয়ে স্নিগ্ধ শরতের মতো সহজ থাকতে চান তিনি।
কবির পৈতৃক নিবাস, সোনারগাঁয়ের ললাটি গ্রামে। ঘুরে বেড়ানো, মানুষকে দেখা এবং মানুষের পাশে চলমান প্রকৃতিকে বোঝা তার কাজ। পড়াশোনা কম্পিউটার বিজ্ঞানে, দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই। এরপর `হিউম্যান রাইটস` বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজুতে। নব্বই দশকের শুরুতেই কবিতায় হাতেখড়ি। মুক্তচিন্তার মননে তিনি মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করেন। সংস্কৃতিকর্মী হয়ে ফ্রি-ল্যান্স গবেষণা করেন।
বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা, চূড়ায় হারানো কণ্ঠ, মায়াদ্বীপ, কৃষক ও কবির সেমিনার , সহজিয়া প্রেমের কবিতা, নৈরাজ্যবাদী হাওয়া— এইসব কাব্যগ্রন্থের মধ্যেই আছে তার দ্বিধাহীন লড়াকু ব্যক্তিত্ব।
লেখক: কবি ও শিক্ষক