‘বড়দের গল্প নিষ্ঠুর হয়, তবু তিনি বললেন’

শফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০

আহমাদ মোস্তফা কামাল আমার প্রিয় লেখকদের একজন। তিনি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অতীব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। এবং তা শব্দের খেলায় থরে থরে সাজিয়ে সুখপাঠ্য হিসেবে হাজির করেন পাঠকের সামনে। পাঠক পড়েন আর গল্পের ভেতরে হারান। তার ‘বড়োদের গল্প যেমন হয়‘ তেমনি একটি বই, যেখানে দশটি গল্প স্থান পেয়েছে।

প্রথম গল্পটির নাম ‘বড়োদের গল্প যেমন হয়‘ যে নামে বইটির নামও হয়েছে। এ গল্পটি পড়ে আমি কিছুক্ষণ থম ধরে বসেছিলাম। একটি গল্প বলার ছলে তিনি পুরো বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। তিনি পুরো বর্তমানকে চিত্রায়িত করেছেন সাবলীল বর্ণনায়। চোখের সামনে সব সত্য ভেসে ওঠলো। যে কথা সাধারণত বলি না বা বলতে দেয়া হয় না, সে কথাই তিনি গল্প বলার ছলে অবলীলায় বলে গেলেন। বড়দের গল্প রূঢ় হয়, নিষ্ঠুর হয়, কঠোর বাস্তব হয়। তবু তিনি বললেন। এমন করে বললেন যে, না শুনে না মেনে উপায় ছিল না।

এরপরে এ বইয়ের আরও তিনটি গল্প আমার ভালো লেগেছে। অকূলপাথার, বিদায়বেলার গান, ও আক্রোশ। গল্পের শুরু ও শেষ খুব পরিকল্পনা করে সাজানো, গল্পের ভেতরে পাঠককে ঢুকাতে যে উপকরণ ও কারিশমা লাগে তা ছিল। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপাদান ও অনুষঙ্গগুলো কিংবা সমকালে ঘটা ঘটনাগুলো অতি চমতকারভাবে তুলে এনেছেন চরিত্রের বর্ণনায়। পাঠক হিসেবে আমি গল্প পড়ছিলাম গল্পে হারিয়েছিলাম আবার যেন আমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম, বা আমার চারপাশকে দেখছিলাম, কিংবা দেশ ও সমাজ নিয়ে আমি যা ভাবি তাই যেন তিনি তুলে ধরেছেন গল্পের ছলে সুনিপুণ শব্দের খেলায়। খুব ডিটেইল লিখেছেন আবার কোথায় থামতে হবে তার সীমানা টেনে রেখেছেন যেন পাঠক হারিয়ে না যায়।

বাকি আরও কয়েকটি গল্প আমার ভালো লেগেছে। তবে দু’একটি গল্প আমাকে তেমন টানেনি। মনে হয়েছে, লেখকের নিজের যে মান সে মানের মতো হয়নি। এটা আমার অনুভূতি, অন্যদের হয়তো প্রতিটি গল্পই ভালো লাগবে। একজনের ভালো না লাগা দিয়ে লেখকের কিছু যায় আসে না।

এরকম বই বারবার পড়তে চাই। বই পড়ে মজা লাগে, আবার কিছু দর্শন কিছু ভাবনার রেশ রেখে যায় মনে। কিছু পটভূমি ও গল্পের বাঁক মাথায় খুলি নাড়িয়ে দিয়ে যায়। তা না-হলে বইয়ের আর কাজ কী?

এ লেখকের ‘ঘরভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য‘ পড়ে তার লেখার প্রেমে পড়েছিলাম। এরপর যখন যেখানে যা পেয়েছি পড়েছি অনলাইনে। এবার বইমেলা থেকে এ বইটি পড়েও আমার ভালো লাগলো। আপনিও কিনতে পারেন। প্রকাশনা সংস্থা নাগরী থেকে প্রকাশিত বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২০। দাম ২৫০। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরীর ২২৫-২২৬ নম্বর স্টলে।