
ডাক্তার এজাজুল ইসলাম
স্বাধীন খসরুর গদ্য ‘গরিবের ডাক্তার এজাজুল ইসলাম’
প্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০২৫
বাংলাদেশে ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানে নগদে ৫০০ টাকা। তা মোটামোটি অনেক দিন থেকে চলছে। ক্ষেত্র বিশেষে, বিশেষ ডাক্তার ১০০০ টাকা বা তার ওপরেও নিয়ে থাকেন। আমার জানামতে ডা. এজাজুল ইসলামই একমাত্র ডাক্তার আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের কথা ভেবে তিনি ঘোষণা দেন আজীবন ৩০০ টাকা করে রোগীদের কাছ থেকে ফি নেবেন। এতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মনোবৃত্তির ডাক্তার যারা আছেন, তারা ক্ষিপ্ত হয়েছেন। বলতে শুরু করেছেন, তারা অসম্মানিত বোধ করছেন, আর্থিকভাবে তারা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। এমনকি ডাক্তার এজাজের এ ঘোষণায় তারা সামাজিকভাবে প্রতিনিয়ত হেয় হচ্ছেন।
ভেবে দেখুন, ডাক্তারি পেশা মহান পেশা, মানব সেবার পেশা। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ সৈনিকদের ও সেবা দিতে হয় একজন ডাক্তারকে। ডাক্তারি পেশা মূলত টাকা কামানোর পেশা কিন্তু নয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সামান্য কিছু হলেই অসহায়ের মতো ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়, আর ভাতের মতো ওষুধ সেবন করে। পৃথিবীর উন্নত দেশের মানুষজন এমন করে না বা এভাবে ওষুধ সেবন করে না। আর অন্যদিকে চাইলেও ডাক্তার ওষুধ দিতে চায় না। ওষুধ কম সেবনের জন্য উৎসাহিত করে। বিশেষ করে জীবাণুরোধকের (অ্যান্টিবায়োটিক) ক্ষেত্রে।
আর আমাদের দেশে অনেক সময় রোগীই বলে দেয় আমাকে ঐটা দেন, এইটা দেন। অমুক ঐটা খাওয়াতে তার রোগ সেরেছে। তখন অসৎ ডাক্তারেরা সুযোগটি ভালো করেই কাজে লাগান। এর পেছনে গোপন আরেকটা কারণ আছে, এই অসৎ ডাক্তারেরা বিভিন্ন নামি-বেনামি ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে বড় অংকের অগ্রিম টাকা খাওয়া ডাক্তার। আমি কিন্তু সব ডাক্তারদের কথা বলছি না, শুধুমাত্র অসৎ ডাক্তারদের কথা বলছি।
ডাক্তার এজাজুল ইসলাম এ ঘোষণা দেয়ার পর তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। তা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই দেশের মানুষজন তাকে গরিবের ডাক্তার হিসেবে চেনে এবং এ উপাধিতে মোটামুটি তাকে ভূষিত করা হয়েছে। চেম্বারে রোগীর সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। গাজীপুর চৌরাস্তায় তার চেম্বার, রোগী আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, মানে দূর-দূরান্ত থেকে।
ফেব্রুয়ারিতে আমি দেশে গিয়েছিলাম নুহাশ হুমায়ুনের পরিচালনায় বিকাশের বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে। এ বিজ্ঞাপন আমাদের তিনজনকে নিয়ে। ফারুক আহমেদ, এজাজুল ইসলাম ও আমি। এজাজ ভাইয়ের মহানুভবতার কথা ভেবে নিতান্তই আবেগ থেকে আমি একটা প্রস্তাব রাখি উনার কাছে। অনুরোধ করে বললাম যদি প্রস্তাব রাখতে রাজি হোন, আর আমাকে সুযোগ দেন তাহলে বলবো। সানন্দে বললেন, বলুন।
প্রস্তাবটি হলো, প্রতি শুক্রবার একজন অসহায় ও নিঃস্ব রোগীকে তিনি সেবা দেবেন। আর এই রোগীর ফি দেব আমি। আর এ-ও বললাম, রোগী যেন প্রথমে জানতে না পারে। এটা হবে তার জন্য একটা চমক।
প্রতি শুক্রবার একজন রোগী মানে মাসে চারজন। টাকা হিসেব করে বললাম আমি আপনাকে এখন তিন মাসের জন্য অগ্রিম দিয়ে রাখতে চাই। বললেন, ঠিক আছে দেবেন। শুটিং শেষ হোক। আমাদের শুটিং ছিল পাঁচদিন আর ফটো শুট ছিল একদিন।
যথারীতি কথামতো শুটিং শেষে আমি তিনমাসের টাকা দিতে চাইলাম। তিনি টাকা নিতে রাজি হলেন না। আমি মোটামুটি ধরে নিলাম তিনি আমার প্রস্তাবে হয়তো রাজি নন, হয়তো মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন।
মৃদু হেসে বললেন, স্বাধীন ভাই আপনি আপনার মায়ের কথা বলেছেন। যখনই এ কথাটি শুনেছি, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আপনার মায়ের জন্য আমি একাজটা করবো। আরও বললেন, আপনার মায়ের সাথে আমার মাকেও যুক্ত করে নিলাম। আগামী শুক্রবার থেকে শুরু করবো। চেম্বারের আমার কর্মচারীদের বলে দিচ্ছি।
গরিবের ডাক্তার ভালো থাকুন। আমাদের দেশে আরও অনেক অনেক গররিবের ডাক্তার জন্ম নিক, অসহায় ও নিঃস্ব মানুষের সেবা দিক।
লেখক: অভিনেতা