বইমেলায় তরুণদের পছন্দের শীর্ষে উপন্যাস

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪

বছর ঘুরে এসেছে প্রাণের বইমেলা। এমন কোনো বইপ্রেমী নেই যিনি কি না এই মেলার অপেক্ষায় ছিলেন না। প্রতিদিন খুদে পাঠক থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। দিন যত যাচ্ছে পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীর ভিড় ততই বেড়েই চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পা ফেলারও জায়গা পাওয়া যায় না।

মেলার বিশেষ আয়োজন শিশুপ্রহরে কচিকাঁচাদের ভিড় চোখে পড়ার মত থাকলেও অন্যদিন এর সংখ্যা অনেক কম থাকে। তবে এবারের মেলায় তরুণ পাঠকদের সমাগম ঘটছে বেশি। ফলে বই কেনার শীর্ষেও রয়েছেন তরুণরাই। তাদের পছন্দের তালিকায় উপন্যাসই জায়গা পাচ্ছে বেশি।

স্টল মালিক ও প্রকাশকরা জানান, এবারের মেলায় তরুণরাই বেশি বই কিনছেন। তারা সাহিত্য সচেতন। উপন্যাসের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে গল্প, কবিতা এবং গবেষণার বইও তরুণদের পছন্দের তালিকায় থাকছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই, কমিক্স, থ্রিলারও বাদ পড়ে তালিকা থেকে।

পাঞ্জেরি প্রকাশনীতে দায়িত্বরত সৃজন জানান, তরুণরা প্রায় সব ধরনের বই কিনছেন। তবে বরাবরের মত তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস। এর মধ্যে কিঙ্কর আহসানের ইনসান এবং সেলিনা হোসেনের উপন্যাস বিক্রি বেশি চলছে। এছাড়া স্বকৃত নোমানের উজানবাঁশি তরুণরা বেশ পছন্দ করছেন।

জ্ঞানকোষ প্রকাশনীর রেজওয়ান সরকার জানান, বরাবরের মতো হুমায়ন আহমেদ লিখা উপন্যাসের বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খায়রুজ্জামান খান সানির ‘কী চাও স্মৃতির মরণ’, তানভীর কবির সৈকতের ‘মায়ামৃগের ভুল-বেভুল’ বইও বেশি বিক্রির তালিকায় রয়েছে।

অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে জানা যায়, মোশতাক আহমেদের ‘হারানো জোছনার সুর’, ‘রুপার সিন্দুকের’ পাশাপাশি খান মুহাম্মদ রুমেলের ‘আমাদের চোখে মাকড়শা জাল বোনে’, ‘চোখের পল্লবে ঘুম নামে’ বই বেশি চলছে।

কথাপ্রকাশে হরিশংকর জলদাসের সীতা বইটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ’র বইটি কিনছেন তরুণরা।

এবারের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে পাটের চটের ওপরে মাত্র ৩২টি বইয়ের পসরা সাজিয়ে স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ বইমেলার যাত্রা শুরু করে। সে সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরেই মূলত বইমেলার যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি বিশেষ ছাড়ে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি একাডেমির প্রাঙ্গণে বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বই বিক্রি শুরু করে।

১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের বই প্রদর্শনী ও ম্যুরাল প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কেবল প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে জায়গা বরাদ্দ দিত। আয়োজক হিসেবে তাদের অফিসিয়াল কোনো পরিচিতি ছিল না। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি সরাসরি মেলায় সম্পৃক্ত হয়। ১৯৭৯ সালে একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। সেই থেকে শুরু করে আজ অবধি বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার।

শুরুতে বইমেলা হতো ২১ দিন ধরে। ১৯৮১ সালে এটি কমিয়ে ১৪ দিনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও প্রকাশক ও পাঠকদের দাবির মুখে তা আবার ২১ দিনে ফিরিয়ে আনা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সাল থেকে পুরো মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এ মেলা।