রাহমান চৌধুরীর গদ্য ‘শিক্ষক ও শিক্ষার মান’
প্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০২৪
শিক্ষককে বাদ দিয়ে শিক্ষাদান সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রকৃত শিক্ষকের সন্ধান না করে শিক্ষার উন্নয়নে একটার পর একটা জটিল আইন বানিয়ে শিক্ষাকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে তার শুরু। এখনও সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে।
শিক্ষার উন্নয়নে তিনশো বছর ধরে আইন বানাতে বানাতে শিক্ষার নামে আইনের কতগুলো বস্তা তৈরি হয়েছে। যা তিনশো বছরে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি এবং কখনো সমস্যার সমাধন করতে পারবে না। সর্বাগ্রে শিক্ষক হবার পথ খোলা রাখুন।
মুখস্থ করবার রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি দূর করুন। তাদের মনে শেখার ও জানার আগ্রহ তৈরি করুন। বাৎসরিক পরীক্ষার চেয়ে শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষার্থীর মেধা ও আগ্রহ জানার ব্যবস্থা নিন। মূল পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ভিতর দিয়ে শ্রেণিকক্ষে বা বিভিন্নভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষায় বইয়ের বোঝা কমিয়ে দিন। পাঠশালায় কেবল মাত্র মাতৃভাষায় লিখতে পড়তে ও সহজ অঙ্ক করতে শেখান এবং প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন শিশুকে। সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বা উচ্চশিক্ষা মানে কত ক্রেডিট যোগ হলো সেটা নয়, সেটা একটা হাস্যকর পদ্ধতি।
শিক্ষার্থীর জানার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ানো, সব কিছু সস্পর্কে প্রশ্ন করতে শেখানো, প্রচলিত মনোভাবকে ব্যাখ্যা ছাড়া গ্রহণ না করার শিক্ষাদান, জগতের নানা ঘটনাকে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে শেখানো; উচ্চশিক্ষা জগতে সেই শিক্ষক কোথায় আমাদের? উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুবিধাবাদী, চাটুকার, পদলেহনকারীরা শিক্ষক হবার যোগ্যতা রাখে না।
মাথা উঁচু করে যিনি দাঁড়াতে জানেন, সত্য উচ্চারণে ভয় পান না, শাসকদের চোখ রাঙানিকে যিনি পরোয়া করেন না, তিনিই হতে পারেন প্রকৃত শিক্ষক। যদি তিনি জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী হন এবং অন্যদের তাতে সম্পৃক্ত করতে চান।
কিছু আমলা দিয়ে কতগুলো আইন বানিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন যারা চান, তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করেন। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এরাই ধ্বংস করেছেন। এদের সকলকে শিক্ষার জগৎ থেকে দূর করা হোক। বড় বড় সনদধারী মূর্খ দিয়ে জ্ঞানের জগৎকে আলোকিত করা যায় না। তারা করণিক হতে পারে বড় জোর।
শিক্ষক হবেন শাণিত মানুষরা। যাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষাই জ্ঞান অর্জন, জগৎকে জানা, বিশ্বের সকল কিছুর সঙ্গে পরিচিত হওয়া। সেই শিক্ষকরাই কেবলমাত্র শিক্ষার মান বাড়াতে পারবেন যদি তারা পুরানো ও ক্ষয়িষ্ণু সমাজব্যবস্থাকে পাল্টাতে ভয় না পান।
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ