নাঈমা পারভীনের ব্যাংকার থেকে ফটোগ্রাফার হওয়ার গল্প

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : মার্চ ২০, ২০২৪

আধুনিক জীবনের একেবারে কেন্দ্রে কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম ফটোগ্রাফি। প্রতিদিনের কাজকর্মকে সংবাদ, স্মৃতি বা ডিজিটাল কনটেন্ট– যে রূপেই হোক না কেন, ধরে রাখতে ফটোগ্রাফির ভূমিকা অনেক। তবে এই পেশায় জেন্ডার গ্যাপটা বেশ চোখের পড়ার মতো।

তবে মানুষ চেষ্টা করলে কী না পারে! চেষ্টাটা আসতে হয় মনের গহিন থেকে। শেখার যেমন কোনো বয়স নেই, তেমনই শখেরও কোনো জেন্ডার নেই।

আজ এক নারীর গল্প শোনাব, যিনি একজন সাধারণ কর্মজীবী নারী থেকে শৌখিন আলোকচিত্রী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। ক্যামেরা হাতে নিয়েছেন ৪৬ বছর বয়সে। এরই মধ্যে পেয়েছেন বেশ কিছু পুরস্কার ও স্বীকৃতি।

নাঈমা পারভীন। জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা—সবই খুলনায়। স্বামীর চাকরির সুবাধে এখন বসবাস করেন চট্টগ্রাম শহরে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতেই জানান ব্যাংকার থেকে কীভাবে হয়ে উঠেছেন একজন ফটোগ্রাফার।

তিনি জানান, ছবি তোলা শুরু করেন অনেকটা শখের বশেই। পরে এই শখ পরিণত হলো মনছবিতে। আর মনছবির বাস্তবতায় আজকের এই অবস্থান।

নাঈমা বলেন, পথে চলতে ফিরতে চোখে পড়ে এলোমেলো অনেক দৃশ্য। যা ফ্রেমবন্দি করার পর আবিষ্কার করেছি কখনো নিসর্গ সৌন্দর্যরূপে, কখনো বঞ্চনার প্রতীক হিসেবে। অবাক হয়েছি বার বার যে পৃথিবীময় কত অজানা অচেনা রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের চারপাশে। আর সেটাকে যখন ছবিরূপে প্রকাশ করেছি, দেখেছি সেই ছবি যেন কথা বলছে আমাদের অস্তিত্বের সাথে। অনেক কথা লিখে বা বলেও যা বোঝানো যায় না একটি বিমূর্ত দৃশ্য যেন তাই বলতে চাইছে। আর যেদিন এই ছবির ভাষার শক্তিকে অনুভব করতে পেরেছি সেদিন থেকেই এরসাথে একাত্ম হতে চেষ্টা করছি আরো গভীরভাবে।

প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল হঠাৎ করেই এই পেশায় এসে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন? ফটোগ্রাফিতো একটি সৃজনশীল বিষয়?

উত্তরে নাঈমা বলেন, "ফটোগ্রাফি করার জন্য দরকার একটি মনের, যে মন বনে-বাদাড়ে গাছপালার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, ছোট নৌকার গলুইয়ে বসে পাড়ি দেয় ঢেউয়ের নদী, কিংবা মানুষের সুখ-দুঃখ যার মনে বিশেষ অনুভূতির সৃষ্টি করে, সে-ই পারে সারা দিন ‘ইট ভেঙে’ সন্ধ্যায় আবার মনের খাবার খেতে, ঘরের বাইরে যেতে। এ রকমই একটি মন ছিল বলেই নাঈমা পেরেছেন। কাজটি আসলেই সৃজনশীল।"

প্রতিবেদকের কথার ফাকে নাঈমা পারভীন সামাজিক কিছু বাধা ও সিমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা এখনো ততটা নিরাপদ নয়। অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির অবিজ্ঞতাও জানান তিনি। এখন একা ক্যামেরা হাতে ভয় পান। তাই অনেক সময় নিজ বারান্দায় কিংবা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ফটোগ্রাফির কাজ করেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া শুরুর দিকে সামাজিক অনেক বাধা আসে তার এই কাজ করতে গিয়ে। তুমি নারী হয়ে কেন এসব করো? কী দরকার এই বয়সে ঢইঢই করে ঘুরে বেড়ানো?’ এমন অনেক মন্তব্য শুনতে হয় তাকে। কিন্তু চারদিক থেকে আসা এসব বাধার তির ঠেকিয়ে দিয়েছেন দুর্নিবার ইচ্ছার ঢাল দিয়ে।

৬৪ বছর বয়সি নাঈমা পারভীন এখন বেশির ভাগ সময়ই কাটান ফটোগ্রাফি আর মানব কল্যাণে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সঙ্গে।

এক যুগের কাছাকাছি সময় ফটোগ্রাফি করছেন তিনি। এর মধ্যে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন দ্য রিডার্স ডাইজেস্ট এশিয়ার ‘আনসিন এশিয়া’ বিভাগে তাঁর ছবি বেরিয়েছে ২০১১ সালের নভেম্বরে। পরের বছর ‘ইমাহ ম্যাগাজিন এক্সিবিশন’-এ ছিল তাঁর ছবি। ২০১৩ সালে ৭৪তম ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফিক স্যালন অব জাপান (আশাহি শিমবুন) প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছেন। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে দুটি স্বীকৃতিসহ দেশে-বিদেশে অন্তত আরও চারটি পুরস্কার পেয়েছেন নাঈমা।

নারীদের নিয়ে একটা ফটোগ্রাফি সোসাইটি করতে চান নাঈমা। শুরু করেও সংগঠনটি এগিয়ে নিতে পারছেন না।

সব সময় স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী নাঈমা। তাঁর ভাষায়, ‘ক্যামেরার সিসিডির মতো মনের সিসিডিটাও পরিষ্কার থাকা দরকার। তাহলে সেখানে ভালো ছবি উঠবে।’